লোহাগাড়ার বিভিন্ন সড়কে যত্রতত্র দেয়া হয়েছে অপরিকল্পিত গতিরোধক। এতে যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা আর দুর্ঘটনা ঝুঁকি বাড়ছে। সাধারণত সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে গতিরোধক দেয়া হয়। কিন্তু কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গতিরোধক তৈরি করায় যাতায়াতকারী যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, যত্রতত্র গতিরোধক স্থাপন করায় উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে। গতিরোধকের আগে–পরে নেই কোনো সতর্কীকরণ চিহ্ন। কিছু কিছু গতিরোধক এতো উঁচু যার কারণে গাড়ি চালানোর সময় জোরে ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে চালক ও যাত্রীদের মাঝে প্রায় সময় বাক–বিতন্ডা সৃষ্টি হয়। অপরিকল্পিত গতিরোধক নির্মাণের ফলে সাইকেল, ভ্যান, মোটরসাইকেল ও সিএনজি টেক্সি চালকরা প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট–বড় দুর্ঘটনা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর দরবেশহাট ডিসি সড়কের গৌড়স্থান নতুন বাজার এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণাধীন গতিরোধকে ব্যাটারি চালিত রিকশা উল্টো গিয়ে মো. জাকারিয়া আলম (৩২) নামে এক চালকের মৃত্যু হয়। এছাড়া একই সড়কের টেন্ডলের মসজিদ এলাকায় গতিরোধকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি চাপায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার দরবেশহাট ডিসি সড়ক, চৌধুরী সড়ক, শাহপীর সড়ক, আলুরঘাট রোড, স্কুল রোড, ইসহাক মিয়া সড়ক, বড়হাতিয়া বায়তুশ শরফ সড়কসহ প্রতিটি সড়কে যত্রতত্র ও অপ্রয়োজনীয় গতিরোধক স্থাপন করায় পথচারীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। নির্ধারিত মান অনুসরণ না করে অতিরিক্ত উঁচু বা অসম গতিরোধেক তৈরি করা হয়েছে। যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়েছে। কোনো গতিরোধকে স্পষ্টভাবে রং ও চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা হয়নি। দরবেশহাট ডিসি সড়কের লোহাগাড়া সীমানায় ছোট–বড় প্রায় ২০টি গতিরোধক রয়েছে। কোনো কোনো স্থানে একসাথে ২টি করে গতিরোধক বসানো হয়েছে। অনুমতি ছাড়া গতিরোধক স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
মোটরসাইকেল চালক আবদুল লতিফ জানান, সড়কে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গতিরোধক বসানোর কারণে মোটরসাইকেল চালাতে দুর্ভোগে পড়তে হয়। কিছু গতিরোধক এতো উঁচু, যার কারণে গাড়ি পার করতে গতিরোধকের সাথে ধাক্কা লেগে গাড়ির যন্ত্রাংশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। এছাড়া গতিরোধকের আগে–পরে নেই কোন সতর্কীকরণ চিহ্ন। যার ফলে গতিরোধক পার হতে গিয়ে দূর্ঘটনায় পতিত হচ্ছেন চালকরা।
সিএনজি টেক্সি চালক হেফাজতুর রহমান জানান, সড়কের প্রায় গতিরোধকে সতর্কীকরণ চিহ্ন নেই। যার ফলে কিছু কিছু গতিরোধক চলন্ত অবস্থায় বুঝা যায় না। এতে গাড়িতে যাত্রী থাকলে গাতিরোধক পার হওয়ার সময় ঝাঁকি লাগে। ফলে যাত্রী নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া শাখার সাবেক সভাপতি মোজাহিদ হোসাইন সাগর জানান, সড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের ইচ্ছে মতো অপরিকল্পিত গতিরোধক বসিয়েছেন। যা খুবই দুঃখজনক। জীবন বাঁচাতে গতিরোধক তৈরি করা হয়। কিন্তু এই গতিরোধকই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতিরোধকে সতর্কীকরণ চিহ্ন না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে যাত্রীরা।
লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ইফরাদ বিন মুনির জানান, সড়ক অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গতিরোধক বসানোর কোনো নিয়ম নেই। তবে স্থানীয়রা প্রভাব কাটিয়ে স্ব উদ্যোগে সড়কে গতিরোধক নির্মাণ করেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে অনেক সময় বাকবিতন্ডাও হয়ে থাকে। সড়ক থেকে অপরিকল্পিত গতিরোধক অপসারণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলাম জানান, সড়কের যত্রতত্র স্থান থেকে অপরিকল্পিত গতিরোধক সরিয়ে ফেলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।