মহিমান্বিত মাহে রমজানের দ্বিতীয় পর্ব মাগফিরাত তথা ক্ষমার দশক আজ শেষ হচ্ছে। এই ক্ষমার দশকে আমরা সিয়াম সাধনা ও নানা ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে গুনাহের বোঝা হালকা করতে পেরেছি কি না সেই চুলচেরা বিশ্লেষণ ও আত্মজিজ্ঞাসা আজ আমাদের করতে হবে। রোজার মাস আসে মহান রব আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমা ও অনুগ্রহের বার্তা নিয়ে। তাই আমাদেরকে অবিরত ক্ষমা ও প্রার্থনা করে যেতে হবে আল্লাহর কাছে। নানা পাপ ও গুনাহ থেকে নিষ্কৃতি পেতে রোজাই মোক্ষম সুযোগ। কিছু মানুষ স্বভাবতই অপরাধমুখী। কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় ও অভিশপ্ত শয়তানের প্ররোচণায় মানুষ নানা অপরাধে জড়ায়। তবে রোজার মাসে এই অপরাধ প্রবণতা খুবই হ্রাস পায়। অপরাধ ও পাপমুক্ত জীবন গঠনে রোজা নিরন্তর প্রেরণা ও উদ্দীপনা জোগায়। রোজাদার কেবলমাত্র আল্লাহর ভয়ে নানা গুনাহ ও পাপের কাজ থেকে সরে এসে তাকওয়াভিত্তিক জীবন গঠনে এগিয়ে আসে এই রোজার মাসে। আল্লাহ তাকে দেখছেন, তার ভালো–মন্দ আমলনামা কিরামান কাতিবিন ফেরেশতাদ্বয় (দুই কাঁধে থাকা) অবিরত লিপিবদ্ধ করছেন– এই চেতনা অন্তরে ও উপলব্ধিতে থাকলে রোজাদার কখনো পাপাচারে লিপ্ত হতে পারে না। সিয়াম সাধনা ও নামাজ মানুষের জন্য এক কঠিন প্রশিক্ষণ। একজন নামাজি কখনো অশ্লীল কাজে জড়াতে পারে না। কোরআন মজিদের সুরা আনকাবুতের ৪৫ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘ইন্নাস সালাতা তানহা আনিল ফাহশায়ে ওয়াল মুনকার’ অর্থাৎ ‘সালাত বা নামাজ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ সকল অপরাধই ঘৃণ্য ও পরিত্যাজ্য। সালাত ও রোজা মুমিন মুসলমানকে সকল ধরনের ঘৃণিত কাজ থেকে দূরে রাখার শিক্ষা দেয়।
একজন প্রকৃত রোজাদার এবং নামাজি লোক কখনো অপরাধমূলক কাজে জড়াতে পারে না। তার মাঝে আল্লাহভীতি ও তাকওয়ার চেতনা বিদ্যমান থাকে। মন্দ কাজের জন্য পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে এবং কৃতকর্মের জন্য শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে এটা জানা থাকে বলেই রোজাদার সমস্ত অপকর্ম ও অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকে। এটা হচ্ছে আত্ম অনুশাসন। যা প্রত্যেকের মাঝে থাকা উচিত। কেবল প্রচলিত কঠোর আইনের প্রয়োগ ঘটিয়ে মানুষকে অপরাধকর্ম থেকে বিরত রাখা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার বিবেক বিবেচনার জাগরণ। মানুষের মাঝে নৈতিক চেতনা জাগাতে না পারলে কখনো দেশ ও সমাজ থেকে অপরাধ প্রবণতা তাড়ানো সম্ভব নয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন দরকার, তেমনি আল্লাহভীতি ও তাকওয়ার গুণও রপ্ত করা প্রয়োজন। তবেই দেশ ও সমাজ থেকে শান্তি ও স্বস্তি হরণকারী সমস্ত অপরাধ প্রবণতা নির্মূল হবে।