অপমান সইতে না পেরে বিষপানে কৃষকের আত্মহত্যা

শালিসে ইউপি সদস্যের লাথি-থাপ্পড়

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১৫ জুলাই, ২০২৪ at ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় বিচার চলাকালে উপস্থিত লোকজনের সামনে ইউপি সদস্যের লাথি ও থাপ্পড়ের অপমান সইতে না পেরে এক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার নাম কামাল উদ্দিন (৪০)। গত শনিবার রাতে সাতকানিয়া উপজেলার পুরানগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ বলেন, আমি তাকে লাথিথাপ্পড় কোনোটাই মারিনি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব কথা বলা হচ্ছে। এ ঘটনায় কৃষক কামাল উদ্দিনের স্ত্রী সেলিনা আকতারকে আটক করেছে পুলিশ।

এলাকাবাসী জানান, পুরানগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ওমর আলীর পুত্র কৃষক কামাল উদ্দিনের সংসারে স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। কামাল উদ্দিন সমপ্রতি একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই মেয়েকে বিয়ে না করেও ফকিরখীল কুমার পাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় রাখেন। কৃষক কামাল ওই বাসায় নিয়মিত যাওয়া আসা করতেন। বিষয়টি জানার পর কামালের প্রথম স্ত্রী সেলিনা আকতার স্বামীর বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদকে নালিশ দেন। ঘটনার দিন রাতে ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ কামালের বাড়িতে শালিসি কার্যক্রম শুরু করেন। এক পর্যায়ে ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ উত্তেজিত হয়ে উপস্থিত লোকজনের সামনে কামালকে লাথি ও থাপ্পড় মারেন। ফলে অপমান সহ্য করতে না পেরে কামাল দৌঁড়ে একটু দূরে গিয়ে বিষপান করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে কেরানীহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চমকে হাসপাতালে নেয়ার পথে কামাল মারা যান। এরপর তার লাশ ঘরে নিয়ে আসা হয়। খবর পেয়ে সাতকানিয়া থানা পুলিশ গতকাল কামালের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে কামালের স্ত্রী সেলিনা আকতার জানান, আমাদেরকে ঠিকভাবে ভরণপোষণ না দিয়ে অপর একটি মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করায় আমি স্বামীর বিরুদ্ধে ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদকে নালিশ দিই। কিন্তু ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ শালিস চলাকালে সবার সামনে আমার স্বামীকে লাথি ও থাপ্পড় দেন। এতে অপমান সহ্য করতে না পেরে আমার স্বামী বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। মেম্বারের এমন আচরণের কারণে আমি স্বামী হারা হয়েছি। আমার সন্তানরা হারিয়েছে বাবাকে।

কৃষক কামাল উদ্দিনের ছোট ভাই মহিউদ্দিন বলেন, আমার ভাবিকে খুশি করার জন্য মেম্বার মামুন সবার সামনে বড় ভাই কামালকে লাথি ও থাপ্পড় মেরেছেন। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে আমার ভাই বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। আমার ভাই দোষ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন। কিন্তু লাথি ও থাপ্পড় মারলেন কেন?

পুরানগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মামুনুর রশীদ বলেন, কামাল প্রথম স্ত্রী ও তিন সন্তানকে রেখে অপর একটি মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। বিয়ে না করে ওই মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করেছে। এ বিষয়ে কামালের স্ত্রী আমাকে বিচার দেয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য কামাল ও তার স্ত্রীসন্তানদের নিয়ে বসেছিলাম। বৈঠকে কামাল বিয়ে না করে অপর একটি মেয়ে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকার বিষয়টি স্বীকারও করেছে। বৈঠক চলাকালে বা পরে আমি কামালকে লাথি বা থাপ্পড় মারিনি। কিছু লোক আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব ‘মিথ্যা’ কথা বলছে।

সাতকানিয়া থানার এসআই বেলাল হোসেন বলেন, বিষপান করে কামাল উদ্দিন আত্মহত্যা করার খবর পেয়ে আমরা গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছি। তবে কি কারণে আত্মহত্যা করেছেন তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল।

সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো, শিবলী নোমান জানান, বিষপানে কামাল উদ্দিন আত্মহত্যা করার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা আকতারকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় কামালের স্বজনরা মামলা দায়ের করলে তার স্ত্রীকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। তবে তদন্তের আগে কেন বিষপান করেছে তা বলা যাচ্ছে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিয়ে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
পরবর্তী নিবন্ধপ্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে যে প্রভাব পড়তে পারে