আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি বলেছেন, আমরা যে স্বপ্ন দেখতে সাহস করি না নেত্রী শেখ হাসিনা সেই সকল বড় বড় স্বপ্ন নিজে দেখেন এবং বাস্তবায়ন করে দেখান। এজন্যই বাংলাদেশ আজ একটি গরিব দেশ থেকে স্বল্পোন্নত দেশে উত্তীর্ণ হয়ে উন্নত দেশের মর্যাদা প্রাপ্তি হতে চলেছে। এটা অনেকের সহ্য হয় না।
গতকাল শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুযায়ী নাশকতা ও নৈরাজ্য বিরোধী কর্মসূচির অংশ হিসেবে দারুল ফজল মার্কেটের সামনে বনফুল চত্বরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫২ বছর। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল মাত্র ২২ বছর। বাকি ৩২ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কি দিয়েছে সেটা খুঁজতে গেলে কিছুই পাবার নেই। পাবার মধ্যে আছে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের বাড়িতে, গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ঝুলানো, হত্যা ও ক্যূর মাধ্যমে ক্ষমতা দখল, ক্যান্টনমেন্টে রাজনৈতিক দল বানিয়ে দেশে ধারাবাহিক লুটপাট, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিদের পুনর্বাসন, জঙ্গিবাদের উত্থানসহ নানারকম অপকর্মের দীর্ঘ তালিকা ছাড়া আর কিছুই তো নেই। তারা যদি অহংকার করে তারা জাতিকে কিছু দিয়েছেন, তা মিথ্যা। ভোগ ও দখলদারিত্ব ছাড়া জাতিকে কিছুই দিতে পারেননি। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থেকেছে তখন দেশের উন্নয়ন হয়েছে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। আমরা কল্পনাও করতে পরিনি প্রমত্ত পদ্মার উপর সেতু হবে, মেট্রোরেল হবে। এমনকি কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে সুড়ঙ্গ হবে। আজ দেশে প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক জোন তৈরি হওয়ার পথে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী। এত বড় অর্জন বিশ্বে আর কোথাও আছে কি?
ড. ইউনূস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন সুদের কাঙালি যিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র করেছেন, কিন্তু সফল হননি। তিনি যেভাবেই হোক নোবেল পেয়েছেন। এজন্য তিনি সম্মান পেতে পারেন। তবে তিনি যদি ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যাচার করেন তাহলে কিছুতেই সহ্য করতে পারি না। এই মহামান্য ব্যক্তিটি ৭৮ কোটি টাকা খরচ করে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পাতা জুড়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছেন ৪০ জন স্বনামধন্য বিদেশি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার মর্যাদা ও স্বীকৃতি চান।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা করোনাকালে জাতিকে যে সেবা দিয়েছেন তা অনেক উন্নত দেশও দিতে পারেনি। এ সময় মানুষকে খাদ্য দিয়েছেন, আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন এবং করোনা প্রতিষেধক টিকা বিনামূল্যে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। এখন রুশ–ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে সারা বিশ্বের মানুষ সংকটে পড়েছে। অনেক উন্নত দেশে এখনও ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। কোনো কোনো দেশে নিত্যপণ্যের বাজারে সাধারণ সবজিও পাওয়া যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে সংকট থাকলেও তা কখনো চরম নয়। সংকট উত্তরণে নেত্রীর নির্দেশে আমরা লড়াই করছি।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, আমরা অরাজকতা ও নাশকতার বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ করছি জনগণের জানমাল রক্ষায়। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে সহজ সরল রাস্তাটি রয়েছে সেই পথে না গিয়ে বিএনপি–জামাত উল্টো পথে চলা শুরু করেছে। কেননা তারা জনগণের প্রতি আস্থা ও ভরসাহীন। এই দলটির জন্ম বন্দুকের নল দিয়ে ক্ষমতা দখল করার পর ক্যান্টনমেন্টে। তাই জনগণের ভাষা তারা বুঝে না। তারা চায় জনগণকে জিম্মি করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করা। তাই জনগণের কল্যাণে তারা কখনো রাজনীতি করে না বা করেনি। তারা তিনবার ক্ষমতায় ছিল। তারা জনগণকে কী দিয়েছে তার একটি তালিকা আমরা দেখতে চাই। কিন্তু তাদের সেই সাহস নেই।
তিনি বিএনপির কাছে প্রশ্ন করেন, তারা পাকিস্তানের জন্য মায়া কান্না করেন, কিন্তু পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সরাসরি বলেছেন পাকিস্তান দেউলিয়া হয়ে গেছে। বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ বতর্মান পর্যন্ত ৩১ বিলিয়ন ডলার। আর পাকিস্তানে তা ৩ বিলিয়ন ডলার। এই পার্থক্যটাকে এখন বিএনপি কোনো চোখে দেখে সেটাই আজ জাতি জানতে চায়।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবেই। নানা অজুহাত দেখিয়ে বিএনপি যদি নির্বাচনী ট্রেন মিস করে তাহলে আমাদের বলার কিছু নেই। এরপরও যদি তারা রাস্তা দখলে রাখতে চায় সেই দখলদারিত্ব থেকে তাদের উৎখাত করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই।
মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, ক্যাপ্টেন এনামুল হক চৌধুরী, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, চন্দন ধর, জালাল উদ্দীন ইকবাল, আবুল মনছুর, বখতেয়ার উদ্দীন খান, ফিরোজ আহমদ, মো. ইকবাল হাসান, সলিম উল্লাহ বাচ্চু, ফয়জুল্লাহ বাহাদুর, জাহাঙ্গীর আলম, ফারুক আহমদ ও মিথুন বড়ুয়া।
উপস্থিত ছিলেন শহিদুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার বিজয় কৃষাণ চৌধুরী, আব্দুল লতিফ টিপু, হাজী বেলাল আহমদ, আবুল হাসেম বাবুল, স্বপন কুমার মজুমদার প্রমুখ।
এদিকে একই সময়ে মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ১৫টি থানার উদ্যোগে পৃথকভাবে নগরীর ১৫টি স্থানে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ : ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি বলেছেন, অর্থহীন বিভিন্ন অজুহাতে বিএনপি–জামাত জোট দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। দেশের মানুষ সন্ত্রাসী দল বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপি–জামায়াত যতই শক্তিশালী হোক না কেন দেশে কোনো সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে আওয়ামী লীগ সেটা প্রতিহত করবে।
গতকাল বেলা ১১টায় আন্দরকিল্লা সংগঠন কার্যালয় প্রাঙ্গণে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি–জামায়াত জোট জানে না তাদের এ আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও আর মানুষ খুন কেউ কখনো মেনে নেবে না। বাংলার জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত আছে। আগামীতেও এ সরকারের অধীনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আবু সাঈদ, অ্যাডভোকেট মির্জা কছির উদ্দিন, প্রদীপ দাশ, খোরশেদ আলম, আবু জাফর, নুরুল আবছার চৌধুরী, আবদুল কাদের সুজন, আবদুল হান্নান চৌধুরী মঞ্জু, ডা. তিমির বরণ চৌধুরী, আবদুল মতিন চৌধুরী, মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর, সৈয়দুল মোস্তফা চৌধুরী রাজু, নাসির আহমদ, বিজন চক্রবর্ত্তী, মাহবুবুর রহমান শিবলী, সেলিম নবী, নুরুল আমিন চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, দিদারুল ইসলাম, শামীমা হারুন লুবনা, মোহাম্মদ জোবায়ের, সুরেশ দাশ, নাছির উদ্দিন, সিরাজুল ইসলাম মাস্টার, শহিদুল ইসলাম, আমির উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।