অন্যান্য সংস্থাকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে

নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি করাই মূল লক্ষ্য

| মঙ্গলবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২০ at ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ

৩৩ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌরকর খাতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ১০০ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৪ টাকা পাওনা আছে। অথচ ভয়াবহ আর্থিক সংকটের কারণে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বেগ পেতে হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে। অর্থের সংস্থানের জন্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটিকে। ১১ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নগরে এক হাজার ৫১৬টি সরকারি হোল্ডিং আছে। এসব হোল্ডিংয়ের বিপরীতে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে পৌরকর ধার্য করা হয়েছে ৫৬ কোটি ৫৯ লাখ ৮৭ হাজার ৬৮ টাকা। ইতোমধ্যে ৩৭ কোটি ৭ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬ হাজার ৫৬৩ টাকা আদায় হয়েছে। অর্থাৎ এখনো বকেয়া আছে ১৯ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার ৫০৫ টাকা। এছাড়া ২০১৯-২০২০ অর্থ বছর পর্যন্ত বিগত সময়ের বকেয়া ছিল ১০৩ কোটি ৯০ লাখ ১০ হাজার ২৮১ টাকা। এর মধ্যে চসিক আদায় করতে পেরেছে মাত্র ২২ কোটি ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার ১৭২ টাকা। অর্থাৎ পূর্বের অর্থ বছরের ৮১ কোটি ৪৫ লাখ ৬৫ হাজার ১০৯ টাকা এখনো বকেয়া আছে। সবমিলিয়ে পৌরকর খাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে চসিকের পাওনা ১০০ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৬১৪ টাকা!
উল্লেখ্য, চসিকের নিজস্ব আয়ের মূল উৎস পৌরকর। সিটি কর্পোরেশন অ্যাক্ট ২০০৯ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই চসিক মোট ১৭ শতাংশ পৌরকর আদায় করে থাকে। এর মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাঙ (গৃহকর), ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন রেইট এবং ৭ শতাংশ আবর্জনা অপসারণ রেইট রয়েছে। নগরবাসীর সার্বিক সেবা প্রদান নিশ্চিতকল্পে সিটি কর্পোরেশনে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ, নগরীর আবর্জনা অপসারণ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতকরণ, সড়ক আলোকায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি বহুমুখী কর্মকাণ্ডের সিংহভাগ ব্যয় পৌরকর থেকে নির্বাহ করা হয়।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও সংকটে ঘুরপাক খাচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মতো আর্থিকসহ সামগ্রিক ক্ষেত্রের সক্ষমতা খুব একটা নেই করপোরেশনের। ফলে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নাগরিকরা। নগর বিশেষজ্ঞদের মতে করপোরেশনের নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে আর্থিক সক্ষমতার অভাব, নাগরিক সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থা, প্রকল্প বাস্তবায়নে ম্যাচিং ফান্ড, ঠিকাদারদের বড় অঙ্কের বকেয়া এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে স্থায়ীকরণ-সংক্রান্ত জটিলতা।
কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌরকর খাতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাওনা শত কোটি টাকা আদায় করা গেলে সংকট সমাধানে কিছুটা হলেও কাজে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান। বলা বাহুল্য যে, সিটি করপোরেশন আর্থিক সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় নিমজ্জিত আছে। তার উত্তরণের জন্য অন্যান্য সংস্থাকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সিটি করপোরেশনের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনে সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওনাগুলো যাতে আদায় হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান তৈরি করে দিতে হবে।
আমরা প্রত্যক্ষ করি, দেনার দায়ে ডুবতে বসা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এখন মাথা সোজা করে দাঁড়ানোর চেষ্টায় আছে। ঠিকাদারসহ বিভিন্ন সংস্থার এখন সিটি কর্পোরেশনের কাছে হাজার কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে। টাকার অভাবে বন্ধের পথে ভাঙাচোরা সড়কের মেরামতসহ উন্নয়ন কাজ। এ অবস্থায় থেকে বরাদ্দের আশায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ধর্না দিচ্ছেন প্রশাসক নিজেই। ভাঙা-চোরা সড়কে অনেকটাই যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নগরীর সড়কগুলোর বর্তমানে বেহাল দশা। শুধু যে সড়কের বেহাল অবস্থা তা নয়। সিটি করপোরেশনের সেবা খাতও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বিদ্যুৎ বিলের অভাবে রাতে রাস্তায় বাতি জ্বলে না। কারণ আর্থিক সংকট। আর টাকা না থাকায় কোনো কাজই করতে পারছেন না প্রশাসক। নাগরিক দুর্ভোগ কমিয়ে সেবার মান বৃদ্ধি করাই প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। বিশুদ্ধ পানি, গ্যাস ও স্যুয়ারেজ সমস্যায় নাকাল জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের জন্যই তাঁরা তৎপর। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন যেমন প্রয়োজন, তেমনি আর্থিক সহায়তা জরুরি। কিন্তু সেই সহায়তা না পেলে কোনো কাজেরই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় হ্রাস দিবস