অন্ধকারে ডুবে গেছে গাজা

বিশ্ব দরবারে প্রাণ রক্ষার আকুতি চিকিৎসকদের ।। ইসরায়েলে জরুরি জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন ।। ইসরায়েলে নিহত ১২০০, ফিলিস্তিনে ১১০০

| বৃহস্পতিবার , ১২ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ইসরায়েলি আগ্রাসনে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে ফিলিস্তিনের শহর গাজা। অন্ধকারে ডুবে গেছে পুরো উপত্যকা। হাসপাতালগুলোতে জমে উঠেছে লাশের পাহাড়। দেশটির চিকিৎসকরা বিশ্বের কাছে আহত ও বেঁচে যাওয়া মানুষের প্রাণ রক্ষার আকুতি জানিয়েছেন। এদিকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন করেছে ইসরায়েল। গাজা সীমান্তে তিন লাখ সেনা মোতায়েনও করেছে তারা, গাজা ভূখণ্ডে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অপরদিকে গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া দুপক্ষের এ সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ২৩০০ পার হয়ে গেছে বলে আল জাজিরা জানিয়েছে। এর মধ্যে ইসরায়েলি মারা গেছে ১২০০ জন, আর ফিলিস্তিনি মারা গেছে ১১ শ’র বেশি। দুপক্ষে আহতের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার।

বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় গাজা এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত। গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ২টার পর উপত্যকার বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে দেশটির সরকারি গণমাধ্যম বিবৃতি জারি করে ‘বিদ্যুৎ চলে যাবে’ বলে ঘোষণা দেয়। হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর দখলদার ইসরায়েলিরা গাজার সব ধরনের সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় উপত্যকাটিতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিদ্যুৎ ছাড়া হাসপাতালগুলোকে জরুরি জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তু জ্বালানি সরবরাহ না থাকায় সে উপায়ও নেই। হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা হয়তো আর দুইচারদিন কাজ চালাতে পারব। এরপর সব শেষ হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ না থাকায় হাসপাতালের ব্লকগুলোয় পানি ও লিফট থাকবে না। আজ রাত আমরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে থাকব। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে খবরাখবর রাখতে আমরা ফোন বা টেলিভিশন দেখতে পারব না। চিকিৎসকরা এ অবস্থায় বিশ্বের কাছে প্রাণ রক্ষার আকুতি জানিয়েছেন। গাজা শহরের শিফা হাসপাতালের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বেসামরিক নাগরিকদের সহায়তাকারী প্রথম প্রতিক্রিয়াকারীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে। এ অবস্থায় আমরা বিশ্বের কাছে এসওএস (সাংকেতিকভাবে সাহায্য কামনা) পাঠাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমরা ভুগছি এবং বিশ্ব এক আঙুলও নড়ছে না। আপনাকে অবশ্যই আমাদের সাহায্য করতে হবে। গত রোববার থেকে গাজার ওপর ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্ট ঘোষণা দেন, গাজায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি খাদ্য বা জ্বালানিকোনো কিছুই প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। অঞ্চলটির বাসিন্দাদের প্রায় ৮০ শতাংশ আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তার ওপর নির্ভর করে। তাদের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রতিদিনকার খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। দুই গোষ্ঠীর যুদ্ধে উপত্যকাকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে ফেলায় চরম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে সেখানে।

এদিকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি জাতীয় ঐক্য সরকার গঠন করেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গতকাল সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেতা বেনি গান্তজের সঙ্গে একটি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গঠন এবং যুদ্ধে পূর্ণ মনোনিবেশ করতে রাজি হন। গান্তজের ন্যাশনাল ইউনিটি পার্টির এক যৌথ বিবৃতিতে একথা জানানো হয়েছে।

হামাসের সশস্ত্র শাখা আল কাসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, তারা বুধবারও ইসরায়েলের ভেতরে লড়াই করছে। ইসরায়েল গাজার ঠিক উত্তরে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন করেছে। তবে দেশের ভেতরে লড়াই চলার হামাসের দাবি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল। তাদের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাসের অতর্কিত হামলার পর থেকে এ পর্যন্ত ১,২০০ ইসরায়েলির মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরো ২,৭০০ জনের বেশি। গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ১,১০০ জন নিহত এবং ৫,১৮৪ জন আহত হয়েছে। গাজার হামাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ৫৩৫টি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে এবং আড়াই লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। বাস্তুচ্যুতদের বেশিরভাগই জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রে আছে, অন্যরা রাস্তায় দিন পার করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসন্দ্বীপ কলোনিতে বর্জ্যাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত বদলানোর দাবি
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস আজ