মানুষের জীবিকা নির্বাহে সহজ হয় এমন পদক্ষেপ গ্রহণে অন্তর্বর্তী সরকার পজিটিভলি পারফর্ম করেছে বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি’র যুগ্ম সদস্য সচিব সাগুফতা বুশরা মিশমা। একইসঙ্গে খাতভিত্তি সংস্কারসহ লংটার্ম কিছু পদক্ষেপ গ্রহণে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান ‘স্লো’ ছিল বলেও মনে করেন তিনি। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রপার পেট্্েরানাইজেশন (পৃষ্ঠপোষকতা) থাকলে বা প্রপার হেল্প করলে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান আরো গতিশীলভাবে কাজ করতে পারতেন বলেও দাবি করেন এনসিপি’র এই নেত্রী। দৈনিক আজাদীর কাছে এভাবেই অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের মূল্যায়ন করেন সাগুফতা বুশরা মিশমা। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা একটা নির্বাচনী সরকার যেই হোক, রাষ্ট্র পরিচালনা ক্ষেত্রে এক বছরে কারো পারফরমেন্সটা বুঝা খুবই টাফ। তবে কিছু সমালোচনা এবং কিছু প্রশংসনীয় নানান ধরনের কাজ কিন্তু আমরা অন্তবর্তী সরকারের গত এক বছরে পেয়ে এসেছি।
তিনি বলেন, যদি এনালাইসিসে যাই আমরা দেখতে পাব, মানুষজনের মধ্যে যেমন স্বস্তির একটা ছাপ আছে তেমনি আবার অনেকের মধ্যে কিছু অভিযোগেরও ছাপ আছে। আমরা এটাও এনালাইসিসে যাই, কিসের ব্যাপারে স্বস্তি এবং কিসের ব্যাপারে অভিযোগ। আমরা দেখতে পারব, শর্টটাইম যে সকল পদক্ষেপগুলো নিলে মানুষের জন্য জীবিকা নির্বাহটা একটু সহজ হয়ে যায়, যেমন রোজার মাসে পণ্যদ্রব্যের দামটা একটু কমে যাওয়া, এ ধরনের বিভিন্ন পদক্ষেপ যেগুলোতে জনগণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া থাকে সেখানে কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার পজিটিভলি পারফরম করেছে।
বুশরা বলেন, যখন দেখি লং টার্ম কোনো পদক্ষেপ, যেমন সামনের দিনগুলোতে বিভিন্ন ধরনের পলিসি বেইস যে সকল পদক্ষেপগুলো প্রয়োজন বা খাত ভিত্তিক যে সংস্কার সেখানে আমরা দেখেতে পেয়েছি সরকার একটু স্লো। এগুলোতে আবার দেখা গিয়েছে সরকারের প্রতি কিছুটা আক্ষেপ বা সমালোচনা রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে যখন বসিয়েছি তখন আমাদের সকলের মাথায় রাখা উচিত ছিল, উনি পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের না। একই সাথে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে ইন্টারন্যাশনালি উনার এঙেপটেন্স’টা (গ্রহণযোগ্যতা) সবচাইতে বেশি, তারও কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে। এই যে সীমাবদ্ধতাগুলো মাথায় রেখেই আমাদের উচিত ছিল ওনাকে বসানো। অনেকে হয়তো মনে করছে, তিনি যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল একটা ফিগার, তাই হয়তো বা তার কোন ভুল থাকতে পারবে না। কিন্তু এই ভাবনটাও ভুল।
তিনি বলেন, উনার যে সকল জায়গাগুলোতে সীমাবদ্ধতা আছে, মানে পলিটিক্যাল বিভিন্ন পলিসি বা বিভিন্ন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ক্ষেত্রে সেটা লং টার্ম, শর্টটার্র্ম হোক বা মিডর্টাম হোক। এইক্ষেত্রে আমাদের যে সকল রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলো আছে তাদেরও বিশাল একটা দায়বদ্ধতা কিন্তু এখানে আছে। পলিটিক্যাল যে সকল দলগুলো আছে তাদের একটা দায়বদ্ধতা ছিল, ডক্টর ইউনূস যখন দেশ পরিচালনা করবে তাকে কোনো প্রকার বাধা না দেওয়া, একইভাবে পলিটিক্যাল পারপাসগুলো কিভাবে সার্চ করতে হবে কিংবা পলিটিক্যাল ডিসিশনগুলো কীভাবে মেক করতে হবে সেখানে ডক্টর ইউনুসকে হেল্প করা উচিত ছিল। সেটা আমরা প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের মধ্যে অনুপস্থিত দেখেছি। তাই রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের যে দায় সেটা এড়িয়ে যেতে পারে না। আমরা দেখেছি ড. ইউনূসকে কোনো প্রকার পরামর্শ দেওয়ার বাইরে গিয়ে তারা আন্দোলন করেছে, তাকে আল্টিমেটাম দিয়েছে। এই জিনিসটা যদি না থাকতো হয়তো বা উনার কাজের গতিশীলতাটা আরেকটু বেড়ে যেত। এটা আমার পার্সোনাল অপিনিয়ন।
সাগুফতা বলেন, শুল্ক কমে যাওয়ার যে ব্যাপারটা আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন দেশের নানা ধরনের চুক্তি হচ্ছে, যেগুলো বাংলাদেশের জন্য কিন্তু পজিটিভ। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করার জন্য আদানি গ্রুপকে ঋণ পরিশোধ করেছে। বাংলাদেশে প্রথমে আমরা দেখেছি ঋণও পরিশোধ করছে একই সাথে রিজার্ভও বাড়ছে। এই জিনিসগুলো কিন্তু বাংলাদেশের জন্য পজিটিভিটি বয়ে আনে। এগুলো কেবলমাত্র ইউনূস সরকার হওয়াতে সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য সরকার আসলে হয়তো বা আপনার রিজার্ভ বাড়তো কিন্ত ঋণ বাড়তো, নয়তোবা ঋণ কমতো ও রিজার্ভ কমত। এই ধরনের সিচুয়েশন আমরা প্রিভিয়াসলিও দেখেছি।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল সংসদ–এর সাবেক এ সাধারণ সম্পাদক বলেন, একটা সরকারের এক বছরের পারফরমেন্স আমি বলব, তিনি সবচাইতে ভালো কাজ করেছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর যদি প্রপার পেট্্েরানাইজেশন (পৃষ্ঠপোষকতা) থাকতো বা প্রপার হেল্পটা থাকতো তিনি হয়তো বা আরো গতিশীলভাবে কাজ করতে পারতেন।
তিনি বলেন, ডক্টর ইউনূস কিন্তু এসেছিলেন মানুষের ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করতে। কিন্তু আমরা দেখেছি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর টানাপোড়েন, বিভিন্ন সামাজিক–রাজনৈতিক টানাপোড়েন, মানুষ যে কি চায়, বাংলাদেশের জনগণের যে চাওয়া সেটা সবার মধ্যে কিন্তু অনুপস্থিত ছিল। এই যে আমরা আল্টিমেটলি রাজনৈতিক দলগুলো কি চায় সেটা তার উপর চাপিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমরা কি এ ধরনের কোন সিনারিও দেখেছি, বাংলাদেশের মানুষ কি চায় সেটা কি কোনো রাজনৈতিক দল বলছে? কোনো রাজনৈতিক দলের দফার মধ্যে দেখতে পেয়েছি? দেখতে পাইনি।
এনসিপির এই নেত্রী বলেন, মানুষ এখনো চায়, আমার দল বলে আমি বলছি না। এনসিপির বিভিন্ন পদযাত্রা হয়েছে, প্রায় ৩০ দিনের একটা পুরো বাংলাদেশে আমরা পদযাত্রা করেছি, মানুষের চাওয়াটা আমরা কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমাদের দাবি ও আমাদের দফার মাধ্যমে। এই জিনিসটা যদি ডক্টর ইউনুস পর্যন্ত প্রোপারলি পৌঁছাতে পারে তাহলে আমি মনে করি জনবান্ধব যেকোনো পলিসি, জনবান্ধব যেকোনো ডিসিশন তার পক্ষে নেওয়াটা আরো বেশি সহজতর হয়ে যায়।