গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিকও নয়, বৈপ্লবিকও নয় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সমপ্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এর ফলে বর্তমান এই সরকারের ব্যাপক জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও তার অনেক অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে নাহিদ ইসলাম এ মন্তব্য করেন।
জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির লক্ষ্যে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) আয়োজিত ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন শীর্ষক দুই দিনের সংলাপের প্রথমদিন সন্ধ্যায় নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, সেই সীমাবদ্ধতাগুলো স্বীকার করেই আমরা চলার চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশের রাজনীতি নতুন করে পরিগঠিত হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের একটা সৌহার্দ্য এবং ঐকমত্য আছে। তারা একইসঙ্গে যে ভুল এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে সে জায়গায় সমালোচনা করছে, সেগুলো আমরা এড্রেস করার চেষ্টা করছি। খবর বিডিনিউজের।
গণঅভ্যুত্থানের পরে যে ধরনের সরকার গঠিত হয়েছে সেটাকে এখনও ডিফাইন করা যাচ্ছে না মন্তব্য করে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, সাংবিধানিক সরকারও নয় এক অর্থে, আবার বৈপ্লবিক সরকারও নয় আরেক অর্থে। একটা অন্তর্বর্তী সরকার, যে ট্রানজিশনের জন্য কাজ করছে। ফলে এই সরকারের ব্যপক জনসমর্থন থাকা স্বত্ত্বেও তার অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ (প্রশাসনিক) অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এ সময় আমলাদের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের বিষয়ে তিনি বলেন, নেক্সট উইকেই এটার খুব কঠোর পদক্ষেপ আসবে। যারা আন্দোলনের নামে চাকরিবিধি লক্সঘন করছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমলাদেরকেও আমরা বলছি, এখন সময় জনগণকে সেবা দেওয়ার, আমাদের ট্রানজিশনটাকে সঠিকভাবে করতে সহায়তা করা। আন্দোলন আন্দোলন খেলা কিংবা তাদের গোষ্ঠী স্বার্থে রক্ষার জন্য কিন্তু এতো মানুষ জীবন দেয়নি।
রাষ্ট্রের সংস্কার হলে সকলেই ন্যয় বিচার পাবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সেই সংস্কারে তাদেরও (আমলাদের) মত থাকবে। কিন্তু একটা সংস্কারের মত আসলেই তারা যে রিঅ্যাকশনটা দেখিয়েছে, এটা নৈতিকভাবে তাদের ঠিক হয়নি এবং বিধিগতভাবেও তারা লক্সঘন করেছে। দ্বিতীয়ত, বিগত রেজিমের আমলারা যারা লুকিয়ে আছে, তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করেছি এবং তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের সংস্কারের পরিকল্পনা হাওয়া থেকে আসে নাই, বরং গত ১৫ বছর ধরেই রাজনৈতিক দলগুলো এবং সিভিল সোসাইটির লোকজনের বলে আসার কথা তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো সংস্কারকে প্রধান কর্মসূচি করে আন্দোলন গড়ে তুলতেছিল। সেটারই কিন্তু ধারাবাহিকতা এ সরকারের আমলে হচ্ছে, আমরাও সংস্কারের কথা বলছি এবং সেটা সামনেও ধারাবাহিকতা থাকবে।
বিগত সরকারের সময়ের ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টিকে মৌলিক সমস্যা আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হতে পারে, এক রাজনৈতিক দল থেকে আরেক রাজনৈতিক দল বা সরকারের পরিবর্তন, সে সকল পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমরা চাচ্ছি সামনের যে বাংলাদেশ, সেখানে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটা যাতে সুষ্ঠু হয়। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটা গণতান্ত্রিক, কতোটা শান্তিপ্রিয়, কতোটা প্রাতিষ্ঠানিক করা যায় সেটা কিন্তু আমাদের প্রধান একটা এজেন্ডা। নির্বাচন যে করবো, এর আগে এই প্রশ্নের সুরাহাটা হওয়া প্রয়োজন। এরপরে যে সরকার আসবে সেই সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটা কী হবে?
সংবিধান সংস্কারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা মনে করি যে মুজিববাদী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে যে সংবিধান রচিত হয়েছিল সেই সংবিধানে মানুষের বা মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সখা প্রতিফলিত হয়নি। বাংলাদেশ নিয়ে প্রতিবেশি দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিফলিত হয়েছে।
বৈদেশিক নীতিতেও ঐকমত্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তন হবে, দল পরিবর্তন হবে কিন্তু একটা ফরেন পলিসিতে সবাই ঐক্যমত হবে। বাংলাদেশে দেখি একেক দল আসলে তার বৈদেশিক নীতি একেক রকম হয়। একদল আসলে সেটা ভারতমুখী, আরেকদল আসলে ভারতবিরোধী বা অন্য দেশমুখী। আমরা চাই যে ফরেন পলিসি সেটাও আমাদের নতুন করে চিন্তা করা উচিৎ ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য।
অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটা জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে এবং এই ঐক্য চলমান থাকার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, এমন একটা দেশই দেখতে চেয়েছি, বাংলাদেশ প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল সরকার একটা প্ল্যাটফর্মে আসতে পারবে।