সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শুক্রবার বিকালে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই যে পলাতক স্বৈরাচারী সরকারের সময়কার একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিমানবন্দর দিয়ে চলে গেছেন দেশ ছেড়ে; যেভাবে গেছেন, সেটি যদি আমরা মিলাই তাহলে দেখব, ৫ অগাস্ট আরেকজন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, ইনিও অনেকটা সেভাবে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার নাকি তার এই দেশত্যাগের ব্যাপারে কিছুই জানে না।
তারেক রহমান বলেন, ঘটনাটি গতকালের এবং গতকাল থেকে আজ (শুক্রবার) পর্যন্ত যতজন মানুষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, প্রত্যেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে, প্রত্যেকে প্রশ্ন করছেন–তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার জানেটা কী? সঙ্গে এ অভিযোগ উঠেছে, সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণ করে অন্তর্বর্তী সরকার এক দিকে হয়ত স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের নিরাপদে দেশত্যাগের সুযোগ করে দিচ্ছে; অপর দিকে সুকৌশলে নানা ইস্যু সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদীবিরোধী যেসব রাজনৈতিক দল আমরা যারা মাঠে ছিলাম, তাদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর একটা ক্ষেত্র হয়তো তৈরি করতে চাইছে। খবর বিডিনিউজের।
অনুষ্ঠানে সংবিধান সংস্কারের প্রসঙ্গও তোলেন তারেক। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে বিএনপি তার স্পষ্ট প্রস্তাব অন্তবর্তী সরকারের কাছে তুলে ধরেছে। জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপি প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্তবর্তী সরকারের প্রতি এখনও তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। তবে রিসেন্টলি যদি আমরা খেয়াল করে দেখি, বিভিন্ন কারণে অন্তবর্তী সরকার তাদের দায়িত্ব পালনে সক্ষমতার পরিচয় দিতে পারছে কিনা, এ নিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে কিন্তু ধীরে ধীরে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে।
তারেক রহমান বলেন, ২০১৩ সালে ডিসেম্বর মাসে তৎকালীন র্যাব সদস্যরা ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনকে গুম করে। আজ পর্যন্ত এ সহকর্মীর আমরা হদিস পাই নাই। স্বৈরাচারের শাসনকালে শুধু একজন সুমন নয়, ঢাকাসহ সারা দেশে এরকম অসংখ্য সুমনদেরকে গুম–খুন–অপহরণ করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে পলাতক স্বৈরাচারের সময় গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদসদের নিয়ে সুমনের বোনের নেতৃত্বে ২০১৪ সালে গঠিত হয় সামাজিক সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। অত্যন্ত আশ্চর্য ও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, গুম হওয়া সুমনকে ধরার জন্য গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় সুমনের বোনের বাসায় অভিযান চালিয়েছে প্রশাসন। তারপরে প্রশাসন বলছে, তারা নাকি সুমন সম্পর্কে জানত না। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম ঠিক আছে প্রশাসন সুমন সম্পর্কে হয়ত জানত না। কিন্তু পলাতক স্বৈরাচারের সরকারে সময়ের একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিমানবন্দর দিয়ে কীভাবে চলে গেছে দেশে ছেড়ে?
ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, আমি প্রায় আমার আালোচনায় একটি কথা বলে থাকি, সংখ্যালঘু কিংবা সংখ্যাগুরু–এগুলো হচ্ছে একটি রাষ্ট্রে ধর্ম–বর্ণ পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকদের বৈশিষ্ট্য কিংবা সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য একটি শব্দ মাত্র। খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী আপনি কিংবা আপনারা যারা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে পরিসংখ্যানে আপনি এখন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সদস্য। একইভাবে আমি এ মুহর্তে ইংল্যান্ডে, এখানে আমি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সদস্য। আপনি ইংল্যান্ডে এলে কিংবা আমি বাংলাদেশে ফিরে গেলে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর হিসাবটি সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাবে।
সব ধর্ম–বর্ণের মানুষের যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে উল্লেখ করে তারেক বলেন, এ দেশটা কোনো ব্যক্তি কিংবা দলের নয়। দেশটা আমার–আপনার আমাদের সবার।