গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কারের পথ ধরে নির্বাচনী রোডম্যাপে যাবে বাংলাদেশ।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার করে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার কাজকে অগ্রাধিকার দিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিডিনিউজের।
তারেক রহমান বলেন, আমি বলতে চাই, সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরে নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। আসুন আমরা কাজের মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস, জনগণের ভালোবাসা অর্জন করি। জনগণকে সঙ্গে রাখি, জনগণের সঙ্গে থাকি। সেজন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার নতুন বার্তাও দেন।
তিনি বলেন, আমি বলতে চাই, ক্ষমতার পরিবর্তন মানে শুধু রাষ্ট্রের ক্ষমতার হাত বদল নয়। ক্ষমতার পরিবর্তন মানে রাষ্ট্র ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আচার–আচরণের গুণগত পরিবর্তন জরুরি। সুতরাং আমার আহ্বান, কোনো প্রলোভন কিংবা কোনো উস্কানিতে বিভ্রান্ত না হয়ে জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র এবং সমাজের নেতৃত্ব দানের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন।
তারেক রহমান বলেন, শত শহীদের রক্তস্নাত এই রাজপথে আজ আপনাদের এই স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতির অর্থ জনগণের বৈষ্যমহীন বাংলাদেশ গড়ার এই যাত্রা পথে বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে আরও কিছু পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে সেই পথ অবশ্যই নয়, সন্ত্রাস, সংঘর্ষ, প্রতিশোধ কিংবা প্রতিহিংসা। সেই পথ হবে ধৈর্য, সহনমীলতা ও সমঝোতা।’
‘আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি এ গণসমাবেশের আয়োজন করে। ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড ছাড়াও গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, টাঙ্গাইল জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা ব্যানার–ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়।
নতুন রাজনৈতিক দল প্রসঙ্গে : তারেক রহমান বলেন, কেউ যদি মনে করে একটি পরিণত এবং নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরও নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে তাহলেও চিন্তার কিছু নেই। শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। জনগণ কাকে সমর্থন জানাবে কিংবা কাকে সমর্থন দেবে না এটি তার নিজস্ব বিষয়। এই কারণে বিএনপি বরাবর জনগণের ভোটের অধিকারের ওপর জোর দিয়েছে। বিএনপি মনে করে একমাত্র অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশীদারত্ব প্রয়োজন।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থান কিংবা সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে রাজনীতির মাঠে নানারকম কথাবার্তা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এটি একটি স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য নীতি। প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবে– এটিই স্বাভাবিক। এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার কোনো কিছু নেই।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না : ছাত্র–জনতার গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে মাফিয়া চক্রের হাতে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়া এবং জনগণকে ঋণভারে জর্জরিত করার চিত্র তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, অন্যায়, অনিয়ম, অরাজকতার বিরুদ্ধে গণবিস্ফোরণে মাফিয়া চক্রের প্রধান দেশ ছেড়ে পালানোর পর দেশের মাফিয়ার শাসন–শোষণের অবসান ঘটেছে। প্রকৃত স্বৈরাচারের পলায়নের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার কাজে প্রধান বাধা হয়ত দূর হয়েছে। তবে বাধা দূর হলেও মাফিয়া চক্রের ১৫ বছরের জঞ্জাল কিন্তু দূর হয়নি। এই জঞ্জালকে দূর করে বাংলাদেশের জনগণের ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে। তবে মাফিয়া চক্রের প্রধান দেশ থেকে পালালেও মাফিয়া চক্রের বিনিফিশিয়ারি অপশক্তি প্রশাসনে ভেতরে থেকে কিংবা রাজনীতি ছদ্মবেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে মূর্তপ্রতীক জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল। এই সরকারের সকল কার্যক্রম সকলের কাছে হয়ত সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে। তবে এটি সবাইকে মনে রাখতে হবে এই সরকারের ব্যর্থতা আমাদের সকলের ব্যর্থতা। বাংলাদেশের পক্ষে জনগণের ব্যর্থতা। সেজন্য এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। বিদেশ থেকে নানাভাবে উস্কানিতে জনগণ এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেবে না। কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যাতে নিজেরাই নিজেদের ব্যর্থ হওয়ার কারণ না হতে পারে সে ব্যাপারে সকলকে সর্তক থাকতে হবে। জনগণ এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, রাখবে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যারা দায়িত্বে আছেন তাদেরকে অনুরোধ করতে চাই, এখনও আমলাদের মধ্যে, সরকারের মধ্যে সেই ফ্যাসিবাদী সরকারের অনেক প্রেতাত্মা উস্কানি দিচ্ছে। তারা সমস্ত যে প্রচেষ্টা আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া, কাজ নস্যাৎ করার জন্য তারা বসে আছে। আপনাদেরকে রুখে দাঁড়াতে হবে। গণতন্ত্রকে যদি ধ্বংস করতে চায়, আবার বিপদে ফেলতে চায় সেটা অবশ্যই প্রতিরাধ করতে হবে। গণতন্ত্র দিবসে আমাদের শপথ নিতে হবে, বুকের রক্ত দিয়ে হলেও বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে, বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে।