সিন্ডিকেট ভাঙতে অন্তর্বর্তী সরকার কৃষিবাজার তৈরির উদ্যোগ নেবে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, কৃষকের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে বিকল্প কৃষিবাজার চালু করার কথা ভাবা হচ্ছে। যেন কৃষক সরাসরি পণ্য বিক্রি করতে পারে। বৃহস্পতিবার তেজগাঁও বেগুনবাড়িতে ঢাকা শহরের ৫০টি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে সাধারণ ভোক্তাদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। আসিফ মাহমুদ বলেন, বন্যাসহ আরও কিছু কারণে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। আবার সিন্ডিকেট ও ফড়িয়াদের মজুতসহ নানা কারসাজির কারণেও দাম বেড়েছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য ইতোমধ্যে টাস্কফোর্স দীর্ঘমেয়াদি কাজ শুরু করেছে বলেও জানান শ্রম উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বেসরকারিভাবে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা আরও ছড়িয়ে দিতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।
আসলে সামপ্রতিক সময়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করায় সাধারণ মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে বিগত সরকারের ব্যর্থতার প্রভাব এসে পড়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ঘাড়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলেছেন, বাজারের নৈরাজ্য আর মুনাফাখোর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে শ্রমজীবী, স্বল্পআয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। ব্যবসায়ীদের খামখেয়ালিতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত, শ্রমজীবী–মেহনতি মানুষের ঘরে ঘরে হাহাকার।
চাল ও তেলসহ সব নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। এতে মানুষের জীবনে চরম সংকট নেমে এসেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে এই সামর্থ্যহীনতার দায় সরকারের নেওয়া ছাড়া গতি নেই। সবচেয়ে বিপদে আছেন শ্রমজীবী মানুষ। তাঁদের আয়ও বাড়েনি। কিন্তু খরচ বেড়েছে অনেক বেশি।
বিশ্লেষকরা বলেন, বাস্তব সত্য হচ্ছে, বাজারের ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পরিপূর্ণ সফলতার পরিচয় দিতে পারছে না। ফলে হঠাৎ করে ডিম, চাল ও অন্যান্য পণ্যের দাম আকাশচুম্বি। পেঁয়াজ–রসুনসহ প্রতিটি ভোগ্যপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বাজারে সরকারের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির অভিযোগ তুলছেন অনেকেই। সরকার কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে, সেই প্রশ্নও আসছে। তবে ব্যবসায়ী নেতাদের অনেকে বলছেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে কোন পণ্যের চাহিদা এবং যোগানের ওপর তার বাজার নির্ভর করে, সেখানে সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ঘাটতি পর্যালোচনা করে তাতে যোগান দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ আগাম পরিকল্পনার মাধ্যমে বাজারে হস্তক্ষেপ করবে। এই ব্যবস্থাপনাতেই ঘাটতি আছে বলে তাঁরা মনে করেন। তাঁরা বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি এই নয় যে ব্যবসায়ীর ওপর সব ছেড়ে দেবো, যা হওয়ার তাই হোক, তা তো হতে পারে না। সরকারকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবশ্যই রাখতে হবে।
তাঁরা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম আরো জোরদার করা দরকার। অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা অব্যাহত রাখতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলোর উৎস চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বাজার ব্যবস্থা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। মানুষের কষ্ট লাঘবে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তাঁরা বলেন, গত কয়েক দিনের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। এই মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করছে অনেক অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী। অন্তর্বর্তী সরকারকে এই অসাধু সিন্ডিকেট ভাঙতেই হবে। আমরা প্রত্যক্ষ করছি– সরকার বিভিন্ন পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরেও সেটা মানা হচ্ছে না। বিক্রেতারা নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে। অসাধু বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে পর্যবেক্ষকমহল মন্তব্য করেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার যে চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানালেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা। মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।