অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্রনীতি: একটি পর্যবেক্ষণ

এস এম ওমর ফারুক | বুধবার , ২৫ জুন, ২০২৫ at ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ

২০২৪ এর জুলাইয়ের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর গত ১০ মাস ধরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দক্ষতার সাথে গণ আকাঙ্ক্ষা পূরণে কাজ করে চলেছেন। আগামী ৮ আগস্ট এ সরকারের এক বছর পূর্ণ হবে। আজকের লেখায় আমি শুধু এ সরকারের নতুন পররাষ্ট্রনীতির কিঞ্চিত পর্যালোচনার প্রয়াস নেব।

ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে পতিত সরকারের ভারত চীন কেন্দ্রিক নির্ভরতা থেকে সরে এসে অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকার শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর বৈশ্বিক সুনাম ও গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ এবং বহুমুখী কূটনীতি দিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে সূচনা করেছেন এক নতুন দিগন্ত। পর্যবেক্ষকরা একে বলছেন ‘৩৬০ ডিগ্রি কূটনীতি,’ যেখানে পূর্ব পশ্চিম, উত্তর দক্ষিণ সবদিকে ছড়িয়েছে তাঁর ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা ছিল, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলের পর নতুন কোন প্রশাসনের জন্য পররাষ্ট্র নীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হবে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। কারণ তাঁর সময়কালের কূটনৈতিক কাঠামো ছিল প্রবলভাবে ভারত নির্ভর। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান সে আশঙ্কা সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়ে তাঁর বৈশ্বিক খ্যাতি ও কুটনৈতিক দক্ষতা কাজে লাগিয়ে মসৃণ পরিবর্তনশীলতাকে সামলিয়ে পররাষ্ট্র নীতিকে আরো বহু পাক্ষিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ করে তুলেছেন।

দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ড. ইউনুস দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগের মাধ্যমে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছেন যার লক্ষ্য ছিল দেশের অভ্যন্তরীণ সংবেদনশীল রূপান্তর এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অঙ্গনে নতুন করে দৃঢ় অবস্থানে দাঁড় করানো। এই সরকারের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য আসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে। জুলাইয়ের ছাত্র গণ আন্দোলনের পক্ষে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিককে সে দেশের আদালত শাস্তির আদেশ দিয়েছিল। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস ও আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এর সরাসরি আলোচনার পর তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। নতুন সরকারের পররাষ্ট্রনীতির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটান ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন। সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে অনুষ্ঠিত ঐ বৈঠকে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো জোরদার, গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির সুযোগ ইত্যাদি নিয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধান কথা বলেন। এরপর ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন ড. ইউনূস। সেখানে তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের মিত্র সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এবং দু’দেশের সম্পর্কের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২৬ সেপ্টেম্বর একদিনেই ১৬ টি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টা, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থানকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। সেদিন তিনি পাকিস্তান, কানাডা ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী, ব্রাজিল ও মরিশাসের প্রেসিডেন্ট, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আই এম এফ) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনার এর সঙ্গে বৈঠক করেন। জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বিশ্ব সমপ্রদায়ের প্রতি ‘নতুন বাংলাদেশের’ সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, নতুন বাংলাদেশ সকল নাগরিকের জন্য স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

২০২৫ সালের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠান যা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের প্রতি অন্যতম প্রধান একটি পশ্চিমা রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক সমর্থন নিশ্চিত করে। প্রতিনিধি দল জানায়, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থন বজায় রাখবে। দলটি ঢাকার সাথে ব্রেক্সিট পরবর্তী প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতা সম্পর্ক আরো গভীর করতে লন্ডনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।

৪ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে ৫৮ সদস্যের উচ্চপর্যয়ের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকা সফর করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এ সফর ছিল মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে ইউনূস সরকারের প্রতি দৃঢ় কূটনৈতিক সমর্থনের প্রতিফলন। এর দুই মাস পর তিমুর লেস্তের প্রেসিডেন্ট রামোস হোর্তা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করেন এবং বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দেন। সার্বিকভাবে বলা যায়, এ সফরগুলোর কূটনৈতিক গুরুত্ব নিহিত আঞ্চলিক কৌশলগত হিসেব নিকাশে। প্রথমত মিয়ানমারের উপর আসিয়ান জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে মালয়েশিয়ার প্রভাব যেমন রয়েছে, দ্বিতীয়ত রোহিঙ্গা সংকটে নেপিডোর উপর চাপ সৃষ্টিতে এ সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং তৃতীয়তঃ আসিয়ানের পূর্ণ সদস্য পদ লাভের পথে বাংলাদেশের যে আকাঙ্ক্ষা সেটিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন যোগাবে।

প্রধান উপদেষ্টা ২০২৪ সালের নভেম্বরে আজারভাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত ‘কোপ ২৯’ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে ন্যায়ভিত্তিক নেতৃত্ব ও টেকসই উন্নয়নের পক্ষে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেন। সম্মেলনে তিনি বিশ্ব নেতাদের সামনে শূন্য কার্বন নিঃসরণ, শূন্য দারিদ্র্য ও শূন্য বেকারত্ব তথা তাঁর ‘থ্রি জিরো’ বৈশ্বিক কর্মসূচি দৃঢ়ভাবে তুলে ধরেন। ঐ সম্মেলনের সাইট লাইনে তিনি ২০টিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নজিরবিহীন ৩৬০ ডিগ্রি পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সাথে ঢাকা ও নয়া দিল্লিতে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত একসাথে বৈঠক করেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের প্রধান মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে তাঁরা একযোগে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। পর্যবেক্ষকদের মতে ঢাকাইইউ সম্পর্ককে আরো গভীর করতে জোটের সম্মিলিত প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন এই বৈঠক। ২০২৫ শে জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের দ্যাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম এর বার্ষিক সম্মেলনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর অংশগ্রহণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য ছিল আরেকটি গৌরবময় অর্জন। সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদানের পাশাপাশি সাইড লাইনে ৪৭ টি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠনিক কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন প্রমুখের সাথে বৈঠক করেন। এসব প্লাটফর্মে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি, টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আমলে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত এনে বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। পর্যবেক্ষকদের মতে, ভূরাজনৈতিক বিভাজনের এই সময়ে, দাভোসে ৫০ জন রাষ্ট্রপ্রধান ও শীর্ষস্থানীয় সিইওদের সামনে ড. ইউনূসের উপস্থিতি ও বক্তব্য বাংলাদেশকে গঠনমূলক বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তিনি ‘স্টেট অফ ক্লাইমেট এন্ড ন্যাচার’ এর মত উচ্চপর্যায়ের ফোরামের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণ দেন। এছাড়াও সামাজিক উদ্যোক্তাদের শোয়াব ফাউন্ডেশনে বক্তব্য রাখেন। দাভোসে তাঁর ৩৬০ ডিগ্রি কূটনৈতিক তৎপরতা শুধু বৈশ্বিক প্লাটফর্মে বাংলাদেশের অবস্থানকেই উঁচু করেনি বরং এটি স্পষ্ট করেছে যে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন নীতিনিষ্ঠ বহুপাক্ষিকতায় কৌশলগত অংশীদারিত্বের দিকে এগোচ্ছে।

বাংলাদেশের গলার কাঁটা রোহিঙ্গা সংকটকে সামনে রেখে ড. ইউনুসের আমন্ত্রণে চলতি বছরের ১৩ থেকে ১৬ই মার্চ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফর করেন। পর্যবেক্ষকরা এই সফরকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও ৩৬০ ডিগ্রি কূটনীতির একটি শক্তিশালী স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন। কূটনীতির এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ হিসেবে ইউনূস ও গুতেরেস একসঙ্গে কক্সবাজার সফর করেন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে ইফতার করেন।

চলতি বছরের ২৮ মার্চ বেইজিং এর গ্রেট হল অফ দা পিপলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি চীনের পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং দু দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা আরো বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন। সেই ধারাবাহিকতায় সমপ্রতি ( ১ জুন ২০২৫) চীনের ১০০ কোম্পানির ২৫০ জন বিনিয়োগকারী বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তারা প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাদেরকে বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

২০২৫ সালের এপ্রিলে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি সেখানে বিমসটেক এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এক অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল গঠনের অঙ্গীকার তুলে ধরেন। ব্যাংককে সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ভারতের কাছে বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধের বিষয়টি আবার উত্থাপন করেন এবং একই সঙ্গে তিনি দুই দেশের মানুষের কল্যাণে ভারতবাংলাদেশের সম্পর্ককে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান ডক্টর ইউনূস বাংলাদেশথাইল্যান্ড বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ আরো শক্তিশালী করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন নতুন মার্কিন প্রশাসনের সাথেও বাংলাদেশ সরকারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দুই জ্যোষ্ঠ কর্মকর্তা ঢাকা সফর করেন। তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা সংকট, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, শ্রম অধিকার, তথ্যপ্রযুক্তি ও তৈরি পোশাক খাতে মার্কিন বিনিয়োগ সমপ্রসারণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন ।এ সফরের মাধ্যমে ওয়াশিংটন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে নিজেদের অব্যাহত সমর্থন ও ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসার বার্তা পৌঁছে দেন।

কাতারের আমিরের আমন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টা ৪ দিনের সরকারি সফরে দোহা যান এবং বাংলাদেশের পুনর্গঠনে কাতারের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস পান। সর্বশেষ, বাংলাদেশের বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব নতুন ভাবে সাজানোর অংশ হিসেবে গত ২৮ মে থেকে ৩১ মে ৪ দিনের সফরে তিনি জাপান সরকারের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস লাভ করেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সহ দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ঐ সফরে তিনি ৩০ তম নিক্কেই ফোরামেও অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি বেশ কয়েকজন বৈশ্বিক নেতার সাথে বৈঠক করেন। মূলত এ সফরগুলোর মাধ্যমে ড. ইউনূস আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নীতি নির্ধারণে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণের কথায় তুলে ধরেছেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থনৈতিক কূটনীতির আরেকটি বড় সাফল্য ছিল এ বছর ঢাকায় ‘বাংলাদেশ গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট সামিটের’ সফল আয়োজন। এই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও উপসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। এছাড়াও বৈশ্বিক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, পুঁজিপতি ও উন্নয়ন অর্থায়ন সংস্থার শীর্ষ নির্বাহীরাও এতে অংশ নেন।

পরিশেষে বলতে চাই, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূস এর সূচিত ৩৬০ ডিগ্রি পররাষ্ট্রনীতি আজ বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব সংযোগের এক নতুন চিত্র তৈরি করেছে। নতুন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতায় আরোহন করবে তারা কি ইউনূস সরকার সূচিত এই পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করবেন?

লেখক : অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কায়সার নিলুফার কলেজ ও প্রধান উপদেষ্টা, রাজনীতি বিজ্ঞান অনুশীলন কেন্দ্র, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে
পরবর্তী নিবন্ধসবুজ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ