অনেক মৃত্যুর পর নিরাপদ হলো সেই রেলক্রসিং

মীরসরাই ট্র্যাজেডির প্রথম বার্ষিকী আজ

মীরসরাই ও হাটহাজারী প্রতিনিধি | শনিবার , ২৯ জুলাই, ২০২৩ at ৪:৪৮ পূর্বাহ্ণ

গত বছরের এই দিনে (২৯ জুলাই) ঢাকাচট্টগ্রাম রেলরুটের মীরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া এলাকায় খৈয়াছড়া ঝর্ণা সড়কের রেল ক্রসিংয়ে একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১২ জন। ঠিক জুমার নামাজের সময় পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাস রেল লাইন পার হওয়ার সময় মহানগর প্রভাতির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন ১১ জন। পরে হাসপাতালে মারা যায় আরো একজন। তারা সকলে হাটহাজারীর ১২ নম্বর চিকনদন্ডী ইউনিয়নের আমান বাজার এলাকার যুগীর হাটের শেখ মার্কেটে অবস্থিত আর এন জে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকশিক্ষার্থী। খৈয়াছড়া ঝর্ণায় আনন্দ ভ্রমণ শেষে তারা হাটহাজারীতে নিজ এলাকায় ফিরছিলেন। নিহতরা হলেন আজিম সাব রেজিস্ট্রার বাড়ির হাজী মোহাম্মদ ইউসুফের ছেলে গাড়ি চালক গোলাম মোস্তফা নিরু (২৬), চিকনদন্ডী ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইলিয়াস ভুট্টোর ছেলে মোহাম্মদ হাসান (১৭), একই ইউনিয়নের খন্দকার পাড়ার আবদুল হামিদের ছেলে কোচিং সেন্টার শিক্ষক জিয়াউল হক সজিব (২২), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আজিজ মেম্বার বাড়ির জানে আলমের ছেলে কোচিং সেন্টার শিক্ষক ওয়াহিদুল আলম জিসান (২৩), মজিদ আব্বাস চৌধুরী বাড়ির বাদশা চৌধুরীর ছেলে কোচিং সেন্টার শিক্ষক রিদুয়ান চৌধুরী (২২), মো. পারভেজের ছেলে সাগর (১৭), একই এলাকার আবদুল অদুদ মাস্টার বাড়ির আবদুল মাবুদের ছেলে ইকবাল হোসেন মারুফ (১৭), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোজাফফর আহমদের ছেলে মোসহাব আহমেদ হিশান (১৬), আবদুল আজিজ বাড়ির মৃত পারভেজের ছেলে তাসমির হাসান (১৭), মনসুর আলমের ছেলে মো. মাহিম (১৭), মদনহাটের জনি শীলের পুত্র শান্ত শীল (১৮), ২ নম্বর ওয়ার্ডের আবু মুছা খানের বাড়ির মোতাহের হোসেনের ছেলে মোস্তফা মাসুদ রাকিব (১৯)

সেদিন গেইটম্যান একটি বার খোলা রেখে জুমার নামাজ পড়তে গেলে ও তড়িঘড়ি করে মাইক্রোবাসটি পার হতে গেলে ট্রেনের ধাক্কায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। ট্রেন মাইক্রোটিকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার। দুর্ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়া অভিযুক্ত গেটম্যানকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তদন্তে গেটম্যানের পাশাপাশি মাইক্রো চালকেরও দায় পায় কমিটি। তাদের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে আরো একজন গেটম্যানকে নিয়োগ দেয়া হয়।

বড়তাকিয়া রেল স্টেশন মাস্টার আক্তারুজ্জামান জানান, বর্তমানে উক্ত রেলগেটে তিনজন গেটম্যান দেয়া হয়েছে। ৮ ঘণ্টা করে রোস্টার ডিউটি করেন ওরা।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা কারোই কাম্য নয়। তবে এখন রেললাইনটির ব্যবস্থাপনা ভাল। একটা বড় ঘটনার পরই পরিবর্তন এলো। সবসময় এমন নিরাপদ যেন থাকে এই রুট এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

এদিকে মীরসরাই ট্র্যাজেডির এক বছর পূর্ণ হওয়ার এই দিনে নিহতদের আত্মার প্রতি গভীর সমবেদনা জানান মীরসরাইয়ের এমপি সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি।

সেদিন দুর্ঘটনা থেকে ভাগ্যক্রমে বেচে যাওয়া চিকনদন্ডী ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সবজি ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিনের ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মো. মাহিম (১৮) এর সঙ্গে গতকাল কথা হয় তার বাসায়। সে জানায়, তাদের বহনকারী গাড়িটিতে তারা মোট ১৮ জন যাত্রী ছিলেন। তারা চারজন জুনিয়র শিক্ষার্থী হওয়ায় তাদের সিট পড়ে গাড়ির একেবারে পেছনে। আর এর সুবাদেই তারা ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেচে যায়। দুর্ঘটনার পর সে ২ মাস ৯ দিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।

সেদিনের কথা স্মরণ করে মাহিম জানায়, তাদের বহনকারী হাইয়েস গাড়িটি রেল লাইনে উঠে যাওয়ার পর চট্টগ্রামগামী ট্রেনটি প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা দেয়। এই সময় সে সহ যাত্রীরা সবাই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ট্রেনের ইঞ্জিন তাদের বহনকারী গাড়িকে অনেক দূরে নিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তার আর কিছু মনে নেই। এখনো সে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না জানিয়ে তার পিতা মো. মহিউদ্দিন জানান, ছেলে বেশিক্ষণ বসে নিচু হয়ে পড়তে পারে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণিত-ইংরেজির দুর্বলতার বৃত্তে শিক্ষার্থীরা
পরবর্তী নিবন্ধআজ পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছে মাতারবাড়ীর প্রথম ইউনিট