অনেক প্রতীক্ষার জব্বারের বলী খেলা আজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ২৫ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে সকল প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জব্বারের বলী খেলা। ১৯০৯ সাল থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা জব্বারের বলী খেলায় ছেদ পড়ে ২০২০ এবং ২০২১ সালে। করোনা মহামারীর কারণে এই দুই বছর অনুষ্ঠিত হতে পারেনি দেশের অন্যতম ঐতিহ্য জব্বারের বলী খেলা। এবারের আসরটিও একরকম অন্ধকারে চলে গিয়েছিল। আয়োজক কমিটি মাঠের অভাবে এবারের আসরটি স্থগিত করেছিল। কিন্তু এই ঐতিহ্য রক্ষায় এগিয়ে এলেন সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। তার উদ্যেগে অবশেষে দুই বছর পর আবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ খেলা। শতবর্ষীয় এই বলী খেলায় কতজন যে জিরো থেকে হিরো হয়েছে আবার কতজন হিরো থেকে জিরো হয়েছে তার কোনো হিসেব নেই। দুই বছরের বন্ধ্যাত্য কাটিয়ে আজ আবার নতুন কারো জয়গান গাইবে জব্বারের বলী খেলা সেটা নিশ্চিত।

ঐতিহাসিক লালদিঘী মাঠের সংস্কার কাজ চলছে। মাঠের কাজ প্রায় শেষ হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় লালদিঘী মাঠ। তাই এবারে নিজ গৃহের বাইরে গিয়ে বলী খেলার আয়োজন করতে হচ্ছে আয়োজকদের। বলী খেলার নতুন মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে লালদিঘীর পাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে গোল চত্বরে। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় মঞ্চ নির্মাণের কাজ। লালদীঘি গোল চত্বরে ২০ ফুট দৈর্ঘের আর ২০ ফুট প্রস্তের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। লালদিঘী মাঠ ঘেষে ফুটপাতে তৈরি করা হয়েছে পুরষ্কার বিতরণী মঞ্চ। আয়োজকরা জানিয়েছে তারা পুরোপুরি প্রস্তুত। তারা আশা করছে রমজান হলেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বলীরা অংশ নেবে খেলায়।

২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত সবশেষ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কুমিল্লার শাহজালাল। ফাইনালে তিনি পরাজিত করেছিলেন চকরিয়ার তারেকুল ইসলাম জীবনকে। যদিও সেদিনের ২৩ মিনিটের ফাইনালে কেউ কাউকে হারাতে পারেনি। তবে টেকনিক এবং পয়েন্টের দিক থেকে এগিয়ে থাকায় কুমিল্লার শাহজালালকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। আজকের খেলায় এ দুজন অংশ নিচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে আয়োজকরা। গতকাল দুজনই রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তবে নতুন কেউ এসে সিংহাসন কেড়ে নেবে তেমনটি আশা আয়োজকদের। কারণ অতীতে তেমন অনেক রেকর্ড রয়েছে নতুন একজন এসে পুরানো চ্যাম্পিয়নকে কুপোকাত করেছে।

২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত জব্বারের বলী খেলার ১১০তম আসরে ১১৩ জন বলী অংশগ্রহণ করেছিল। এবারের আসরে হয়তো ততজন বলী অংশ গ্রহণ করবে না। তার কারণ অবশ্য রয়েছে। খেলাটি হবে কি হবে না তা নিয়ে ছিল দ্বন্দ্ব। অতি স্বল্প সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে খেলা। তার উপর চলছে রমজান। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অনেকটাই প্রতিকূলে। তারপরও একটি সুন্দর আয়োজন আশা করছে আয়োজকরা। আগের মতই সাড়া ফেলবে এই বীল খেলা দর্শকদের মাঝে তেমনটি আশা আয়োজকদের। জব্বারের বলী খেলায় নিজের শ্রেষ্টত্ব জাহির করতে সারা বছর নিজেদের প্রস্তুত করে তুলে বলীরা। যদিও দেশের নানা অঞ্চলে যেসব বলী খেলা হতো সেসব এখন আর দেখা যায় না। বলা যায় সবেদন নীলমনির মত জব্বারের বলী খেলা এখনো সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে আছে।

বলী খেলার ১১৩তম আসরের আয়োজনের আর্থিক পৃষ্টপোষকতাও দিচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। গত কয় বছর ধরে দেশের মোবাইল কোম্পানীগুলো জব্বারের বলী খেলার আর্থিক পৃষ্টপোষকতা করে আসছিল। এবারে পুরো দায়িত্ব নিজেই কাধে তুলে নিয়েছেন সিটি মেয়র। এরই মধ্যে প্রতিযোগিতার ট্রফি উম্মোচন করা হয়েছে। এবারের আসরের চ্যাম্পিয়ন পাবে ট্রফিসহ নগদ ২৫ হাজার টাকা। রানার্স আপ পাবে ট্রফিসহ নগদ ১৫ হাজার টাকা। তৃতীয় স্থান অর্জনকারী পাবে নগদ ৬ হাজার টাকা। আর চতুর্থ স্থান অর্জনকারী পাবে নগদ ৫ হাজার টাকা। এছাড়া প্রথম রাউন্ডে জেতা ৪০ জনকে দেওয়া হবে এক হাজার টাকা করে। সব প্রস্তুতি শেষ। আজ বসবে মাঠের লড়াই। শ্রেষ্টত্বের লড়াই। নিজেকে প্রমাণের লড়াই। আর সে লড়াইয়ে কে মুকুট পড়ে মাথায় সেটাই দেখার অপেক্ষা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাহারি পণ্যের পসরা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রস্তাবিত গণমাধ্যমকর্মী আইন পাস হলে সংবাদপত্রের বিকাশ সংকুচিত হবে : নোয়াব