অনেক এলাকায় জ্বলেনি চুলা বেকায়দায় শিল্পখাতও

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:২০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের গ্যাসের যোগান ভয়াবহ রকমে কমে গেছে। চাহিদার সাথে যোগানের ব্যবধান বাড়ার সাথে সাথে কমে যাচ্ছে গ্যাসের চাপ। শিল্প কারখানা এবং সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনের পর গতকাল সকাল থেকে নগরজুড়ে শুরু হয় হাহাকার। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় নগরীর বিস্তৃত এলাকার রান্নাঘরের চুলা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর রান্নাবান্নাও।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট ভয়াবহ রকমের প্রকট হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা লেগেছে বিশ্বের গ্যাস সেক্টরে। কমে গেছে দেশের এলএনজি আমদানি। দেশের গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহের ব্যাপারটি আমদানি নির্ভর। ফলে এলএনজি আমদানি কমে যাওয়ায় দেশে গ্যাসের যোগান কমে গেছে। অপরদিকে ঢাকাসহ সন্নিহিত অঞ্চলে গ্যাসের প্রবাহ মোটামুটি পর্যায়ে রাখতে গিয়ে কমে গেছে চট্টগ্রামে গ্যাসের যোগান। চট্টগ্রামে বর্তমানে চাহিদার অর্ধেকের চেয়ে সামান্য বেশি গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। দৈনিক ২৬০ থেকে ২৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে চট্টগ্রামে। ৪শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ২৬০-২৬৭ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের যোগান পুরো সেক্টরে তীব্র সংকট সৃষ্টি করেছে। এরমধ্যে কাফকো এবং সিইউএফএল উৎপাদন চালু রাখায় গ্যাসের একটি বড় অংশ তারা ব্যবহার করছে। এই দুইটি সার কারখানা বর্তমানে প্রতিটি ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট করে দৈনিক ৮২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করছে। এর বাইরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেয়া হচ্ছে কেবলমাত্র ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বাকি ১৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিয়ে চট্টগ্রামের শিল্প কারখানা, সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন, বাণিজ্যিক এবং আবাসিকসহ সবগুলো খাত সামাল দেয়া হচ্ছে। যা এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামে সার এবং বিদ্যুৎ ছাড়া সব শিল্প কারখানা, সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন, বাণিজ্যিক এবং আবাসিক মিলে নন বাল্ক বা আদার্স খাতে ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেয়া হতো। এই গ্যাস দিয়ে কোনরকমে জোড়াতালি দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়েছিল বিশাল এক কর্মযজ্ঞ। কিন্তু সার উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ‘আদার্স’ খাতে গ্যাসের যোগান অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে যেখানে দৈনিক ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হতো এখন সেখানে ১০০ থেকে ১১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে। চাহিদার প্রায় এক চতুর্থাংশ গ্যাস কমিয়ে দেয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গ্যাসের চাপ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় শিল্প কারখানাসহ সবগুলো খাতই বেকায়দায় পড়ে। বিশেষ করে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের
চাপ কমে যাওয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। রান্নাঘরের চুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘরে ঘরে গ্যাসের জন্য হাহাকার উঠে। হোটেল রেস্তোরায়ও চুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খাবার তৈরিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। প্রায় পুরো নগরীতেই গতকাল সকাল থেকে গ্যাসের হাহাকার শুরু হয়। বিকেল তিনটা থেকে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলো বন্ধ হলে রান্না ঘরে চুলা জ্বলতে শুরু করে। রাতের বেলা বিভিন্ন শিল্প কারখানার উৎপাদন বন্ধের পর গ্যাসের চাপ কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে।
গতকাল খুলশী আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেছেন, কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছি না। সকাল থেকে চুলা জ্বলছে না। ঘরে রান্নাবান্না বন্ধ। হোটেল থেকে খাবার আনার জন্য ফোন করে সেখানেও চুলা বন্ধের দুঃসংবাদ পেয়েছি। হালিশহর আবাসিক এলাকার একাধিক বাসিন্দা চুলা না জ্বলার কথা জানিয়েছেন।
কর্ণফুলী গ্যাসের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, গ্যাসের যোগান কমে গেছে। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ার পাশাপাশি শীতের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। শীতকালে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা ব্যাহত হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধই-পাসপোর্ট থাকলে ৩০ সেকেন্ডে হবে ইমিগ্রেশন
পরবর্তী নিবন্ধরিজার্ভের ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছি : প্রধানমন্ত্রী