তিন দিনের পুর্ণ বিশ্রাম শেষে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ দল। মহারাষ্ট্র ক্রিকেট এসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দল যখন মাঠে প্রবেশ করছিল তখন সবার চোখ খুঁজে ফিরছিল একজনকে। তিনি আর কেউ নন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আর তাকে খুঁজে ফেরার যতেষ্ট কারণও রয়েছে। তিনি যে ইনজুরিতে আছেন। চেন্নাইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাট করার সময় উরুর মাংসপেশিতে টান পড়ে সাকিবের। আর সেটি কি অবস্থায় রয়েছে তারও কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে গতকাল মাঠে তাকে বেশ হাসি খুশি এবং তরতাজা দেখা গেল। দলের ফিজিওকে সাথে নিয়ে দৌড়েছেন, স্ট্রেচিং করেছেন, বলও করেছেন। আর ফিজিও তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন।
যদিও বলা হচ্ছে তার যে ইনজুরি মাসল টাইট হয়ে যাওয়া, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় টি আর। সে টি আর গ্রেড ওয়ানে রয়েছে এরকম ইনজুরি হলে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হয়। তবে গতকাল অনুশীলন শেষে আবার সাকিবের স্ক্যান করানোর কথা। সে পরীক্ষার রিপোর্ট এলেই হয়তো জানা যাবে তিনি ভারতের বিপক্ষে খেলতে পারবেন কিনা। তবে আপাতত গতকালের অনুশীলনে তাকে বেশ প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। তিনি মাঠে প্রবেশ করলেন, সতীর্থদের সাথে খুনসুটি করলেন, উইকেট দেখলেন, নিজে নিজে কিছুক্ষণ স্ট্রেচিং করলেন, হাঁটলেন, দৌড়ালেন এবং অবশেষে ব্যাটিং করলেন। তিন দিনের বিশ্রাম শেষে বাংলাদেশে দলের অন্যান্য সদস্যদেরও বেশ প্রাণবন্ত দেখা গেছে। এমসিএ স্টেডিয়ামের বাইরে নেট প্র্যাকটিসের সুযোগ না থাকায় মাঠে মূল উইকেটের দুই পাশে দুটি করে মোট চারটি নেট প্রস্তুত করা হয় দলের অনুশীলনের জন্য। সেখানেই বাংলাদেশ দল অনুশীলন করে। দিবা–রাত্রির ম্যাচ হওয়ায় গতকাল দুপুর দুইটা থেকে অনুশীলন করে টাইগাররা। আজ করবে সন্ধ্যা ছয় টায়। ক্রিকেট দলের অনুশীলনে সচরাচর যা হয়ে থাকে সেই হালকা স্ট্রেচিং, ফুটবল খেলা তারপর ওয়ার্ম আপ। এরপর ব্যাটে, বলে আর ফিল্ডিংয়ে কঠোর অনুশীলন। গতকালও তার ব্যত্যয় হয়নি। যেহেতু চেন্নাইতে শেষ ম্যাচ খেলার তিনদিন পর মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ দল তাই অনুশীলনটা একটু কঠিনই ছিল। বিশেষ করে দলের ব্যাটিং নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছে না ম্যানেজম্যান্টসহ সবাই। তাই ব্যাটিংয়ে ছন্দ ফিরিয়ে আনতেই যেন প্রাণান্তকর চেষ্টা কোচিং স্টাফদের।
মেহেদী হাসান মিরাজকে উপরে খেলাতে গিয়ে দলের ব্যাটিং অর্ডারে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হয়েছে। তবে গতকালের অনুশীলনে আগের অর্ডারেই যেন ফিরে গেল বাংলাদেশের ব্যাটিং। সে ভাবেই নেটে ব্যাট করানো হলো ব্যাটারদের। আর ব্যাটাররাও যে নিজেদের ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে সর্বোচ্চটা দিয়ে নিজেদের ঝালাই করে নিলেন। এমসিএ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাউন্ডারি খানিকটা ছোট। তাই এই মাঠে ছক্কা মারাট নিশ্চয়ই কঠিন হওয়ার কথা নয়। আর বাংলাদেশ দলের ব্যাটাররা যেন সে চেষ্টাই করছিলেন ছক্কা অনুশীলন করে। গতকাল তিন ঘণ্টার অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। যেখানে দলের টপ অর্ডার ব্যাটারদের বেশি করে ব্যাটিং জোর দেওয়া হয়েছে। দুই ওপেনার তানজিদ তামিম এবং লিটন দাশকে দিয়ে শুরু। এরপর একে একে নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, তাওহিদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাটিং করেন। শেষের দিকের ব্যাটারদেরও পরখ করে নিয়েছেন টাইগার কোচ। তাসকিন, নাসুম, শেখ মাহেদি, শরীফুল, মোস্তাফিজদেরও ব্যাটিং করিয়েছেন কোচ লম্বা সময় নিয়ে। স্থানীয় নেট বোলারদের পাশাপাশি দলের বোলাররাও বেশ একাগ্রতার সাথে বোলিং করেছেন। বলা যায় তিন দিনের বিশ্রামের পর অনুশীলনটা যেভাবে করা দরকার ঠিক সেভাবেই করেছে টাইগারার। লক্ষ্য ভারতের বিপক্ষে ভালো কিছু করা।
তবে যার উপর সবার সবচাইতে বেশি নজর সেই সাকিব আল হাসান লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করেছেন। প্রথমে দুই নম্বর নেটে নক করেন কিছুক্ষণ। এরপর তিন নম্বর নেটে গিয়ে করেছেন স্পিনারদের বিপক্ষে ব্যাটিং। তবে সবচাইতে বেশি ব্যাটিংটা করেছেন সাকিব পেসারদের বিপক্ষে। যেটুকু সময় ব্যাটিং করেছেন টাইগার দলপতি পুরোটাই তাকে বিশেষ নজরে রেখেছিলেন দলের ফিজিও। তবে ব্যাটিংয়ে সাকিবকে বেশ স্বাচ্ছন্দ মনে হয়েছে। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই ব্যাটিং শেষ করেছেন তিনি। তবে বল করেননি সাকিব। হয়তো ব্যাটিংটা দিয়েই বুঝতে চেষ্টা করেছেন তার ইনজুরি কি অবস্থায় রয়েছে। তিন দিন বিশ্রামের পর দারুন প্রাণবন্ত অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। অনুশীলনে সবাই ছিলেন শতভাগ সিরিয়াস। বিশেষ করে ব্যাটাররা। কারণ তারা ঠিকমতো মেলে ধরতে পারছিলেন না নিজেদের। গতকালের এমন অনুশীলনের পর ম্যাচের দিন আসলে কি করে সেটাই এখন দেখার বিষয়। যেহেতু প্রতিপক্ষ দলটির নাম ভারত, কাজেই নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলতে হবে এই ম্যাচে টাইগারদের তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর সে জন্য প্রস্তুত টাইগাররা। বাংলাদেশ দল অনুশীলন শেষে মাঠ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ভারতীয় দল মাঠে প্রবেশ করে অনুশীলনের জন্য।