অনুমোদন ছাড়াই কাটা হলো হাজারো গাছ

আনোয়ারায় ৪টি খাল পুনঃখনন ও বাঁধ নির্মাণ আরো কয়েক হাজার গাছ কাটা হতে পারে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার কাটা হয়েছে : বিএডিসি বিলের পানি নামতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, অনিয়মের অভিযোগ

এম নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | রবিবার , ১৫ জুন, ২০২৫ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

কৃষি খাতের উন্নয়ন ও জনদুর্ভোগ লাঘবে আনোয়ারায় ৪টি খাল পুনঃখনন করতে গিয়ে ১৭ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ৬ হাজার গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বিলের পানি খালে নামার জন্য কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে বিশাল এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করে। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের একটি সভায় উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, দেড় কোটি টাকায় ৪টি খালের ১৭ কিলোমিটার পুনঃখনন ও বাঁধ নির্মাণ কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ১২১৩ কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের অনুমোদন এবং টেন্ডার ছাড়া এসব গাছ কাটার পাশাপাশি খাল খনন ও বাঁধ নির্মাণেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। অবশ্য বিএডিসি বলছে, তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার গাছ কাটা হয়েছে।

বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলায় ছোটবড় ২৯টি খাল রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। এর মধ্যে কোদালা খাল, শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.) খাল, বরৈযা খাল ও গোবাদিয়া খালের ১৭ কিলোমিটার অংশ দেড় কোটি টাকায় পুনঃখনন ও বাঁধ নির্মাণের টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিএডিসি। গত এক মাস ধরে এসব খালের ১২১৩ কিলোমিটার পুনঃখনন ও বাঁধ নির্মাণ করে। এতে কাটা হয়েছে ছয় হাজারের বেশি রেইনট্রি ও অন্যান্য গাছ। বাকি ৫৭ কিলোমিটার খনন করতে আরো কয়েক হাজার গাছ কাটা হবে বলে জানা গেছে। এসব খাল ৩০ ফুট চওড়া, পৌনে ৫ ফুট গভীর করে খনন করার কথা থাকলেও সরকারি সিডিউল মেনে খাল খনন করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা কেটে নেওয়া গাছের আনুমানিক মূল্য ৩০ লক্ষাধিক টাকা হবে বলে জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খালের দুই পাশের সারি সারি রেইনট্রিসহ নানা প্রকারের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, গাছগুলো বড় এবং ২০২৫ বছরের পুরনো গাছও কাটা হয়েছে। বরুমচড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কাশেম জানান, খাল খননের জন্য গাছগুলো কাটা হয়েছে।

আনোয়ারা উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) কমান্ডার আয়ুব খান রফিক জানান, বিল থেকে খালে পানি চলাচলের কোনো ব্যবস্থা না রেখে খাল পুনঃখনন ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে। এর ফলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে কৃষকের ফসল হুমকিতে পড়েছে। এ ব্যাপারে আমি উপজেলা পরিষদের একটি মিটিংয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের বরাবরে অভিযোগ উত্থাপন করেছি। স্থানীয়রা নির্বিচারের গাছ কাটার পাশাপাশি খাল খননে মাটি কাটার কাজেও নিয়ম হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এলাকাবাসী এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনোয়ারা কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, বিএডিসির খাল খনন প্রকল্পটি কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য গ্রহণ করা হলেও খালের নির্মাণাধীন বাঁধে বিলের পানি চলাচলের জন্য কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। এতে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এছাড়া পূর্ব বারখাইনে অপরিকল্পিতভাবে একটি স্ল্যুইচগেট তৈরি করা হয়েছে। এটা খাল থেকে অনেক উঁচু হওয়ায় পানি চলাচল করতে পারে না।

কাজের অনিয়ম ও গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী আজমানুর রহমান বলেন, ভূউপরিস্থ পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারায় ৪টি খালের ১৭ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন ও বাঁধ নির্মাণের মাটি কাটার কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২ থেকে ১৩ কিলোমিটার প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। আরো ৫৬ কিলোমিটার কাজ বাকি আছে। সিডিউল অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। কাজে অনিয়মের কথা সত্য নয়। তবে ৫৬ হাজার গাছ কাটা হয়নি। কাজ করতে গিয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। তিনি বলেন, খাল খননের স্বার্থে সরকারি খাস জমিতে বেড়ে ওঠা এসব গাছ স্থানীয় ভোগদখলকারীদের মাধ্যমে কাটা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপপরিচালক মোজাহিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাটি তাদের জানা নেই।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বাঁশখালীআনোয়ারা রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ বলেন, খাল খনন করার সময় যদি গাছ কাটতে হয় তাহলে বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদন অবশ্যই নিতে হবে। সরকারি খাস জমি থেকে যদি গাছ কাটা হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এসব গাছ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাটতে হবে। তবে আনোয়ারায় খাল খননের সময় গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগকে জানানো হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, বিএডিসি খাল পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় গাছ কাটার বিষয়ে জানতে পেরেছি। এসব গাছ কাটার বিষয়ে আমাদের কোনো অনুমোদন ছিল না। বিএডিসি এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। এ ব্যাপারে আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে বিএডিসি কর্মকর্তাকে অফিসে তলব করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাবা, নির্ভরতার ছায়া
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা