অনুমতি মেলেনি, চট্টগ্রামে হলো না ‘গানে গানে সংহতি’

২৩ বিশিষ্টজনের বিবৃতি

| রবিবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ছায়ানটউদীচীসহ সাংস্কৃতিক সংগঠন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, শিল্পী ও সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে ডাকা ‘গানে গানে সংহতি’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়নি। আয়োজকরা বলেছেন, নিরাপত্তার কথা বলে পুলিশ আয়োজনকে নিরুৎসাহিত করেছে। পুলিশ বলছে, অনুমতি না থাকায় অনুষ্ঠান করতে মানা করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনের প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। ‘আবহমান বাঙালি সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে’ এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয় বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। বিকাল সাড়ে ৩টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিকাল ৩টায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার কারণে গানে গানে সংহতি সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

আয়োজকদের পক্ষে সংস্কৃতিকর্মী অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য বলেন, গানে গানে সংহতি সমাবেশ ডাকা হয়েছিল সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমের উপর হামলা রোধের দাবিতে। হামলার প্রতিবাদে গান গেয়ে সংহতি জানানোর কর্মসূচি। কোনো সভা সমাবেশ বা বক্তৃতার আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। প্রচারিত দশটি গান এবং একটি বিবৃতি পাঠের মাধ্যমেই অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন পূর্বানুমতি এবং গতকাল ফরিদপুর জেলা স্কুলে সংগীত আয়োজনকে ঘিরে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সূত্র ধরে নিরাপত্তার কথা বলে আয়োজনকে নিরুৎসাহিত করে। তিনি বলেন, পরে স্থান বদলে শিল্পকলার মাঠে আয়োজন করতে চাইলেও নিরাপত্তার কথা বলে অনুষ্ঠান না করার জন্য বলে পুলিশ। ফলে আমাদের সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও কর্মসূচি করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে চকবাজার থানার ওসি বাবুল আজাদ বলেন, ওই অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকরা আগে থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। তাই তাদের অনুষ্ঠান করতে মানা করা হয়েছে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে সিটিএসবির (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) অনুমতি লাগে।

২৩ বিশিষ্টজনের বিবৃতি : অনুষ্ঠানের অনুমতি না মেলার প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ২৩ বিশিষ্টজন। বিবৃতিতে বলা হয়, সংস্কৃতি চর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথে কোনো ধরনের বাধা বা নিরাপত্তার হুমকি থাকলে তা নিরসন করাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ রীতা দত্ত, নাট্যজন শিশির দত্ত, বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, কবি কামরুল হাসান বাদল, অধ্যাপক জাহেদ আলী চৌধুরী যুবরাজ, অধ্যাপক আদনান মান্নান, অধ্যাপক অসীম দাশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মৌরি দে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটির তৌফিক সাঈদ, বাংলাদেশ রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থা চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শুভাগত চৌধুরী, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শ্রেয়সী রায়, নজরুল সংগীত শিল্পী সংস্থা চট্টগ্রামের সভাপতি দীপেন চৌধুরী, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি শারমীন হোসেন, আবৃত্তিশিল্পী রাশেদ হাসান, সোহেল আনোয়ার, ফারুক তাহের, প্রণব চৌধুরী, সেলিম রেজা সাগর, নাট্যকর্মী মবিদুর সুজাত ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য্য, বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশনের সাবেক সহসভাপতি সাইফ চৌধুরী প্রমুখ।

বিবৃতিতে বলা হয়, আবহমান বাংলা সংস্কৃতির ধারক বাহক বাউল শিল্পী, ছায়ানট, উদীচীসহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র অফিস, সাংবাদিক ও শিল্পীদের উপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। দেশে সংস্কৃতি চর্চা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বারবার। এভাবে স্বাধীন মত প্রকাশ ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করার মধ্য দিয়ে উগ্রবাদী অশুভ শক্তির উত্থানকে উৎসাহিত করা হচ্ছে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের দাবি সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে হামলায় দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে যেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমনোনয়নপত্র নিলেন জাতীয় পার্টির একাংশের শীর্ষ নেতারা
পরবর্তী নিবন্ধদলীয় পদ ছেড়ে রাশেদ ‘ধানের শীষে’, নুর লড়বেন ‘ট্রাক’ নিয়েই