অনিয়ম রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে

সড়কে নিরাপত্তাহীনতা

| মঙ্গলবার , ১২ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান বাংলাদেশে সড়কে নিরাপত্তাহীনতা অন্যতম প্রধান সমস্যা। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। হতাহত হচ্ছে। দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল, বাড়ছে পঙ্গুত্ববরণ করা মানুষের সংখ্যাও। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত কোনো এক পক্ষের কাজ নয়। সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সমন্বিত কাজের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। তাঁরা বলেন, বর্তমানে নিরাপদ সড়ক বিশ্বব্যাপী একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। তাছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর পরিণতি ও বিপুল ব্যয়ের বিষয়ে সমাজে জনসচেতনতা বাড়ছে। সড়কনিরাপত্তার উন্নয়ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মোটরযানের ব্যবহার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উভয়ই উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে ভিন্ন। এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোয় জনসংখ্যাপ্রতি মৃত্যুহার অনেক বেশি। ইইউভুক্ত দেশগুলো সঠিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে সড়কে শূন্য মৃত্যুহারের লক্ষ্য অর্জনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় মৃত্যুহার বাড়ছে। উন্নত দেশগুলোয় সড়কনিরাপত্তায় অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। ফলে উন্নত দেশগুলো সড়কনিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। উন্নত দেশের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশেও একই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়োজন সরকারের বাস্তবসম্মত ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ। সড়ক দুর্ঘটনা পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আসে। পরিবহন মালিক পক্ষের হুমকির মুখে সরকারের পিছু হটা যাবে না। অনিয়মকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনিয়ম রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, বলেন, ‘আমাদের যেটা দরকার, একটা কানেকশন তৈরি করে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারা। জাতীয় বাজেটে সড়ক পরিবহন খাতের ব্যয়ের ১৩ শতাংশ সড়ক নিরাপত্তায় ব্যয় করা জরুরি। দেশের সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোম্পানিভিত্তিক যানবাহন পরিচালনা করতে হবে। তা না হলে শৃঙ্খলা কখনোই আসবে না। দেশের গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ডাম্পিংসহ নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

ডব্লিউএইচও বলছে, শুধু ৫ শতাংশ গতি নিয়ন্ত্রণ ও পরিবীক্ষণের মাধ্যমে ৩০ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমানো সম্ভব। সিটবেল্ট বাঁধলে মৃত্যুঝুঁকি কমে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ। শিশুদের জন্য বিশেষায়িত সিটের ব্যবস্থা করলে ৫৪ থেকে ৮০ শতাংশ ঝুঁকি কমে। সঠিক মানের হেলমেট ব্যবহারে মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ এবং গুরুতর আঘাতের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমে।

বাংলাদেশ অর্থপেডিক্স সোসাইটির মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম পত্রিকান্তরে বলেন, সড়ক পরিবহন আইনে সড়কের নিরাপত্তা প্রাধান্য পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটি হয়নি। অথচ আমাদের দরকার সড়ক নিরাপত্তা আইন, যেখানে পরিবহন ও চালকদের পাশাপাশি যাত্রী ও পথচারীসহ সবার সুরক্ষার বিষয়টিকে সমানভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, সড়কে নিরাপত্তা কেউই দেখছে না। গাড়ির চালকের সিটবেল্ট থাকলেও নেই যাত্রীর, মোটরসাইকেলচালক যে হেলমেট ব্যবহার করছে, সেটিও আন্তর্জাতিক মানের কিনা তা দেখা হচ্ছে না। সঙ্গে থাকা যাত্রীর হেলমেটের অবস্থা আরও খারাপ। আবার গ্রামে লুঙ্গি পরেও মোটরসাইকেল চালানো হয়। গতিসীমাও মানা হয় না। এসব কারণে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

চারটি ধারায় জামিন অযোগ্য শাস্তির বিধান রেখে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন২০১৮। আইন পাস হওয়ার চার বছর পর ২০২২ সালে তৈরি হওয়া বিধিমালায় ১৬৭টি বিধির মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়ে বলা হয়েছে। তাও জোরালো নয়। বিধিমালা ১২৫এ গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও কীভাবে প্রয়োগ করা হবে, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। সিটবেল্টের বিষয়েও বিধিমালায় স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। সিটবেল্ট কেমন হবে, কেমন সিটবেল্টের গাড়ি আমদানি করা যাবে, তাও বলা হয়নি এতে। তাই সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখে আইনটি করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে