গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে দেশের সব জেলা ও ইউনিট কমিটির মেয়াদ এক বছর। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি এখন ৫ বছর চলছে। দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির যাত্রাটা শুরু হয়েছিল নানান বিতর্কের মধ্যদিয়ে। সেই বিতর্ক আজো পিছু ছাড়েনি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০১ সদস্যের জেলা কমিটি কেন্দ্র থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ২৭৬ সদস্যের। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেয়েছে-অছাত্র, বিবাহিত, শিবির ক্যাডার, অশিক্ষিত, নাশকতা ও চুরির মামলার আসামি, কাপড়ের দোকানদার, প্রাইমারি স্কুলের দপ্তরি, রেলের খালাসি, ব্যাংকারও। এই নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছিল-কমিটি ঘোষণার সাথে সাথে। সেই বিতর্ক থেকে আজো বের হতে পারেনি দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ।
দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, জেলা ছাত্রলীগের এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর এখনো একবারের জন্যও বর্ধিত সভা কিংবা পরিচিতি সভা করতে পারেনি। জেলা কমিটির নেতারা একে অপরকে এখনো চিনেই না। একই নামে কয়েকজন দাবিদার থাকলেও সেটিরও সুরাহা হয়নি। ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর এসএম বোরহান উদ্দিনকে সভাপতি ও আবু তাহেরকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। তারও তিন বছর পর ২০২০ সালে ৪ মার্চ ১০১ সদস্যের স্থলে ২৭৬ সদস্যের দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিয়ে কোনো বির্তক না থাকলেও কমিটিতে এমন কিছু বিতর্কিত ও অযোগ্যরা স্থান পেয়েছেন-যা পুরো কমিটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তবে কমিটির শেষ পর্যায়ে এসে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ বিভিন্ন উপজেলা ও পৌরসভায় যে সব নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে তা নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নব গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে আনীত এ সব অভিযোগ তদন্তের জন্য গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য কেন্দ্র থেকে ২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটিকে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় দপ্তর সেলে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির দুই সদস্য হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সোহাগ ও সহ সম্পাদক সোহেল রানা শান্ত। কমিটির দুই সদস্য গতকাল রাতে চট্টগ্রাম এসেছেন। তারা দুই-তিনদিন চট্টগ্রাম থাকবেন বলে আজাদীকে জানান কেন্দ্রীয় ছালীগের সহ সম্পাদক সোহেল রানা শান্ত। তিনি জানান, দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কয়েকটি ইউনিটে নতুন কমিটি গঠন নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগগুলো তদন্তে আমরা চট্টগ্রাম এসেছি। আমরা কয়েকদিন থাকবো। যে সব বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে-সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখবো। মেয়াদোত্তীর্ণ দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের ১ বছরের কমিটি এখন ৫ বছরের ব্যাপারে তিনি জানান, আমরা প্রথমে যেসব ইউনিটে অভিযোগ উঠেছে সেগুলো দেখছি। তারপর জেলা কমিটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবো।
ইতোমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির দাবি জানিয়ে সংগঠন থেকে তিন শীর্ষ নেতা স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। গত এক সপ্তাহ আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বরাবরে পাঠানো পৃথক চিঠির মাধ্যমে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের এই তিন নেতা সংগঠন থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। অব্যাহতি নেয়া ছাত্রনেতারা হলেন- চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হোছাইন মোহাম্মদ ও হামিদ হোছেন।