অনিশ্চয়তা কাটছে পাউবোর ১৬২০ কোটি টাকার প্রকল্পে

স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তির বিষয়ে পদক্ষেপ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

অনিশ্চয়তা কাটতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে নেওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১ হাজার ৬২০ কোটি টকার প্রকল্পে। ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটি নিয়ে জটিলতার অবসান হতে চলেছে। বিশেষ করে বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি গেট থেকে বিমানবন্দর ১৫ নম্বর খাল পর্যন্ত রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ সহজতর করার জন্য পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপির সভাপতিত্বে ওই ভার্চুয়াল সভায় চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপির সভাপতিত্বে ওই ভার্চুয়াল সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, বিভাগীয় কমিশনার মো. কামরুল হাসান, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক প্রকৌশলী ফজলুর রশিদ, বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমানসহ চার প্রকল্পের পরিচালকরা অংশ নেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নেভাল একাডেমি গেইট থেকে বিমানবন্দর ১৫ নম্বর খাল পর্যন্ত রিটেইরিং ওয়াল নির্মাণ, ১৫ নম্বর খাল থেকে চট্টগ্রাম ড্রাই ডক বাউন্ডারি পর্যন্ত ৪.৮৬৫ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম ড্রাই ডক বাউন্ডারি থেকে বন্দর বাউন্ডারি পর্যন্ত ৩.২০০ কিলোমিটার এবং বন্দর বাউন্ডারি থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ৪.৪০০ কিলোমিটার ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ কাজ বন্দরের আপত্তির কারণে আটকে আছে। পাশাপাশি এক হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার প্রকল্পটির আওতায় কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে পড়া ২৩টি খালে রেগুলেটর নির্মাণ, প্রতিটি ১০ কিউসেক পানি নিষ্কাশন ক্ষমতার ৬৯টি পাম্প হাউস নির্মাণ করা হবে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবারের ভার্চুয়াল সভায় এসব সমস্যা নিয়ে কথা হয় বলে জানান সভায় অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প নিয়ে বেশি আলাপ হয়েছে। বিশেষ করে পানি উন্নয়নের প্রকল্পে বন্দরের আপত্তি নিরসনের জন্য কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রিটেইনিং ওয়াল, ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তির বিষয়ে পানি উন্নন বোর্ডের সিনিয়র সচিব জানান, আগামী সপ্তাহে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইনের প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে টেকনিক্যাল টিমকে চট্টগ্রামে পাঠানো হবে। তাছাড়া বন্দর চেয়ারম্যানের বক্তব্যের আলোকে বন্দর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্প বাস্তবায়ন, জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণায়ের যৌথ অংশগ্রহণে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক আয়োজনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। দ্রুততম সময়ে ওই বৈঠকের আয়োজন এবং প্রকল্প কাজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে সভায় জানানো হয়। তাছাড়া সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগাপ্রকল্প, কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু রিং রোড প্রকল্প, চসিকের বহদ্দারহাট বারইপাড়া খাল খনন প্রকল্প নিয়ে ভার্চুয়াল সভায় আলোচনা হয়।
অন্যদিকে আউটার রিং রোডে বন্দর কর্তৃপক্ষের বে-টার্মিনালের জন্য বালি দিয়ে জমি ভরাটসহ রিটেইরিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এই রিটেইনিং ওয়ালের কারণে ওখানকার ৯টি খালের নিকাশ পথ রুদ্ধ করার বিষয়েও আলাপ হয়। এ বিষয়ে সভায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, আউটার রিং রোডে বন্দর কর্তৃপক্ষ বে-টার্মিনালের জন্য জমি ভরাট করছে। পাশাপাশি রিটেইনিং ওয়াল দিয়ে ৯ খালের পানি নিকাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া না হলে ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশনকে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হচ্ছেন নগর পিতা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিদ্যমান প্রকল্পগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে একে অপরকে দোষারোপ না করার জন্যেও মন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। মন্ত্রী বলেন, প্রকৌশলী বা নগর পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা ডিজাইন তৈরি করবেন। কিন্তু সেটি বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা অবশ্যই বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক পাউবো চট্টগ্রাম-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা দৈনিক আজাদীকে বলেন, পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি গেইট থেকে বিমানবন্দর ১৫ নম্বর খাল পর্যন্ত রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য ৩০ হাজার সিসি ব্লক তৈরি করা আছে। আপত্তির কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। এখন পাউবোর ডিজাইনের প্রধান প্রকৌশলী আসার পর বন্দর, সিডিএ, সিটি কর্পোরেশনের ডিজাইন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবেন। এরপর ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রকল্পটিতে বর্তমানে ১০ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ এবং কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ’ শীর্ষক দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিডিএ। অন্যদিকে ১ হাজার ২৫৬ কোটি টাকায় ‘বহদ্দারহাট বারইপাড়া হতে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খনন’ শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালী‌তে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এসএস‌সি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধপিবিআইয়ের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাবুলের নারাজি