প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই বৈঠকে আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে যে ফলপ্রসূ ঐকমত্য হয়েছে, তা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে দেশের মানুষের জন্য এনেছে স্বস্তির বার্তা, নতুন আশার আলো। গতকাল শুক্রবার লন্ডনে মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক পরবর্তী যৌথ ঘোষণা আসার পর ফখরুল এ বিবৃতি দেন। ওই যৌথ ঘোষণায় আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভোটের আভাস রয়েছে। এতে বলা হয়, বৈঠকে তারেক রহমান আগামী রোজার আগে ভোটের প্রস্তাব করেন। তখন মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোজা শুরুর আগের সপ্তাহেও ভোট করা যেতে পারে। খবর বিডিনিউজের।
ফখরুল বলেন, পুরো বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংযোগ ঘটিয়ে এপ্রিলের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত সময় থেকে সরে এসে নির্বাচনের জন্য একটি যৌক্তিক সময়সীমা নির্ধারণের জন্য প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। তিনি জনগণের প্রত্যাশা উপলব্ধি করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। আর ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ এই নীতিকে হৃদয়ে ধারণ করে জনাব তারেক রহমান বরাবরের মতোই প্রমাণ করেছেন, তার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা। সময়ের প্রয়োজনে দায়িত্বশীল ছাড় দিয়ে দেখিয়েছেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথযাত্রায় তিনি শুধু রাজপথের সর্বোচ্চ শক্তির নেতা নন, আলোচনার টেবিলে এবং ইতিবাচক ডায়ালগেও সমানভাবে দক্ষ ও দূরদর্শী।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের এই সৌহার্দ্য ও সহমতের মধ্য দিয়ে জয় হবে গণতন্ত্রের, জয় হবে বাংলাদেশের, জয় হবে জনগণের ইনশাআল্লাহ। এখন প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার নিজ অবস্থান অটুট রেখে আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন আয়োজনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি শুরু করবে।
বৈঠক টার্নিং পয়েন্টে পরিণত : বাংলাদেশ সময় গতকাল দুপুর ২টায় লন্ডনের পার্ক লেনে ডরচেস্টার হোটেলে বৈঠকে বসেন মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান। বৈঠক শেষে ৩টা ৪০ মিনিটে হোটেল ত্যাগ করেন তারেক রহমান। তিনি গাড়িতে ওঠার পর মোবাইলে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে, সত্যিকার অর্থেই এই বৈঠকটি একটা টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করলাম বৈঠকের পরপরেই একটা যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যে ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, আমাদের দুই নেতার বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। যে বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে প্রধান ছিল নির্বাচন ইস্যু। সেই নির্বাচন ইস্যুতে জনাব তারেক রহমানের যে প্রস্তাব, এপ্রিলে যে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা উপযুক্ত সময় নয় বিধায় তাকে পিছিয়ে নিয়ে আসা। সেক্ষেত্রে গোটা জাতি আনন্দের সাথে লক্ষ্য করল যে, প্রধান উপদেষ্টা এটাতে সম্মত হয়েছেন। তারা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে ফখরুল বলেন, এর মাধ্যমে তারেক রহমান আবার প্রমাণ করলেন, তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক যে দলগুলো রয়েছে, সেই দলগুলোর নেতৃত্ব যারা দিচ্ছেন, তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রনায়কোচিত যে গুণগুলো তার মধ্যে রয়েছে, সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে এই সভাটিতে জনাব তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানিয়ে একটা যে সেটেলমেন্ট ছিল, একটা যে অনিশ্চিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল; সেই অবস্থা থেকে কাটিয়ে তিনি এবং তারেক রহমান এই দুই নেতা আবার সামনের দিকে আশা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, চতুর্দিকে একটা অনিশ্চয়তা ছিল। অনেকে অনেক কথা বলছিলেন। আজকে দুই নেতা প্রমাণ করলেন যে, বাংলাদেশের মানুষ এখনো প্রয়োজনের সময়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে এবং নেতারা নেতৃত্ব দিতে পারেন।
গণতন্ত্রের সংগ্রামে গত দেড় দশকে জীবনদানকারী নেতাকর্মী এবং জুলাই–আগস্ট আন্দোলনে আত্মত্যাগকারীদের প্রতি তারেক রহমান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বৈঠকের পর আমাদের সাথে উনার কথা হয়েছে। উনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে তার মাতা আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন, শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র একটা দিনের ব্যাপার নয়। গণতন্ত্র হচ্ছে একটা চর্চার বিষয়। এটা একটা কালচার, সেই কালচার আমাদের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। সারাক্ষণ আমাদের মধ্যে বকাবকি, গালিগালাজ, সোশ্যাল মিডিয়াতে বকাবকি, ওমুকখানে বকাবকি না করে আসুন আমরা সবাই একসাথে একযোগে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে দেশকে পুনর্গঠনের জন্য, নতুন বাংলাদেশ গঠন করবার জন্য এগিয়ে যাই; শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বপ্ন ও আমাদের নেতা তারেক রহমানের স্বপ্ন, যে সমস্ত শহীদ প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মিডিয়া সেলের আতিকুর রহমান রুমন, শায়রুল কবির খান ও চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন নসু।