চট্টগ্রাম ওয়াসায় দীর্ঘ ১৫ বছর এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এ কে এম ফজলুল্লাহর নানা অনিয়ম–দুর্নীতি তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক। গতকাল নগরীর দামপাড়া ওয়াসা ভবনে অভিযান চালিয়ে ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে থাকা স্বজনপ্রীতি, ওয়াসার গুরুত্বপূর্ণ পদে গ্রেডেশন লিস্ট অনুসরণ ছাড়া পছন্দের কর্মকর্তাদের পদায়ন, পদোন্নতি ও অফিস নথি বিনষ্টসহ নানা অভিযোগের উপর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ থেকে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট নানা জনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রকল্পে সাবেক এই ওয়াসা এমডির ভাগিনা সরোয়ার জাহানের স্ত্রী কর্মরত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে একইদিন ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি স্যুয়ারেজ প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ বিষয়েও অভিযান চালিয়েছে দুদক।
অভিযান পরিচালনাকালে চট্টগ্রাম ওয়াসার হালিশহরস্থ উক্ত স্যুয়ারেজ প্রকল্পের নির্মাণাধীন ট্রিটমেন্ট প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। এ সময় পরিদর্শন টিমের সদস্যরা ট্রিটমেন্ট প্লান্টের দেয়ালে ক্র্যাক–ফাটল দেখতে পেয়েছেন। পরে নগরীর ওয়াসা ভবনে উপস্থিত হয়ে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের কাছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট যাবতীয় রেকর্ডপত্র ও বক্তব্য গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এ সময় ফাটলের বিষয়টি স্বীকার করে প্রকল্প পরিচালক দুদক কর্মকর্তাদের জানান, ফাটলের বিষয়টি সমাধান করতে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করছে। তাদের মতামতের আলোকে ফাটলজনিত সমস্যাটি সমাধান করা হবে।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম–১ এর সহকারী পরিচালক সাঈদ মো. ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযান শেষে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করা এ কে এম ফজলুল্লাহর আমলে চট্টগ্রাম ওয়াসায় কিছু অনিয়ম হয়েছে, এর প্রমাণও পাওয়া গেছে। এর মধ্যে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগের বিষয়টিও রয়েছে। এছাড়া ফজলুল্লাহর দায়িত্ব পালনের সময় ‘রহস্যজনক’ আগুনে ওয়াসার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পোড়ানো বা গায়েব করার অভিযোগ রয়েছে উল্লেখ করে দুদকের এ কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ করে ২০২০ সালে ওয়াসা ভবনের তৃতীয় তলায় একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি সাজানো ছিল– এমন অভিযোগ এসেছে। যেখানে অনেকগুলো নথি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গায়েব করা হয়েছে। আমরা জানতে চেয়েছি এ বিষয়ে। ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির একটি প্রতিবেদন আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে। এটি আমরা বিস্তারিত স্টাডি করব। তিনি বলেন, আমরা একেএম ফজলুল্লাহর শেষ ৬ মাসে যে নিয়োগ বা বদলিগুলো হয়েছে– এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র চেয়েছি। সেই রেকর্ডপত্র পেলে আমরা যাচাই–বাছাই করে নিয়োগ সংক্রান্ত কোনো অনিয়ম হয়েছে কি–না তা দেখব। তবে এখানকার ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ সাহেবের কাছে একটা তথ্য পেয়েছি। সেটা হচ্ছে, একটা স্যুয়ারেজ প্রকল্প ছিল। সেই প্রকল্পে সাবেক এমডি সাহেবের ভাগিনা সরোয়ার জাহানের স্ত্রী পরিচালক ছিলেন। এই প্রজেক্টের যিনি পরিচালক এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন, অভিযোগ ছিল জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে যারা জুনিয়র ছিল তাদেরকে পদন্নোতি দিয়ে ভাগ্নে বউকে প্রজেক্টের পরিচালক করা হয়েছে। আমরা সচিবের কাছে জেষ্ঠ্যতার তালিকা চেয়েছি। এটা বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে আমরা বলতে পারব জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে পদন্নোতি দেওয়া হয়েছে কি–না। দুদক কর্মকর্তা আরো বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল, হালিশহরে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেখানে নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে অনিয়ম অর্থাৎ নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে– এ ধরনের অভিযোগ ছিল। আমরা সরেজমিনে সকালে (গতকাল সকাল) ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট পরিদর্শন করে অনেকগুলো ফাটল দেখতে পেয়েছি। এই ফাটল দেখার পরে এখানে (ওয়াসা ভবন) এসেছি এবং প্রকল্প পরিচালকের সাথে কথা বলেছি। প্ল্যান্টে ফাটলের বিষয়টি তিনি অবগত আছেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, তা জানতে চেয়েছি। উনি বলেছেন, প্রকল্পের পরামর্শক ফার্মের সাথে কথা বলেছেন এবং ফাটল সীল করার জন্য যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হবে, সেগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনো রিপোর্ট পাননি। রিপোর্টে রাসায়নিক যথাযথ পাওয়া গেলে ফাটলগুলো সিল করা হবে।
প্রসঙ্গত, এ কে এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসায় ২০০৯ সালে চেয়ারম্যান হিসেবে এক বছরের জন্য যোগদান করেন। ২০১১ সালে তাকে এমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ পদে তিনি গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।