ভারতের কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়ে নিহত বাংলাদেশি তিন পর্যটকের মধ্যে রাঙামাটির গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশলের গ্রামের বাড়ি মীরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে। পিতা স্বপন কুমার নাথ সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তা ছিলেন। বাবা ও মা উমা দেবী, স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা রাণী ও দুই শিশু সন্তান আহাজারি করছিলেন। স্বজনরাও শোকাচ্ছন্ন। অনিন্দ্যের বাবা স্বপন কুমার নাথ এতই শোকগ্রস্ত যে, কান্না আর আহাজারি করছিলেন। তার সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থা ছিল না।
নিহত প্রকৌশলী অনিন্দের সহকর্মী প্রকৌশলী তৌকির হোসেন জানান, অনিন্দ্য কৌশলের বাসা চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে। এর আগে তিনি বাবার সঙ্গে নগরের বহদ্দারহাটে সরকারি কোয়ার্টারে থাকতেন। অবসরের পর পিতা মীরসরাই চলে যান। স্ত্রী প্রিয়াংকা, সাড়ে তিন বছরের কন্যা সন্তান ও ১ বছরের পুত্র সন্তানকে নিয়ে সুখের সংসার তার। এখন ওই পরিবারের শোক ও আহাজারি দেখে নির্বাক স্বজনরা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আগুনে নিহতদের শরীর এতটাই ঝলসে গেছে যে তাদের মৃতদেহের অবশিষ্টাংশের ডিএনও টেস্ট করানো ছাড়া পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব নয়। ভারতের পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতের বিদেশি আঞ্চলিক নিবন্ধন অফিসের নথি থেকে এবং হাউজবোট অপারেটরদের রক্ষণাবেক্ষণের রেকর্ড অনুসারে নিহতদের পরিচয় জানা গেছে। শ্রীনগর পুলিশ জানিয়েছে, চট্টগ্রামের তিনজন অনিন্দ্য কৌশল, ইমন দাশগুপ্ত এবং মাঈনুদ্দিন সাফিনা নামে একটি হাউজবোটে অবস্থান করছিলেন।
ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লাশ শনাক্ত করে নিহত ৩ বাংলাদেশির পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে শ্রীনগর পুলিশ জানিয়েছে।
প্রকৌশলী অনিন্দ্যের নিকটজন সূত্রে জানা গেছে, এখন পরিবারের কারোর সেখানে যাওয়ার পর ডিএনএ টেস্ট হবে। এরপর নিহতের মৃতদেহ দেশে আনতে পারবেন। এজন্য কতদিন সময় লাগতে পারে তা কেউ বলতে পারছেন না।
রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগের প্রথম শ্রেণীর ঠিকাদার ও মেসার্স অনুপম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী অনুপম বড়ুয়া শংকর জানান, ৯ নভেম্বর তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সাইনাসের সমস্যার কারণে তিনি ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছেন। ১ নভেম্বর থেকে ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে অফিস করার কথা ছিল।
জানা গেছে, অনিন্দ্য কৌশল ৩০তম বিসিএসে (প্রকৌশল) চাকরিতে নিয়োগ পান। ২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি রাঙামাটি গণপূর্ত বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। রাঙামাটিতে তার চাকরি জীবনের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে।
বিডিনিউজ সূত্রে জানা যায়, মাঈনুদ্দিনের নিকটাত্মীয় নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, গত ৩ নভেম্বর তারা তিনজনই চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তারা কাশ্মীরে বেড়াতে যান। এর মধ্যে শনিবার দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়।









