অনলাইন কেনাকাটা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

সৈয়দা আইরিন পারভিন | বুধবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২১ at ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বেশ কয়েক বছর ধরেই অনলাইন কেনাকাটার সঙ্গেই অভ্যস্ত মানুষ। তবে ২০২০ যেন অনলাইন ব্যবসার জন্য আশীর্বাদ। করোনার প্রভাবে বছরের শুরুর দিকে মানুষ যখন ঘরে ঢুকে গেল, তখনই জমজমাট হতে শুরু করে অনলাইন ব্যবসা। তবে এভাবে কেনাকাটা করতে গিয়ে অনেকে আবার বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। তাই অনলাইন কেনাকাটায় কিছু বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। প্রযুক্তির ভাষায় অনলাইনে এই বেচাকেনার বাণিজ্যটাকে বলা হয় ই-কমার্স (ইলেকট্রনিক কমার্স)। অনলাইনে বেচাকেনা ফেসবুক পেজের মাধ্যমেও হয়ে থাকে। সেটি এফ-কমার্স নামে পরিচিত। নাম যা-ই হোক, অনলাইন কেনাকাটায় সচেতন না হলে ঠকে যাওয়ার কিংবা প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোন অনলাইন বিক্রেতা এক পণ্যের কথা বলে যদি অন্য পণ্য সরবরাহ করে কিংবা যদি কোনো পণ্যের মান ঠিক না থাকে, তবে কেনার রশিদ, প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগ করার নিয়ম, ফরম, ঠিকানা, ই-মেইল ও ফোন নাম্বার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে এবং ইমেইলে অভিযোগ করতে পারেন।
বর্তমান সময়ে ফেসবুকে চোখ রাখলেই দেখা যায় শত শত অনলাইন পেইজ। এই সমস্ত অনলাইন পেইজে অনেকে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবসা করেন অনেকে হয়তো বা অন্যের ব্যবসার প্রসারতা বাড়ান লাইভ প্রোগ্রাম করে। যারা এই ধরনের লাইভ অনুষ্ঠানগুলো করেন তারা টাকার বিনিময় বিভিন্ন পণ্যের চটকদার বুলি আওড়িয়ে দর্শকদের নজর কাড়েন।
তারা যখনই যেই পণ্যের লাইভ অনুষ্ঠান করেন তখনই সেটা ১০০% অথেন্টিক, ওয়াও এই ধরনের বিশেষণ আওড়িয়ে গ্রাহকদেরকে মোহগ্রস্ত করে তুলে। আর যারা এই প্রতারণার ফাঁদে পা দেয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিগত ১০ মাসের এই বৈশ্বিক মহামারীতে অধিকাংশ মানুষই অনলাইনের ফাঁদে কমবেশি পড়েছে।
মানুষ খুব সমস্যায় না পড়লে আমার মনে হয় অনলাইনে কোন কেনাকাটা না করাই উত্তম বিশেষত আমার এই দেশে। যে দেশের মানুষ স্বচক্ষে কিনলে বারোটা কমলার মধ্যে চারটা নষ্ট থাকে, ওজনে কম থাকে, সেই দেশে আমরা কিভাবে ভাবতে পারি অনলাইন কেনাকাটা? তবে এই বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে অনেকে এখন অনলাইনে বাজার করার দিকে ঝুঁকছেন, বিশেষ করে যাদের কম্পিউটার বা স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ আছে। কারণ অনলাইনে কেনাকাটায় ঘরের বাইরে বেরোনোর প্রয়োজন নেই, অপরিচিত মানুষের সাথে মেলামেশা শরীর ছোঁয়াছুঁয়ির আশঙ্কাও এড়ানো যায়। তদুপরি বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই অনলাইন বাজারে অনেক দিন থেকেই অভ্যস্ত, তাদের কাছে আমাজান, ইবে এগুলো অতি পরিচিত নাম।
বিশ্লেষকরা বলছেন যে সব দেশে অনলাইনে কেনাকাটার প্রচলন বেশি, সেই সব দেশে ইন্টারনেটে খুচরা ব্যবসার মোট পরিমাণ ৪ ট্রিলিয়ন যেতে পারে বলে তাদের ধারণা। বিশ্লেষকরা আরো ধারণা করছে পৃথিবীর অনেক দেশে যেখানে অনলাইনের বাজার প্রসারিত হচ্ছে সেসব দেশে ২০২২ এর মধ্যে সার্বিক খুচরা ব্যবসার পাঁচ ভাগের এক ভাগ কেনাকাটা হবে অনলাইনে। “আসলে খদ্দেররাই এ ধরনের বাজারের সম্ভাবনাকে লুফে নিয়েছে। তাদের কারণেই অনলাইনে কেনাকাটা একটা সম্ভাবনাময় ব্যবসা হয়ে উঠেছে” অনলাইনে কেনাকাটা করার সময় বেশিরভাগ দেখা যায় ক্রেতা জিনিসটার রিভিউ দেখেন । অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে যে সমস্ত দিকগুলো বিবেচনায় আনা উচিত:
আপনি যেখান থেকে পণ্য কিনতে যাচ্ছেন, খেয়াল রাখতে হবে, তা নির্ভরযোগ্য কোনো পেইজ বা সাইট কিনা। প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা যাচাই করা। অগ্রিম টাকা পরিশোধ করার বদলে ক্যাশ অন ডেলিভারি (পণ্য পাওয়ার সময় মূল্য পরিশোধ) পদ্ধতি অনুসরণ করা ভালো। পণ্য পাঠানোর সুবিধা আছে কিনা তাও নিশ্চিত হতে হবে। স্বাভাবিকের চেয়ে খুব কম মূল্যে কোন পণ্য অফার করলে তা এড়িয়ে চলাই ভালো। এরূপ ক্ষেত্রে বেশিরভাগই প্রতারণামূলক হয়ে থাকে। আবার দেখা যায় একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি। আর ফ্রি যেটা দেওয়া হয় তা খুবই মানহীন সেটাও খেয়াল রাখা উচিত গ্রাহকদের। তার পরেও বলব দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে যখন অনেকের চাকরি চলে যায় বিশেষত মে মাসের দিকে তখন অনেকেই অনলাইন ব্যবসা করে টিকে ছিল। আমার এক পরিচিত ছেলেটি মাস্টার্স করা একটা বেসরকারি কোম্পানিতে প্রবেশনারি হিসেবে কাজ করছিল। করোনা চলাকালীন তার চাকরি স্থায়ী হয় না। তখন সে ভীষণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে কিভাবে চলবে তার পরিবার এই ভেবে। সেই সময় আমি আমার মেজ ভাই থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ধার দেই কাপড়ের ব্যবসা করার জন্য। অতঃপর আমার পরিচিত ঢাকার ইসলামপুর থেকে অনলাইনে যোগাযোগ করে সেলোয়ার কামিজের ব্যবসা শুরু করেন। সাধারণ সুতি সালোয়ার কামিজে কিছুটা নতুনত্ব এনে আমি তাকে ডিজাইন করার উপদেশ দেই। যেমন ওড়নার সাথে টারসেল লাগানো, তারপর কাঠের বোতাম লাগানো, জামার সামনে একটু লেইস লাগিয়ে কিছুটা হাতের কাজ করা ইত্যাদি। আনা-নেওয়ার খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি জামায় তার সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা লাভ থাকে। বিগত আট মাসে তার ব্যাপক লাভ হয়, সে এখন ভাবছে হয়ত আর চাকরি করবে না সে ব্যবসাই করবে। আমি তাকে সব সময়ই বলেছি পরিশ্রম ও সততা নিয়ে কাজ করলে তুমি অবশ্যই এগোবে।
পরিশেষে বলতে হয় কেনাকাটা করতে কার না ভালো লাগে? আর এই কেনাকাটা যদি হয় ঘরে বসে তাহলে তো কোন কথাই নেয়। বর্তমানে শত ব্যস্ততার মাঝে জ্যাম ঠেলে শপিংমলে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটার সময় আমরা এখন অনেকেই পাই না। সেই ক্ষেত্রে অনলাইন শপিং হচ্ছে খুবই সুবিধাজনক। অনেক কম সময়ে আমরা অনেক জিনিস খুঁজে দেখতে পারব এবং কেনাকাটা করতে পারব। আজ সারা পৃথিবীতে অনলাইন শপিং খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও অনলাইন শপিং দিনে দিনে অনেক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
লেখক : প্রাবন্ধিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধজামদানি নিয়ে আমার স্বপ্ন
পরবর্তী নিবন্ধশ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে