বাংলাদেশে অনলাইনে প্রতারণা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আধুনিক বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ডিজিটাল প্রযুক্তি যেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, তেমনি তার ব্যবহার নিয়ে অনেকে এখনো স্বচ্ছন্দ হতে পারছেন না কিছু কিছু ঘটনার কারণে। এই কিছু কিছু ঘটনার একটি হলো অনলাইনে প্রতারণা। এই প্রযুক্তি সমপ্রসারণের কারণে মানুষের জীবনযাত্রায়ও যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মাত্রা। আর এই সুযোগে অনলাইনে প্রতারণার পরিমাণও বাড়ছে। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা।
এমনই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকান্তরে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, অনলাইনে পার্টটাইম চাকরি ও অ্যাপসে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে চীনা নাগরিকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। তাদের কাছ থেকে ১১টি মোবাইল ফোন, ২৫৯টি সিম কার্ড, একটি ল্যাপটপ, সাতটি এটিএম কার্ড ও একটি চায়না পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।
এ ধরনের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও অনেক ঘটনা ঘটেছে।
আজাদীতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হরহামেশাই শোনা যায় ফেসবুক কিংবা কোনো গ্রুপের পেজে যে পণ্য অর্ডার দেওয়া হয়েছিলো হঠাৎই আগাম অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। আবার অনেক সময় অনলাইনে যে মানের পণ্য অর্ডার দেওয়া হয়েছিলো তা হাতে পাওয়ার পর ক্রেতার চোখ একেবারেই চড়কগাছ! অনেক ক্রেতা অভিযোগ করছেন ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত ছবির সঙ্গে পণ্যের মিল নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যথাযথ তদারকি না থাকায় এমন প্রতারণার সুযোগ নিচ্ছে কিছু ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান।
আসলে আসল পণ্যের মোড়কে নকল পণ্য সরবরাহ, কখনোবা পরিমাণে কম দেওয়া, আবার কখনো আগাম অর্থ নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া–এসব অসাধু চক্রের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে দেশের ই–কমার্সের ওপর। ফলে স্বস্তি ও আস্থার জায়গা হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে অনলাইন মার্কেটিং। অসাধু চক্রের হাতে ই–কমার্স খাত জিম্মি হয়ে পড়ায় আস্থা হারাচ্ছে বহু সৎ উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হাজারও উদ্যোক্তার কর্মস্থল ও জনসাধারণের আস্থা ও স্বস্তির জায়গা অনলাইন মার্কেটিংয়ে প্রতারণা রোধ করে একে নিরাপদ রাখতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার আইনের প্রচার–প্রচারণা বাড়াতে হবে। সাইবার জগতেও বাড়াতে হবে নজরদারি। পাশাপাশি ই–কমার্স খাতে প্রণয়ন করতে হবে নতুন নীতিমালা ও আইন এবং এর সুষ্ঠু প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে এ খাতের নিরাপত্তা।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের দেশে এ খাতে মূলত যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, তা হলো : ই–কমার্স সহায়ক উপযুক্ত জাতীয় নীতিমালা না থাকা, আর্থিক লেনদেনের নিরাপত্তা, আস্থাশীল ই–কমার্স পরিবেশের অভাব। বর্তমানে যা বিদ্যমান আছে তাতে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না। আপনি অনলাইনে প্রতারিত হলে সংশ্লিষ্ট সাইট বা গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগটি লিখিত আকারে ক্রয়ের রশিদসহ যাবতীয় তথ্য সংযুক্ত করে ভোক্তা অধিকার কার্যালয়ে ফ্যাক্স বা ই–মেইলে দিতে হবে। এতে কতটুকু কাজ হয় জানা নেই। তবে অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণা এড়াতে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। যেমন কম দামে লোভনীয় অফারের ব্যাপারগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা। অগ্রিম টাকা দিয়ে না কিনে, পাওয়ার পর জিনিস পছন্দ হলে ক্যাশ অন ডেলিভারিতে পণ্য গ্রহণ। ফেসবুকে কেনাকাটার পেজ গুলোর কাস্টমারের রিভিউ দেখে কেনা। এক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য বড় প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ বা গ্রুপে পণ্য কেনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।’
সম্প্রতি গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানির কারণে ই–কমার্সের ওপর মানুষের আস্থা কমেছে, তা অস্বীকার করা যাবে না, তবে দু–একটা কোম্পানির জন্য পুরো ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হোক, সেটা আমরা চাই না। প্রযুক্তির ইতিবাচক দিক ব্যর্থ হোক, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটা নীতিমালা সহসা তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সমস্ত ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনায় এনে কাজ করতে হবে। কেননা প্রযুক্তির এ সময়ে ই–কমার্সের কোনো বিকল্প নেই। সামনের দিনগুলোতে সব ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান নীতিমালা মেনে চলবে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করবে–এমনটা আশা করি আমরা।