অনলাইন জুয়ার কারবারি সেলিম প্রধানের নামে থাইল্যান্ডে সাতটি কোম্পানি থাকার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া তার নামে যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে চারটি ব্যাংকে ‘কয়েক কোটি’ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার তদন্তে এসব তথ্য পাওয়া যায় জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে সেলিম প্রধানের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। তার অর্ধশত ব্যাংক হিসাবও ফ্রিজ করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
দুদক কমিশনার বলেন, থাইল্যান্ডে সেলিম প্রধানের মালিকানাধীন প্রধান গ্লোবাল ট্রেডিং, এশিয়া ইউনাইটেড এন্টারটেইনমেন্ট, তমা হোম পাতায়া কোম্পানি লিমিটেডসহ সাতটি কোম্পানির সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া সেলিম প্রধানের নামে ব্যাংকক ব্যাংক ও সায়েম কমার্শিয়াল ব্যাংকে ২০ কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জেপি মর্গান ব্যাংকে সেলিম প্রধানের দুটি ব্যাংক হিসেবে আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান দুদক কমিশনার মোজাম্মেল। তিনি বলেন, সেলিম প্রধান লাস ভেগাসে ক্যাসিনো খেলতেন এবং কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ক্যাসিনো চিপ লাস ভেগাস থেকে ক্রয় করেছিলেন এমন তথ্য দুদকের হাতে রয়েছে। একটি হিসেবে সেলিম প্রধান ৬১ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করেছেন, তবে তা কোথায় পাচার করেছেন তার উৎস সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই টাকা থাইল্যান্ডে পাচারের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সেলিম প্রধান মোট কত টাকা দেশ থেকে পাচার করেছেন তা তদন্ত শেষ না হওয়ার আগে বলা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, টাকার উৎস এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ক্যাসিনো ব্যবসা এসব টাকার উৎস হতে পারে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ‘শিগগিরই’ কমিশনে জমা দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন কমিশনার মোজাম্মেল হক খান। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে এমএলআরএসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এর আগে গত ১০ সেপ্টেম্বর সেলিম প্রধানের নামে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন দুদকের উপ-পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান।
অবৈধ কারবারের মাধ্যমে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ২৭ অক্টোবর সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এরপরই তাকে সাত দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ঢাকায় ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেলিম প্রধানকে আটক করে র্যাব। এরপর তার গুলশান, বনানীর বাসা ও অফিসে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ২৯ লাখ টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও বিভিন্ন দেশের মুদ্রা জব্দ করা হয়। সেখান থেকে সাতটি ল্যাপটপ ও দুটি হরিণের চামড়া জব্দ করার পাশাপাশি সেলিমের কর্মচারী আক্তারুজ্জামান ও রোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়। হরিণের চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় ওই দিনই সেলিম প্রধানকে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরদিন গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ আইনে দুটি মামলা করে র্যাব।
সেলিম প্রধান ‘প্রধান গ্রুপ’ নামে একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান। এই গ্রুপের অধীনে পি২৪ গেইমিং নামের একটি কোম্পানি আছে, যারা রীতিমত ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়ে ক্যাসিনো ও অনলাইন ক্যাসিনোর কারবার চালিয়ে আসছিল।