অনলাইনে কিডনি বেচাকেনা : দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

| শুক্রবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৪৭ পূর্বাহ্ণ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহার করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে কিডনি বেচাকেনায় সক্রিয়। দেশ থেকে ডোনার সংগ্রহ করে ভারতে পাঠায় তারা। চক্রের সদস্যদের কেউ ‘কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন’ এমন বিত্তশালী রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে, কেউ প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে অর্থের বিনিময়ে কিডনি বিক্রিতে প্রলুব্ধ করে। গত ১৩ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে ‘ফেসবুক যোগাযোগে কিডনি বেচাকেনা, অপরাধ নেটওয়ার্ক ফাঁস, গ্রেপ্তার ৫’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের বক্তব্য ছাপা হয়েছে। তিনি বলেন, এই চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন প্রয়োজন এমন বিত্তশালীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং কিডনি জোগাড় করা সম্ভব বলে আশ্বস্ত করে। পরে তারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব ও অভাবী মানুষদের চিহ্নিত করে অর্থের লোভ দেখিয়ে কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনে প্রলুব্ধ করে। এই চক্রের ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য রয়েছে এবং তারা তিন ভাগ হয়ে কাজ করে। প্রথম গ্রুপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাদের কিডনি প্রয়োজন তাদের সাথে যোগাযোগ করে। পরের সদস্যরা পূর্বের গ্রুপের চাহিদা অনুযায়ী গরিব-অভাবী মানুষকে খুঁজে বের করে এবং শেষ ধাপে থাকা গ্রুপটি দ্বিতীয় গ্রপের সংগ্রহ করা কিডনি ডোনারদের যাবতীয় পরীক্ষা করে পার্শ্ববর্তী দেশে বৈধ/অবৈধভাবে নিয়ে যায়। তিনি জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা কিডনিদাতাদের পাসপোর্ট, মেডিকেল ভিসা এবং অন্যান্য কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করে। এ কাজে তারা জনপ্রতি ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়। যাদের কিডনি প্রয়োজন তাদের কাছ থেকে অবস্থা ভেদে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে পরে কিডনিদাতাকে কখনো দুই লাখ বা এক লাখ টাকা দিয়ে থাকে। চক্রটি দাতা এবং গ্রহীতার মধ্যে নিকটাত্মীয় বানানোর সকল ধরনের জাল কাগজপত্র তৈরি করে থাকে, যেন কোথাও কোনো সমস্যা না হয়।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, প্রায় ১৫ বছর আগে জয়পুরহাটের কালাইয়ে প্রথম কিডনি বিক্রির ঘটনা ফাঁস হয়। এর পর ‘মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ২০১৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ আইনের বিভিন্ন ধারা-উপধারায় সরকার নির্ধারিত ফরমে অনুমতি গ্রহণ ও আত্মীয়তা সম্পর্ক যাচাইয়ের জন্য যাচাই কমিটি এবং দাতা-গ্রহীতার জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্ট্যাম্পে প্রদত্ত হলফনামা, স্থানীয় সরকারের প্রত্যয়নপত্র, নোটারি পাবলিক ছাড়াও মা-বাবার ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট, স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে কাবিননামা ইত্যাদি প্রদর্শনের কথা বলা হয়েছে। নিকটাত্মীয়রা সহজে কিডনি দান করছেন না। তারা ঝুঁকির বিষয়ে নিঃসন্দেহ নন। এ কারণে আইনের উদ্দেশ্য পূরণের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা থাকছেই। খোঁজ নিলে হয়তো জানবেন, দানকারীরা হরহামেশা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। পাঁচ লাখ টাকা পাওয়ার আশায় কিডনি দিয়ে হাতে সামান্য টাকাই পেয়েছেন- এমন ঘটনাও ঘটেছে। দালালচক্র আইনকে পাশ কাটিয়ে দেশের বাইরে, বিশেষ করে ভারত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালে কিডনি স্থানান্তরের ব্যবস্থা করছে।
আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত শাহরিয়ার ইমরান পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থানরত কিডনি ক্রয়-বিক্রয় চক্রের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতায় একটি দালাল চক্র প্রতিষ্ঠা করে। অনলাইনের মাধ্যমে বিত্তশালী কিডনি রোগী এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে কিডনি ডোনার সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করত সে। ইমরান ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসা সেবা’ এবং ‘কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা’ নামক দুটি পেজের এডমিন। এ পর্যন্ত কিডনি বিক্রয়ের জন্য শতাধিক মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করেছে সে। চক্রের অন্যতম সদস্য আব্দুল মান্নান মূলত কিডনি ডোনারদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এই অনৈতিক কাজে প্রলুব্ধ করে। ইতোপূর্বেও এই অপরাধের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সে গ্রেফতার হয়। তার বিরুদ্ধে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ৬টির বেশি মামলাও রয়েছে।
আমাদের দেশে এখনো মানুষ মানুষের বিপদে আপদে ছুটে যান, এখনো মানবিক আহ্বানে সাড়া দেন। তাই মানবিক কারণে কেউ যদি কাউকে অঙ্গ দান করেন, তাহলে তা দোষের হতে পারে না। কিন্তু যারা অবৈধ প্রক্রিয়ায় কিডনি বেচাকেনা করে এবং ফাঁদ পাতে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তাদের আইনের আওতায় এনে অবশ্যই শাস্তি প্রদান করা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বসাদা ছড়ি দিবস