করোনা মহামারীতে যখন অনেক দপ্তরের কাজ অনলাইনে সারা হচ্ছে, তখন অনলাইনে আয়কর বিবরণী জমা দেওয়ার চালু থাকা সুযোগটি বন্ধ হয়ে গেল। গত তিন বছর অনেক করদাতা অনলাইনে তাদের আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিলেও এবার তাদের তা সনাতন পদ্ধতিতেই জমা দিতে হবে।
নভেম্বর মাস আয়কর জমা দেওয়ার শেষ সময় হওয়ায় অনেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনলাইনে রিটার্ন জমার লিংকটি খোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। বুধবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সদস্য হাফিজ আহমেদ মুর্শেদ বিডিনিউজ বলেন, ভিয়েতনামের এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম করপোরেশন নামের একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার সফটওয়্যারটি তৈরি করেছিল। কিন্তু তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় অনলাইনে রিটার্ন জমার লিংকটি বন্ধ রয়েছে। তাই করদাতারা রিটার্ন দিতে পারছেন না। করদাতারা আবার কবে এই সুযোগটি পাবেন, তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না এনবিআর কর্মকর্তারা। খবর বিডিনিউজের।
মুর্শেদ বলেন, ইতোমধ্যে ভিয়েতনামের ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করার চিন্তাভাবনা চলছে। নতুন করে চুক্তি না হলে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে চলতি মৌসুমের বাকি দুই মাসেরও কম সময়ে (অক্টোবর ও নভেম্বর) এ লিংক আবার চালু হওয়ার সম্ভাবনা ‘খুবই কম’ বলে জানান তিনি।
আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, প্রতিবছর আয়কর বিবরণী জমা দেওয়া শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। গত কয়েক বছরে আয়কর দিতে নাগরিকদের সাড়া দেখে আয়কর বিবরণী আরও সহজ করতে কয়েক বছর আগে অনলাইনে তা নেওয়া শুরু করে এনবিআর। এজন্য ৫১ কোটি টাকা খরচ করে একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন করা হয়।
অনলাইনে রিটার্ন জমায় করদাতাদের আগ্রহ বাড়াতে এনবিআর থেকে নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়েছিল। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে প্রথমবার অনলাইনে রিটার্ন জমা দিলে ২ হাজার টাকা করছাড় প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে করছাড়ের সেই সুযোগ নিতে পারছেন না করদাতারা। বাজেটের ঘোষণা এবার ভেস্তে গেল। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজের রিটার্ন জমা দিয়ে অনলাইন জমা নেওয়া উদ্বোধন করেছিলেন।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, ওই বছর তেমন একটা আয়কর বিবরণী অনলাইনে জমা পড়েনি। পরের তিন বছরও (২০১৭-১৮, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছর) তেমন সাড়া দেখা যায়নি। প্রতিবছর গড়ে ২২ থেকে ২৩ লাখ করদাতা আয়কর বিবরণী জমা দেন। সে হিসাবে অনলাইনে জমা ১ শতাংশের কম। মহামারীর কারণে এবার আয়কর মেলাও করতে পারছে না এনবিআর। তারমধ্যে অনলাইনে রিটার্ন জমার সুযোগও বন্ধ হয়ে গেল।