আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে কলেজের একাদশে ভর্তিতে অনলাইনে আবেদন শুরু হবে। চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিতদের ফল প্রকাশ করা হবে ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮ টায়। ২য় ও ৩য় পর্যায়ের ফল প্রকাশের পর ২২ থেকে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। ভর্তি কার্যক্রম শেষে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কলেজগুলোতে ক্লাস শুরু হবে।
এই সময়সূচিতে একাদশে ভর্তি কার্যক্রম সম্পাদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে। গতকাল মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে একাদশে ভর্তি কার্যক্রমের সম্ভাব্য সময়–সূচিসহ খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি। আলোচনা–পর্যালোচনা শেষে খসড়ায় উল্লিখিত সময়–সূচি অনুযায়ী একাদশের ভর্তি কার্যক্রম সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অংশ নেয়া চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দিপু মনি বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক, মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমদ এবং চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতারসহ দেশের সবকয়টি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বৈঠকে অংশ নেন।
খসড়ায় উল্লিখিত সময়সূচি অনুযায়ী একাদশ শ্রেণির ভর্তি কার্যক্রম পরিচালিত হবে জানিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার আজাদীকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সময়সূচিতে কোন ধরনের পরিবর্তন আনা হয়নি। সে হিসেবে খসড়ায় উল্লিখিত সময়সূচি অনুসারেই
ভর্তি কার্যক্রম সম্পাদন হবে। তবে নীতিমালার অন্যান্য কয়েকটি পয়েন্টে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
তবে বিজ্ঞপ্তি আকারে জারি না হওয়া পর্যন্ত এটিকে খসড়া হিসেবেই বলছেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর এটিএম মোয়াজ্জেম হোসাইন। তিনিও মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে অংশ নেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এই কর্মকর্তা গতকাল রাতে আজাদীকে বলেন, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী রোববার বা সোমবারের দিকে কলেজ ভর্তি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে। এর আগে অনেক কিছুতে পরিবর্তনও আসতে পারে। তাই বিজ্ঞপ্তি জারির আগ পর্যন্ত এটি খসড়া হিসেবেই আমরা দেখছি।
খসড়া নীতিমালার তথ্য অনুযায়ী, ৮ ডিসেম্বর থেকে একাদশে ভর্তিতে অনলাইন আবেদন শুরু হয়ে চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষণে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদেরও একই সময়ে (৮ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর) আবেদন করতে হবে।
গতবারের মতো এবারও কেবল অনলাইনেই (ওয়েবসাইটের মাধ্যমে) আবেদন করা যাবে। একাদশে ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট (www.xiclassadmission.gov.bd ) –এ আবেদন করতে হবে শিক্ষার্থীদের। অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ম ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করা যাবে। আবেদন ফি বাবদ ১৫০ টাকা দিতে হবে প্রতি শিক্ষার্থীকে। টেলিটক এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ ফি পরিশোধ করতে হবে।
কেবল পুনঃনিরীক্ষায় ফল পরিবর্তন হওয়া শিক্ষার্থীরা ২৬ ডিসেম্বর নতুন করে আবেদনের সুযোগ পাবে। আর ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদনে পছন্দক্রম পরিবর্তনের সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। যাচাই–বাছাই শেষে ৩১ ডিসেম্বর রাত ৮টায় প্রথম দফায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১ থেকে ৮ জানুয়ারি নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে। এই সময়ে ভর্তি নিশ্চায়ন না করলে মনোনয়ন ও আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ওই (মনোনয়ন ও আবেদন বাতিল হওয়া) শিক্ষার্থীকে পুনরায় ফি দিয়ে ২য় পর্যায়ে নতুন করে আবেদন করতে হবে।
প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিতদের ভর্তি নিশ্চায়ন শেষে ৯ থেকে ১০ জানুয়ারি রাত ৮টা পর্যন্ত ২য় পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ করা হবে। ২য় পর্যায়ের আবেদন গ্রহণ শেষে ১২ জানুয়ারি রাত ৮টায় প্রথম পর্যায়ের মাইগ্রেশনের ফল ও ২য় পর্যায়ে মনোনীতদের ফল প্রকাশ করা হবে।
২য় পর্যায়ে মনোনীতদের ১৩ থেকে ১৪ জানুয়ারি রাত ৮টার মধ্যে ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে। এই সময়ে ভর্তি নিশ্চায়ন না করলে মনোনয়ন ও আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ওই (মনোনয়ন ও আবেদন বাতিল হওয়া) শিক্ষার্থীকে পুনরায় ফি দিয়ে ৩য় পর্যায়ে নতুন করে আবেদন করতে হবে। ১৬ জানুয়ারি একদিন ৩য় পর্যায়ে আবেদন করা যাবে।
আবেদন গ্রহণ শেষে ১৮ জানুয়ারি রাত ৮টায় ২য় পর্যায়ের মাইগ্রেশনের ফল ও ৩য় পর্যায়ে মনোনীতদের ফল প্রকাশ করা হবে। ৩য় পর্যায়ে মনোনীতদের ১৯ থেকে ২০ জানুয়ারির মধ্যে ভর্তি নিশ্চায়ন করতে হবে। এই সময়ে ভর্তি নিশ্চায়ন না করলে মনোনয়ন ও আবেদন বাতিল হয়ে যাবে। চূড়ান্ত ভাবে মনোনীত শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম চলবে ২২ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। ভর্তি কার্যক্রম শেষে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে একাদশে ক্লাস শুরু হবে।
একাদশে ভর্তিতে আবেদনের সময়–সিডিউল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, নির্দেশিকা ও ফি প্রদানের পদ্ধতি ভর্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট (www.xiclassadmission.gov.bd ) –এর বাম পাশে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক। বিজ্ঞপ্তি আকারে জারি হওয়ার পর আগামী সপ্তাহে এসব তথ্য ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
আবেদনের ক্ষেত্রে যা বিবেচনায় নিতে হবে : আবেদনের ক্ষেত্রে কলেজের পড়ালেখার মান–পরিবেশ, বাসা থেকে দূরত্ব এবং মাসিক বেতনসহ যাবতীয় খরচের বিষয়টি যাচাই–বাছাই করে কলেজের পছন্দক্রম ঠিক করার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক। দোকানের কম্পিউটার অপাটেরদের ইচ্ছে অনুযায়ী কলেজের পছন্দক্রম না দিতেও শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও কোটার স্বপক্ষে যথাযথ কাগজপত্র থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলেই কেবল কোটায় আবেদন করার পরামর্শ দিয়ে কলেজ পরিদর্শক বলেন– দেখা গেলো, কেউ একজন কোটায় আবেদন করেছে। আবেদন করায় কোটায় ভর্তির জন্য ওই শিক্ষার্থী মনোনীত হলেও যথাযথ কাগজপত্র দেখাতে না পারলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি করাবে না। আবার কোটায় আবেদন করায় মেধা তালিকায়ও তার নাম আসবে না। এতে করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর ভর্তি ঘিরে সংশয় দেখা দিবে। তাই আবেদনের ক্ষেত্রে যাবতীয় বিষয় যাচাই–বাছাই করে তবেই আবেদন করতে হবে।
পছন্দক্রমে সর্বোচ্চ দশ কলেজ রেখেই আবেদনের পরামর্শ : একাদশে ভর্তিতে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ম ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করা যাবে। সুযোগ থাকায় সর্বোচ্চ দশটি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক। অনেক শিক্ষার্থী অতি আত্মবিশ্বাসের জোরে মাত্র কয়েকটি বা ৫টি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করে। কিন্তু দেখা গেল, তার প্রাপ্ত নম্বরে ওই ৫টি কলেজের কোনটিতেই সে ভর্তির সুযোগ পেল না। এছাড়া পছন্দক্রমে আর কলেজ না থাকায় পরবর্তী তালিকাতেও তার আসার সুযোগ থাকে না। এতে করে জিপিএ–৫ পেয়েও কিছু শিক্ষার্থীর ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তবে সুযোগ থাকায় সর্বোচ্চ দশটি কলেজ পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করলে ভর্তি ঘিরে এ ধরণের অনিশ্চয়তা কমে যায়। তাই সব শিক্ষার্থীরই সর্বোচ্চ দশটি কলেজে পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করার জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক।
সতর্ক হতে হবে মোবাইল নম্বর প্রদানে : আবেদনের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কন্টাক্ট নাম্বার হিসেবে একটি মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক বলছেন, আবেদনের সময় প্রদত্ত এই মোবাইল নাম্বারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আবেদন পরবর্তী ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এই মোবাইল নাম্বারেই পাঠানো হবে। কন্টাক্ট নাম্বার হিসেবে প্রদত্ত এই মোবাইল নাম্বার অবশ্যই রেজিস্ট্রেশনকৃত (বায়োমেট্রিক) হতে হবে। যাতে কোন কারণে মোবাইল হারিয়ে গেলেও সিমটি পুনরায় উত্তোলন করা যায়। আর কন্টাক্ট নাম্বার হিসেবে একই মোবাইল নাম্বার কোন ভাবেই একাধিক আবেদনে ব্যবহার করা যাবে না।