করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পুরো শিক্ষা কার্যক্রম লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একেক সময়ে একেক কথা বলা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে, খোলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ-এরকম নানা কথা প্রকাশ হতে থাকে গণমাধ্যমে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা বিভ্রান্ত।
স্থবির হয়ে পড়া সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রমে গতি আনতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না তার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গঠিত হয় একটি কমিটি। কমিটির এক সভায় অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইন পরীক্ষার প্রক্রিয়াটিকে স্ব স্ব একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন নিতে হবে। অবশ্য ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী জুলাই থেকে অনলাইনে সব বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে।
এদিকে, অনলাইনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারবে-এ সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্ত সমপ্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভার্চুয়াল বৈঠকে গৃহীত হয়েছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পরীক্ষাকেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি ইউজিসি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতি এখন উন্নতির দিকে। এ কারণে ছাত্রছাত্রীদের বৃহত্তর স্বার্থ চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে এবং নিজ নিজ একাডেমিক কাউন্সিলের ভিত্তিতে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া যাবে। তবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে অনলাইনেও পরীক্ষা নিতে পারবে। এ সংক্রান্ত সভায় ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ সভাপতিত্ব করেন। এদিকে আরেক বৈঠকে উচ্চশিক্ষায় ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’ বা মিশ্র শিখন পদ্ধতি (কিছু অনলাইনে আবার কিছু সরাসরি) নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। এতে এ নিয়ে নীতিমালা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন পিছিয়ে না পড়ে সে লক্ষ্যে এ ব্লেন্ডেড লার্নিং নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। অনলাইন ও অনসাইট এডুকেশন পদ্ধতিকে একত্র করে উচ্চশিক্ষায় যুগোপযোগী শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতির নীতিমালা প্রণয়নসংক্রান্ত এক ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ।
শিক্ষাবিদরা বলেন, করোনার এই অনিশ্চয়তার মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। এ জন্য পরীক্ষা ও মূল্যায়নও করতে হবে। সশরীরে না পারলেও পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেওয়া সম্ভব, যদিও তাতে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। এ জন্য চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সৃজনশীল হতে হবে। তাঁদের মতে, স্বীকার না করে উপায় নেই, করোনভাইরাসের অপ্রত্যাশিত প্রভাব ছাত্রদের প্রাত্যহিক জীবনে পড়ছে। এই দাবিতে অবশ্যই কিছুটা পরীক্ষা গ্রহণে নমনীয় থাকতে হবে। তবে পরীক্ষার একটা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। দীর্ঘদিন প্রচলিত রীতির বাইরে গিয়ে প্রশ্ন তৈরি করা এবং ছাত্রদের এটার সাথে ধাতস্থ করানো, দেশব্যাপী সমান ইন্টারনেট গতি ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা, সব ছাত্র সমান সুবিধা ভোগ করতে পারছে কিনা, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন -এগুলো বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জের দিকে তাকালে দেখব, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার কোন ব্যবস্থা বর্তমানে সংহত নেই। এক্ষেত্রে বিদ্যমান কাঠামোয় ও নিয়মে প্রচুর পরিবর্তন আনতে হবে এবং মূলধন বিনিয়োগ করতে হতে পারে।
একটা বেসরকারি জরিপে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ঘরে বসে থাকে না। তারা নানা রকম কাজে সময় কাটায় বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখেও তাদের ঘরে আটকে রাখা যায়নি। ওরা করোনার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জ্ঞাত এবং নিজেদের সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হবে কীভাবে- তাও অবগত। অতএব, তাদের আজেবাজে কাজে সময় ব্যয় করা থেকে ফিরিয়ে এনে বিশ্ববিদ্যালয়মুখী করা আমাদের দায়িত্ব। তাই অনলাইনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে সশরীরে উপস্থিতির মাধ্যমে সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে শিক্ষার্থীদের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না মনে হলে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করুন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হতাশার দিকে ঠেলে দিতে চাই না।