টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানে চার আর ছক্কার দারুণ প্যাকেজ। তবে স্বল্পদৈর্ঘ্যের এই ক্রিকেটে খুব বেশি রান করা হয়ে উঠে না ব্যাটসম্যানদের। তারপরও কখনো কখনো নানা রেকর্ড হয়ে যায়। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা ঝড় তুলেন চার আর ছক্কার। যেমনটি গতকাল তুললেন চট্টগ্রামের ছেলে পারভেজ হোসেন ইমন। যদিও তিনি বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে খেলছেন বরিশালের হয়ে। যে দলে রয়েছে আরো দুজন চাটগাঁর ক্রিকেটার। তারা হলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবং উইকেট রক্ষক ইরফান শুক্কুর।
তবে গতকাল ব্যাট হাতে ঝড় তুলে রেকর্ড গড়লেন চাটগাঁর এই তরুণ ইমন। গত ফেব্রুয়ারিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য ইমন গতকাল নিজেকে নিয়ে গেলেন অনন্য উচ্চতায়। বিশ্বকাপের সে ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন ইমন। মূলত তার ৭৯ বলে ৪৭ রানের মহা মূল্যবান ইনিংসটি বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। তবে এবার অন্য রূপে ইমনকে দেখল ক্রিকেটপ্রেমীরা। গতকালের বরিশাল এবং রাজশাহীর মধ্যকার ম্যাচে তারকার অভাব ছিল না। তবে সব তারকাকে নিভিয়ে দিলেন ইমন তার ব্যাটিং দ্যুতিতে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোনো দল শুধু নয়, বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক হলেন ইমন। যা বাংলাদেশের কোনো তারকা করে দেখাতে পারেননি। গতকাল ৪২ বলে সেঞ্চুরি করেছেন ইমন, যা বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের দ্রুততম টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি। আর ইমনের ক্যারিয়ারেরও প্রথম সেঞ্চুরি। এই রেকর্ড গড়তে গিয়ে ইমন পেছনে ফেলেছেন তারই অধিনায়ক তামিম ইকবালকে। ২০১৮-১৯ মৌসুমের বিপিএল ফাইনালে ৬১ বলে ১৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পথে মাত্র ৫০ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করেছিলেন তামিম। সেদিনই ১১টি ছক্কা হাঁকান তিনি। গতকাল ইমন মাত্র ৪২ বলে সেঞ্চুরি করলেও ছক্কা মেরেছেন ৭টি। সেদিক থেকে তামিমের চাইতে খানিকটা পিছিয়ে ইমন।
চট্টগ্রামের ছেলে ইমনের ক্রিকেটের প্রতি ছিল অদম্য স্পৃহা। বাবা সিরাজ বাবুল মাত্র চতুর্থ শ্রেনীতে পড়তেই ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন ইস্পাহানী ক্রিকেট একাডেমিতে। বাংলাদেশ দলের সাবেক ওপেনার নুরুল আবেদীন নোবেলের পরিচর্যায় নিজেকে পরিশুদ্ধ ক্রিকেটারে পরিণত করেন ইমন। পরে ২০১২ সালে ভর্তি হন দেশের ক্রিড়াবিদ সৃষ্টির কারখানা বিকেএসপিতে। এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই তরুণকে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের জয়ের নায়ক ইমন ঢাকা লিগেও বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন। মূলত টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ইমনের উপর থাকে দলের সবচাইতে বড় দায়িত্ব। গতকাল যেমন তিন নম্বরে খেলতে নেমে গড়ে ফেললেন রেকর্ড। ইমনের এই কীর্তিতে আনন্দের বন্যা বইয়ে যাচ্ছে তার পরিবারে। ব্যবসায়ী বাবা তার তিন সন্তানের ছোট সন্তান ইমনকে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার বানাতে। ইমন সে পথে ঠিকই হাঁটছেন। নগরীর খলিফা পট্টিতে বসবাস ইমনদের।
বাবার ব্যবসাও সেখানে। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট ইমন এইচএসসি পাশ করলেও ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে যেহেতু ক্রিকেটারদের জন্য বিশেষ সুযোগ থাকে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সে হিসেবে তার পছন্দের বিবিএ টা পড়া শুরু করতে পারেন যেকোন সময়। একজন ইমন যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন হয় সে প্রত্যাশা চট্টগ্রামের ক্রিকেট প্রেমীদেরও।