অদম্য সালাউদ্দিন ভর্তি হলেন বাকলিয়া সরকারি কলেজে

মহেশখালী প্রতিনিধি | শনিবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ

বহু চড়াইউৎরাই পেরিয়ে অবশেষে চট্টগ্রামের বাকলিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছে অদম্য প্রতিবন্ধী সালাউদ্দিন। বিশেষ শরীর নিয়ে জন্ম নেয়া সালাউদ্দিন মহেশখালী উপজেলার কালারমার ছড়া ইউনিয়নের উত্তর নলবিলা গ্রামের দিনমজুর হতদরিদ্র মো. জালাল ও আয়েশা বেগম দম্পতির ছেলে। ২ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে পঞ্চম সালাহউদ্দিন।

পায়ের স্থানে আছে শুধুমাত্র পা সদৃশ খাটো বিকল অঙ্গে দুটি আঙ্গুল। শরীরের অক্ষমতাকে হার মানিয়ে কোমরের নিচের অংশে গজিয়ে উঠা সেই দুই আঙ্গুল দিয়ে লিখে জেএসসিতে জিপিএ ৩.৪২ পেয়ে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয় সালাউদ্দিন।

পড়ালেখার অদম্য স্পৃহা নিয়ে এগোতে থাকে সে। অবশেষে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে জিপিএ ২.০০ পেয়ে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন।

এবার উচ্চশিক্ষার প্রবল স্পৃহা নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে ভর্তির সুযোগ সন্ধান করছিল সে। গত ১২ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘সেই দুটি আঙুল নিয়ে সালাহউদ্দিনের এসএসসি জয়’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

পরবর্তীতে বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে প্রথম সারির কোনো কলেজে ভর্তি করাতে উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার ও কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক উদ্যোগ নিয়ে তাকে বাকলিয়া সরকারি কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা নেন। এরই প্রেক্ষিতে বাকলিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. জসিম উদ্দিন খান খোঁজখবর নিয়ে সালাউদ্দিনের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।

এ বিষয়ে প্রতিবন্ধী সালাউদ্দিন বলেন, অধ্যক্ষ স্যার আমার লেখাপড়ার যাবতীয় দায় দায়িত্ব নিয়েছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। আমি গত ৩১ জানুয়ারি ভর্তি হয়ে ১ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনী ক্লাসে উপস্থিত হয়ে সেদিন থেকেই নিয়মিত ক্লাস করছি। আমি ও আমার মা এবং কলেজ পড়ুয়া ছোট বোনসহ বর্তমানে বাকলিয়ায় ভাড়া বাসা নিয়ে থাকি। আমার বোন চট্টগ্রাম নগরীর কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীতে মানবিক বিভাগে পড়ে। আমার মা আমাকে প্রতিদিন কলেজে আনা নেওয়া করে।

মা আয়েশা বেগম বলেন, ছেলের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে জন্মের পর থেকে সারা জীবন বহন করেই চলেছি। তার বৃদ্ধ বাবা কিডনি রোগে অসুস্থ। তিনি তেমন আয় রোজগার করতে পারে না। দুই ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে সে পঞ্চম। ছেলে আস্তে আস্তে বড় হয়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। বার্ধক্য শরীর নিয়ে এখন তাকে আর বহন করতে পারি না। কলেজে আনা নেওয়ার জন্য তার উপযোগী একটি গাড়ীর প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন কাল
পরবর্তী নিবন্ধস্বপ্নের সড়কে লবণ পানি বাড়ছে দুর্ঘটনা