চমক দেখাল চট্টগ্রাম বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থ। অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট ছাড়াই কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে জেনারেল কার্গো বার্থের ছয়টি বার্থ। চিটাগাং কন্টেনার টার্মিনাল (সিসিটি) এবং নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের (এনসিটি) অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্টসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়ে ম্যানুয়ালি পরিচালিত জেনারেল কার্গো বার্থ কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সকল সূচকে এগিয়ে রয়েছে। বিষয়টি চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও বিস্মিত করেছে। তারা অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে সিসিটি, এনসিটির উৎপাদনশীলতাকে পেছনে ফেলাকে বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করছেন।
বন্দরের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের পুরনো ছয়টি জেটিতে একসময় খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং করা হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়। তবে এগুলো ডেডিকেটেড কোনো কন্টেনার জেটি নয়। এই ছয়টি জেটিতে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের অত্যাধুনিক কোনো ইকুইপমেন্টও নেই। নেই কী গ্যান্ট্রি ক্রেনের মতো ক্রেন। ব্যাকআপ ফ্যাসিলিটির ক্ষেত্রেও এই ছয়টি জেটি বন্দরের কন্টেনার টার্মিনালগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে। নানা স্থানে ছিটিয়ে ছড়িয়ে রাখা হয় এসব জেটি থেকে খালাসকৃত কন্টেনার। জেটি থেকে কোনো কোনো ইয়ার্ডের দূরত্ব ৪/৫ কিলোমিটার দূরে। এতে করে জাহাজ থেকে কন্টেনার নামিয়ে সেগুলো ইয়ার্ডে রাখার ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগে। এসব জেটিতে কেবলমাত্র গিয়ার্ড ভ্যাসেল (যেসব জাহাজের ক্রেন আছে) বার্থিং এবং কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হয়। অপরদিকে বন্দরের সিসিটি এবং এনসিটি দুটিই ডেডিকেটেড কন্টেনার টার্মিনাল। দুটি টার্মিনালে রয়েছে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সর্বাধুনিক ইকুইপমেন্ট কী গ্যান্ট্রি ক্রেন। এসব জেটিতে গ্যান্ট্রি ক্রেন দিয়ে জাহাজ থেকে দ্রুততার সাথে কন্টেনার খালাস করা হয়। জেটির পাশেই ব্যাকআপ ফ্যাসিলিটি। কন্টেনার রাখার ইয়ার্ডগুলো জেটির একেবারে কাছে হওয়ায় জাহাজ থেকে কন্টেনার নামানোর প্রায় সাথে সাথে ইয়ার্ডে রেখে আসা সম্ভব হয়। এতে এসব জেটিতে কাজের গতি এবং উৎপাদন স্বাভাবিকভাবেই বাড়তি থাকে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সব স্বাভাবিক হিসাব নিকাশ উলট পালট করে দিয়ে সীমাবদ্ধতার মাঝেও বন্দরের জেনারেল কার্গো বার্থে কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের উৎপাদনশীলতা অত্যাধুনিক দুটি টার্মিনালের চেয়ে বেশি।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, সিসিটি এবং এনসিটিতে প্রতি ঘণ্টায় যেখানে ১৭ থেকে ১৮ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, সেখানে জেনারেল কার্গো বার্থে হ্যান্ডলিং হয়েছে প্রায় ১৮–১৯ টিইইউএস। ২০২৪ সালে যেখানে অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট সমৃদ্ধ সিসিটিতে প্রতিদিন কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮৩১ টিইইউএস এবং এনসিটিতে হয়েছে ৮৩৯ টিইইউএস, সেখানে জিসিবিতে প্রতিদিন কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮৬০ টিইইউএস।
আগে জেসিবিতে প্রতিদিন গড়ে ৬৫০ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হতো। এর থেকে কম হওয়ার নজিরও রয়েছে। অপরদিকে সিসিটি ও এনসিটিতে ৯০০ টিইইউএসের বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হতো। কিন্তু ২০২৪ সালের গড় হিসেবে জেসিবি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে প্রতিদিন ৮৩১ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, বিষয়টি আমাদেরকে আশ্চর্য করেছে। আসলে জেসিবির লোকজনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কাজে গতি এনেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক সিসিটি এবং এনসিটি থেকে জেসিবির উৎপাদনশীলতা বেশি হওয়ার কথা স্বীকার করেন। বন্দরের অপর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এগুলো কোনো কন্টেনার বার্থ নয়, তবুও তারা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যন্ত্রকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের পরিশ্রমের ফলেই এমন চমক দেখানো সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩২ লাখ ৭৫ হাজার ৬২৭ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে; যা এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি বছর এই সংখ্যা আরো দুই লাখ টিইইউএস বেশি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।