অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন : আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড গতকাল তুলে ধরেন তিনি। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে সর্বত্রই একটি প্রশ্ন শোনা যায়, সেটি হলো তারা কতদিন থাকবে, তাদের মেয়াদ কতদিন হবে, নির্বাচন কবে হবে?’ এ বিষয়ে জবাব দিতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, এটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে আপনাকে একটি বিষয় বলি, আমরা মোস্ট এসেনশিয়াল কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেব। আমরা জাস্ট এই জিনিসটা চাই না যে, আগের মতো কোনো ভুয়া নির্বাচন হোক। আর এটা চাই না নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কেউ আবার ভুয়া নির্বাচন করার সুযোগ পাক। এটা ছাড়া আর কোনো স্বার্থ নাই। অন্তর্বর্তী সরকারে যারা আছেন তাদের অধিকাংশই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের পেশায় ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয় ১৫ নভেম্বর। ১শ দিনে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। খবর বাসস ও বাংলানিউজের।
রাজনৈতিক দলকে শাস্তির আওতায় আনতে আইন সংশোধন হচ্ছে : আইন উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এবং গত জুলাই–আগস্ট মাসে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত আইন যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন–১৯৭৩ বিদ্যমানে কিছু ত্রুটি–বিচ্যুতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত সুপারিশ নিয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাল ২০ নভেম্বর (আজ) এটি উপদেষ্টা পরিষদে উঠবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে সংশোধিত এই আইনটি প্রকাশ করা হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা : ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। গত ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটরসহ প্রসিকিউশন গঠন করা হয়। মোট ১১ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়। ১০ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে। এছাড়া স্পেশাল প্রসিকিউটরাল এডভাইজার হিসাবে দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞগণকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
গণআন্দোলন দমনে দায়ের প্রায় সব মামলা প্রত্যাহার : ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র–জনতার গণআন্দোলন দমনে দায়ের করা প্রায় সব ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা। তিনি জানান, সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিলক্রমে কম্পিউটার সম্পর্কিত অপরাধগুলো প্রতিরোধের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সাথে সমন্বয় করে নতুন ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪’ প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইন রহিত হলে ওই আইনের অধীনে দায়েরকৃত সব স্পিচ–অফেন্সের মামলা প্রত্যাহার করা হবে।
আইন উপদেষ্টা জানান, এই ক’দিনে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ৫ জন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি এবং অধস্তন আদালতে ১০৯ জন বিচারক নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৬১টি জেলায় ৪ হাজার ৩০০ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দ্রুততম সময়ে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।
বিচার বিভাগের জন্য সচিবালয়, অংশীজনদের সঙ্গে সভা করে সিদ্ধান্ত : বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে বড় পরিসরে সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আসিফ নজরুল। বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে বিভিন্ন রকমের মতামত রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারকে বৈধতা দিতে একটি অধ্যাদেশ হচ্ছে–এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইন উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের কোনো অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে কথাবার্তা চলছে।