দলছুট একদল বন্য হাতি ৭/৮ বছর ধরে কেইপিজেড ও আশেপাশের এলাকার দেয়াং পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে খাবারের সন্ধানে এসে প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের বসত বাড়িতে হামলা করছে। হাতির আক্রমণে দিনকে দিন নিহত ও আহতের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের বসত বাড়ি, ফসলের মাঠ, বাগান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি করে যাচ্ছে হাতির পাল। এ অবস্থায় হাতির আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয়রা আন্দোলনে নেমেছে। এলাকার মানুষ হাতি অপসারণের দাবিতে একাট্টা হয়ে এক দফার ডাক দিয়েছে। তারা অতি দ্রুত হাতিগুলো সরিয়ে নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
মানুষ–হাতি দ্বন্দ্ব নিরসনে সম্ভাব্য করণীয় নির্ধারণে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা কোরিয়ান ইপিজেড ও আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করতে এসে স্থানীয় ভুক্তভোগী, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষের কনফারেন্স রুমে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, অতীতে আনোয়ারা–কর্ণফুলীতে কোনো হাতি বসবাস করত না। বিগত ৭/৮ বছর ধরে কেইপিজেড ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান নিয়ে মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে হাতি ৩০ জন মানুষকে হত্যা করেছে, আহত করেছে শতাধিক। প্রতিনিয়ত ঘরবাড়ি–দোকানপাট ভাঙছে, নষ্ট করছে জমির ফসল। হাতির ভয়ে মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। তাই আমাদের দফা একটা– আমরা এ এলাকায় আর হাতি দেখতে চাই না। যদি হাতিগুলো সরানোর উদ্যোগ নেওয়া না হয় তাহলে এলাকাবাসী আইন নিজ হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে বলেও ঘোষণা দেন তারা। কেইপিজেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, কেইপিজেড শুরুর অনেক আগে থেকেই এখানে হাতির অবস্থানের বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জাইকার প্রতিবেদনেও এই এলাকায় হাতির কোনো তথ্য নেই। চট্টগ্রামের হাজার বছরের ইতিহাস নিয়ে লেখা বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থেও এই এলাকায় হাতি বসবাসের কোনো তথ্য নেই। হাতির কারণে আমাদের শিল্পায়ন ব্যাহত হচ্ছে। জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। ৩০ হাজার শ্রমিক নিরাপত্তাহীনতায় আছে। এখানে হাতি অবস্থান নিলে কেইপিজেডে বিনিয়োগকারী আসবে না। হাতিগুলোকে সুরক্ষা দিয়ে এখান থেকে সরিয়ে নিতে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ সবধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে।
সভায় বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য ছাড়াও কেইপিজেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সহকারী জজ, আইনজীবী, সংবাদকর্মী, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিবর্গ ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।