অতিরিক্ত মাংস না দেয়ায় বর-কনেপক্ষের সংঘর্ষ

বর, কনের বাবা-মা সহ অন্তত ১০ জন আহত

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ৩০ অক্টোবর, ২০২১ at ৯:৪৮ অপরাহ্ণ

সাতকানিয়ায় বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত মাংস না দেয়াকে কেন্দ্র করে বর-কনেপক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষে বর, কনের বাবা-মা সহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে।

আজ শনিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর দেড়টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত সময়ে উপজেলার মৌলভীর দোকান এলাকায় নিরিবিলি কমিউনিটি সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে। পরে সাতকানিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে, ঘটনার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কনেপক্ষের লোকজন কমিউনিটি সেন্টারে বসে থাকার পর পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে মীমাংসার পর বরপক্ষ কনেকে ঘরে নিয়ে যায়।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, আজ মৌলভীর দোকান নিরিবিলি কমিউনিটি সেন্টারে সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পূর্ব কাজীর পাড়ার মো. কালু মিয়ার পুত্র মো. শাহজাহান এবং নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরওয়াপদা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা (বর্তমানে চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসভার হাছনদণ্ডী এলাকার বাসিন্দা) জসীম উদ্দিন ফারুকের মেয়ে মুক্তা বেগমের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল।

খাবারে অনুষ্ঠান চলাকালে বরপক্ষের কয়েকজন লোককে অতিরিক্ত মাংস না দেয়াকে কেন্দ্র করে কনেপক্ষের লোকজনের ওপর হামলা চালানো হয়।

খবর পেয়ে বর মো. শাহজাহান সাধারণ পোশাকে কমিউনিটি সেন্টারে ছুটে এসে কনেপক্ষের লোক এবং কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এতে করে বর ও কনেপক্ষের মধ্যে পুনরায় সংঘর্ষ হয়।

ফলে বর মো. শাহজাহান (৩০), কনের বাবা জসীম উদ্দিন ফারুক (৫৬), মা রাশেদা বেগম (৪৭), মামা মো. বাবুল (৪৩), চাচা মো. আলাউদ্দিন (৫২), বরের আত্মীয় মো. মানিক (২৮), মো. রফিক (৩০) ও স্থানীয় যুবক মো. হুমায়ুন (১৯) সহ অন্তত ১০ জন আহত হয়।

অনুষ্ঠানে বাবুর্চির বয় আবুল কাশেম বলেন, “শুরু থেকে কোনো সমস্যা হয়নি। দেড়টার দিকে আমার দায়িত্বাধীন টেবিলে খেতে বসা বরযাত্রীদেরকে চিংড়ি, খাসি ও গরুর মাংস সহ সব খাবার দিয়েছি। একটু পরে কয়েকজন মিলে অতিরিক্ত মাংস দিতে বলেন। তাদের কথামতো আমি পুনরায় গরুর মাংস এনে দিই। কয়েক মিনিট যেতে না যেতে আবারো মাংস আনতে বলেন। তখন আমি তাদেরকে জানাই তিনবার মাংস দেয়ার সুযোগ নাই। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে কনেপক্ষের লোকজনকে গালি দিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে কনের বাবা এসে তাদের চাহিদামতো মাংস দিতে বলেন এবং বুঝিয়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এসময় কয়েকজন বরযাত্রী মিলে কনের বাবাকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা চলে যাওয়ার পর পুনরায় খাবার দেয়া শুরু করি। এরই মধ্যে কয়েকজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে বর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে এসে কনেপক্ষের লোকজনকে মারধর শুরু করে। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।”

কনের চাচা মো. আলাউদ্দিন জানান, বিয়েতে ৩শ’ জন বরযাত্রী খাওয়ানোর কথা ছিল কিন্তু দুইটার মধ্যে তারা সাড়ে ৪শ’ জনের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেছে। তবুও আমরা কিছু বলিনি। তৃতীয় বারের মতো মাংস না দেয়ায় তারা এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।”

বরের বাবা মো. কালু মিয়া বলেন, “সামান্য ভুল বুঝাবুঝি থেকে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষের লোকজন আহত হয়েছে। তবুও আমরা পুলিশ এবং চেয়ারম্যানদের মধ্যস্থতায় কনেকে নিয়ে এসেছি।”

সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, বরপক্ষের কয়েকজন লোক তাদের চাহিদামতো মাংস না পেয়ে কনেপক্ষের ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে বর তার বন্ধুদেরকে সাথে নিয়ে কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে কনেপক্ষের ওপর পুনরায় হামলা চালায়। এসময় উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে বর, কনের বাবা-মাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ, ছদাহা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোসাদ হোসেন চৌধুরী, চন্দনাইশের সাতবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আহমদুর রহমান ডিলার ও কালিয়াইশ ইউপি চেয়ারম্যান হাফেজ আহমদ বর ও কনেপক্ষের লোকজনের সাথে বৈঠক করে বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়। এরপর বরপক্ষের লোকজন কনেকে ঘরে তুলে নেয়।”

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিষ দিয়ে ১০ লাখ টাকার মাছের পোনা নিধন
পরবর্তী নিবন্ধকারের গ্যাস সিলিন্ডারে ৮৭ লাখ টাকার ইয়াবা