অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ, দীর্ঘ যানজট

সাতকানিয়ার কেরানীহাট

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৩৭ পূর্বাহ্ণ

ঈগল পরিবহনের যাত্রীবাহী মিনি বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদে সাতকানিয়ার কেরানীহাটে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেছে ছাত্রজনতা ও ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। ফলে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহসড়কে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত টানা ২ ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এসময় সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়ে পর্যটকসহ যাত্রীরা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

অবরোধকারীরা জানান, নতুন ব্রিজ থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত ঈগল পরিবহনের নির্ধারিত ভাড়া ৮০ টাকা এবং নতুন ব্রিজ থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত ভাড়া ১০০ টাকা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তারা নতুন ব্রিজ থেকে কেরানীহাট ১৫০ টাকা এবং লোহাগাড়ায় ২০০ টাকা ভাড়া নেয়। কোনো কোনো সময় এর চেয়েও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। একইভাবে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত লোহাগাড়া থেকে নতুন ব্রিজ ২০০ টাকা এবং কেরানীহাট থেকে নতুন ব্রিজ ১৫০ টাকা ভাড়া আদায় করে। আবার রাস্তায় যাত্রী বেশি দেখলেও ভাড়া দ্বিগুণ করে ফেলে তারা।

এদিকে গতকাল সকালে সাতকানিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রসহ কয়েকজন যাত্রী কেরানীহাট থেকে নতুন ব্রিজ যাওয়ার জন্য গাড়িতে উঠতে গেলে তারা ১৬০ টাকা করে ভাড়া দাবি করে। এতে প্রতিবাদ করে যাত্রীরা কেরানীহাটে চট্টগ্রামকঙবাজার মহাসড়কের উপর গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে। পরে কিছু ছাত্র ও সাধারণ লোকজন অবরোধকারীদের সাথে যোগ দেয়। এসময় তারা সড়ক অবরোধ করে নানা স্লোগান দিতে থাকে। ফলে সকাল ৮টা থেকে টানা ২ ঘণ্টা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে করে সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এসময় কঙবাজার ও বান্দরবানের পর্যটকসহ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, সাতকানিয়া থানা পুলিশ, দোহাজারী হাইওয়ে থানা পুলিশ ও এলাকার সচেতন লোকজন ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে তারা ব্যারিকেড তুলে নেয় এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঢেমশা ইউনিয়ন শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি ও সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আলম জানান, শুরু থেকে আমি ঘটনাস্থেেল গিয়ে অবরোধকারীদেরকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু ঈগল পরিবহনের বাসের লোকজনের খারাপ আচরণের কারণে অবরোধকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। অবশ্যই পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে অবরোধকারীদের সরিয়ে দিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঈগল স্পেশাল সার্ভিসের এক চালক জানান, বাসের লাইন নিয়ন্ত্রণকারীরা আমাদের জিম্মি করে রেখেছে। তারা ওয়াবিল ও সার্ভিস চার্জের নাম দিয়ে দৈনিক একটি বাস থেকে প্রায় ১ হাজার ৫শ টাকা আদায় করে। এছাড়া বৃহস্পতিবার নতুন ব্রিজ থেকে অধিক যাত্রী হলেও লোহাগাড়া এবং কেরানীহাট থেকে তেমন যাত্রী পাওয়া যায় না। আবার শনিবাররোববার লোহাগাড়া এবং কেরানীহাট থেকে যাত্রী হলেও নতুন ব্রিজ থেকে তেমন যাত্রী মিলে না। অনেক সময় শুধুমাত্র কয়েকজন যাত্রী নিয়েও চলে যেতে হয়। তখন আসার সময় যাত্রীদেরকে বুঝিয়ে পারলে কিছু টাকা বাড়িয়ে নিই। তবে লাইন নিয়ন্ত্রণকারীদেরকে দৈনিক ওয়াবিল ও সার্ভিস চার্জের বাবদ যে টাকা দিতে হয় তা বন্ধ বা কমানো গেলে বাড়তি ভাড়া নিতে হত না।

ঈগল স্পেশাল সার্ভিসের ডাইরেক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, নতুন ব্রিজ থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১২৬ টাকা এবং নতুন ব্রিজ থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত ভাড়া ১৩৮ টাকা। কিন্তু আমরা নতুন ব্রিজ থেকে কেরানীহাট ৮০ টাকা এবং নতুন ব্রিজ থেকে লোহাগাড়া ১০০ টাকা নিই। অনেক সময় যাত্রী কমবেশি হলে সরকার নির্ধারিত ভাড়াটা নিতে চাই। তখন অনেক যাত্রী সরকার নির্ধারিত ভাড়া দিতে চায় না। এজন্য ঝামেলা হয়। এরপরও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমাদের নিষেধ রয়েছে। তিনি আরো জানান, কিছু লোক ঈগল প্লাস, ঈগল লাইন ও ঈগল ফার্স্ট নামে সার্ভিস চালু করেছে। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করার কারণে আমাদের বদনাম হয়। ওয়াবিল ও সার্ভিস চার্জের নামে গাড়ি প্রতি দৈনিক ১ থেকে দেড় হাজার টাকা আদায়ের ব্যাপারে জাহাঙ্গীর আলম জানান, ওয়াবিল ও সার্ভিস চার্জের নামে টাকা আদায়ের বিষয়টি সত্য, কিন্তু এত টাকা নয়। মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের জন্য ১৬০ টাকা এবং সার্ভিস চার্জের জন্য ১৫০ টাকা নেয়া হয়।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ শুভ রঞ্জন চাকমা জানান, বাড়তি ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদে ছাত্রজনতা মিলে কেরানিহাট এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। এসময় ঘণ্টাখানেক মহাসড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে হাইওয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। ওখানে আগে থেকে সেনাবাহিনী ও সাতকানিয়া থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে অবরোধকারীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সবাইকে কাজ করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধজলসা মার্কেটে কাপড়ের গুদামে আগুন