অতিথি পাখির কলতানে মুখর কেইপিজেড

আনোয়ারা প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২৪ at ১০:০২ পূর্বাহ্ণ

প্রতি বছর শীত এলেই অতিথি পাখির আগমনে মুখর হয়ে উঠে কেইপিজেডের লেকগুলো। পাখির এই বিচরণ প্রকৃতি প্রেমীদের দারুন মুগ্ধ করে। কেইপিজেডের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের পরম মায়া মমতার টানে যেন প্রতি বছর হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অতিথি পাখিরা ছুটে আসে। রংবেরঙের এ অতিথি পাখি গুলোর আগমন যেন শীতের কুয়াশার চাদরে ঢাকা লেক গুলো পূর্ণতা লাভ করে। পাখিদের মিষ্টি ভরা ডাক ও কিছির মিচির শব্দে পর্যটকদের মন ভরে ওঠে। আর চারপাশে আনন্দঘন শান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি করে।

সরেজমিনে কেইপিজেডের বিভিন্ন লেক ঘুরে দেখা যায় অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত লেক। দল বেঁধে উড়াল দিচ্ছে আর মুহুর্তে ফিরে আসছে লেকে এ যেন অন্য রকম মিতালী পাখি আর লেকের জলের। সাদা বক কেইপিজেডের লেকের পাড়ে রোদে ডানা মেলে ধরেছে, গরুর পালের সাথে মাঠে চরে বেড়ানোর এসব দৃশ্য আগতদের মন জুড়ায়। তাছাড়া কেইপিজেডের বাগান গুলোতে শতাধিক নানান প্রকারের পাখি রয়েছে। এসব পাখি পুরো বছর মাতিয়ে রাখে কেইপিজেড।

জানা যায়, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি পাখির আগমন ঘটে। ঝড়, বৃষ্টি, তুষারপাতসহ প্রকৃতির নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে জীবন বাঁচাতে তারা হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এখানে আসেন। বিশেষজ্ঞদের মতে ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যামশায়ার, সাইবেরিয়া কিংবা এন্টার্টিকার তীব্র শীত থেকে বাঁচতে দক্ষিণের কম শীতের দেশ গুলোতে থেকে এসব পাখিরা চলে আসে। ইংল্যান্ডের নর্থ হ্যামশায়ার, সাইবেরিয়া কিংবা এন্টার্টিকার তীব্র শীত থেকে বাঁচতে দক্ষিণের কম শীতের দেশে যায় পাখিরা।

জানা যায়, জন্মগতভাবে অতিথি পাখিদের শারীরিক গঠন আমাদের দেশীয় পাখির চেয়ে অনেক শক্তিশালী। পাখিগুলো সাধারণত আকাশে ৬০০ থেকে ১৩০০ মিটার উঁচু দিয়ে উড়তে পারে। আকারে ছোট পাখিরা ঘন্টায় ৩০ কিলোমিটার গতিতে উড়ে। রাতে দিনে কমপক্ষে ২৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে । আর বড় পাখিরা ঘন্টায় ৮০ কিলোমিটার উড়তে পারে বলে তা বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। অবাক করার ব্যাপার হল অতিথি পাখি গুলো আমাদের দেশে নির্দিষ্ট সময় পার করে আবার তাদের নিজ দেশে,নিজ গন্তব্যে ফিরে যেতে সক্ষম হয়। সাধারণত সেপ্টেম্বরঅক্টোবর মাসের শেষের দিকে এসব পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে দলবেঁধে আমাদের দেশের বিভিন্ন হাওর জলাশয়, বিল বা বিভিন্ন পুকুরে এসে অবস্থান নেয়। পাখিগুলো মার্চমাসের শেষের দিকে নিজের দেশে ফিরতে শুরু করে।

অতিথি পাখিদের মধ্যে হরিয়াল, দুর্গা, টুনটুনি, রাজশকুন, সোনাজঙ্গ, খুরুলে, কুনচুষী, বাতারণ, শাবাজ, জলপিপি, ল্যাঞ্জা, লালবন মোরগ, তিলে ময়না, রামঘুঘু, জঙ্গি বটের, ধূসর বটের, হলদে খঞ্চনা ও কুলাউ ইত্যাদি পাখির আগমন ঘটে। গ্রীষ্মকালে পাখি গুলো সুমেরুতে অবস্থান করে বাচ্চার জন্ম দেয়,হাঁস জাতীয় পাখি গুলো শীতকালে বাংলাদেশে আগমন ঘটে। লাল বুকের ক্লাইক্যাসার জাতের পাখি আসে ইউরোপ থেকে। আর অন্য পাখিরা আসে পূর্ব সাইবেরিয়া হতে। বাংলাদেশের অতি পরিচিতি অতিথি পাখি নর্দান পিনটেইল। এছাড়া রয়েছে স্বচ্ছ পানির খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস, ছোট সারস, পাতিকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, বড় সারস, হেরন, নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন, রাজসরালি,কমন পোচার্ড, বিলুপ্তপ্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া)। এছাড়াও নানা রং আর কণ্ঠবৈচিত্র্যের পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল প্রভৃতি। কোরিয়ান ইপিজেডের উপমহাব্যবস্থাক মুশফিকুর রহমান বলেন,বর্তমানে কোরিয়ান ইপিজেডে ২৭ টি বড় বড় লেক রয়েছে। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে আমাদের এসব লেক অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়।এসব পাখি যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল, থাকার অবস্থানে কোন ত্রুটি না হয়। সব সময় পাখিদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকার ব্যবস্থা আমাদের রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কেইপিজেড হল সম্পূর্ণ পরিবেশ বান্ধব একটি শিল্প জোন।এসব লেকের আশপাশে ২৭ লক্ষ গাছ রোপন করা হয়েছে। সাথে আছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য তাই প্রতিবছর আমাদের লেক সমূহে ঝাকে ঝাকে নানান রকমের অতিথি পাখির আগমন হয়ে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রমা সেন্টার না থাকায় দুর্ঘটনায় আহত অনেকেই প্রাণ হারান
পরবর্তী নিবন্ধবোধনের ৩৭ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান আজ