আমাদের সমাজে একটি আলোচিত ও প্রচারিত শব্দ হলো অটিজম। যার অর্থ হলো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ। মস্তিষ্কের একটি বিকাশজনিত সমস্যার নাম হল অটিজম। এই বিকাশজনিত সমস্যাটি সাধারণত শিশুর শৈশবের শুরুর দিকেই দেখা যায় যেখানে সামাজিক যোগাযোগ, বৌদ্ধিক বিকাশ ও অন্যান্য দক্ষতাগুলোর বিকাশ সার্বিক পথে হয় না বা বিকাশ বিলম্বিত হয়। অটিস্টিক শিশুরা নিজের মধ্যে নিজেকে নিমগ্ন রাখতে চায় এবং অন্যের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এরা অনীহা দেখায়। নিজের জগতেই সীমাবদ্ধ থাকতে বেশি পছন্দ করে। দেশে প্রতি দশ হাজার মানুষের মধ্যে সতেরো জন অটিস্টিক। ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে অটিজমের সঠিক কারণ জানা যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের অটিজম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ মানুষ অটিস্টিক। ১৯৪৩ সালে আমেরিকার মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিও ক্যানার প্রথম মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে রোগটি শনাক্ত করে অটিজম শব্দটি ব্যবহার করেন। বলা হয়, শিশুর জন্মের প্রথম তিন বছরের মধ্যে এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। অটিজম এমন একটি বিকাশজনিত সমস্যা, যেখানে ব্যক্তির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ, সামাজিক আচরণ, সামাজিক চিন্তাসহ বাইরের জগৎ সম্পর্কে খুব কমই আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, অটিজমের পিছনে দুটি কারণ রয়েছে। এর একটি জিনগত, অপরটি পরিবেশগত সমস্যা। অটিস্টিক শিশুর প্রধান চিকিৎসা নিওরো বিহেভিওরাল থেরাপি। অতিরিক্ত আচরণ সমস্যা ও শারীরিক সমস্যার জন্য মেডিকেল চিকিৎসা এবং বিশেষ স্কুলে শিক্ষা প্রদান করা যায়। তবে যেসব অভিভাবকদের সে সুযোগ থাকে না আমাদের মত দেশে তেমন অনেক অভিভাবক প্রাথমিক শিক্ষার জন্য সাধারণ বিদ্যালয়ে ভর্তি করান অটিস্টিক শিশুদের। তখন তাদের প্রতি বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ও অতিরিক্ত মনোযোগী হতে হয়। কারণ দেখা যায় এসব শিশুরা স্বাভাবিক শিশুর চেয়েও বেশি সংবেদনশীল ও আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে। বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশু আবার অত্যন্ত সম্ভবনাময়। প্রতি দশ জন অটিস্টিক শিশুর মধ্যে একজনের ছবি আাঁকায়, গানে, গণিতে বা কম্পিউটারে প্রচণ্ড দক্ষতা থাকে। স্বল্প ও মধ্যম মাত্রার অটিজম প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে এবং সঠিকভাবে পরিচর্যা ও শিক্ষা পেলে রোগের উপসর্গ অনেকাংশে কমানো যেতে পারে। তাই অটিস্টিক শিশুদের প্রতি বাবা মায়ের পরই শিক্ষকের ও এই শিশুদের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে হবে। অটিস্টিক শিশুরাও আমাদের অন্যান্য শিশুর মতোই পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের সম্পদ। তাদের ও রয়েছে অন্য শিশুদের মতই ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার। তাদের বিকশিত করে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার।












