দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি বাড়াতে অঞ্চলভিত্তিক কৃষি সম্ভাবনা ধরে গবেষণায় জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রকাশিত ‘১০০ কৃষি প্রযুক্তি অ্যাটলাস’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘গবেষণাকে আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিই। আমি এখনো মনে করি, গবেষণাকে আরো বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।’ খবর বিডিনিউজের।
দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য চাহিদা বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের মাটি খুব উর্বর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলতেন, ‘আমার মাটি এত উর্বর যে সেখানে একটা বীজ পড়লেই একটা গাছ হয়, গাছে ফল হয়। তাহলে এদেশের মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে কেন।’ সেই চিন্তা থেকেই তিনি সমস্ত পদক্ষেপ নিতেন। এর জন্যই গবেষণা একান্তভাবে প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। তার আগে গবেষণা ছিল উপেক্ষিত। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেয়। কৃষি নিয়ে গবেষণা যত বাড়বে, তত বেশি কৃষিপণ্য উৎপাদন করা যাবে। কৃষির উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের কৃষিপণ্য যাতে মানসম্মত করা যায়, সেজন্য পরীক্ষাগার আরও তৈরি করা দরকার। সেই সাথে আমাদের অঞ্চলভিত্তিক পরীক্ষাগার নির্মাণ করা প্রয়োজন। দেশের মাটির উর্বরতা এবং পরিবেশ বিবেচনা করে আমাদের কোন অঞ্চলে কোন ফসল সবচেয়ে ভালো এবং বেশি উৎপাদন হয় এবং উন্নত মানের উৎপাদন হতে পারে, তারও একটা জোনম্যাপ করা দরকার। এই ম্যাপিংটা খুব বেশি প্রয়োজন।
দেশীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও যেন রপ্তানি করা যায়, সেটা মাথায় রেখে কৃষি পরিকল্পনা সাজানোর ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী।
১০০ কৃষি প্রযুক্তি অ্যাটলাস : গত দশ বছরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল-বিএআরসির উদ্যোগে যে ৫৯১টি প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে, তার মধ্যে থেকে ১০০টি সেরা প্রযুক্তি বাছাই করে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে ‘১০০ কৃষি প্রযুক্তি অ্যাটলাস’-এ। জাতীয় কৃষি গবেষণা সিস্টেমের (এনএআরএস) ‘অ্যাপেঙ বডি’ হিসেবে বিএআরসি ১৩টি জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ে করে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের এই কাজ করছে ২০০৯ সাল থেকে। অ্যাটলাসে ধানের ১৪টি, পাটের ৮টি, চিনির ৪টি, গম ও ভুট্টার ৫টি, ডাল, তেলবীজ ও মশলার ৮টি, শাকসবজির ৮টি, ফলের ১০টি, চায়ের ৫টি, তুলার ৫টি, বনজ এবং বাঁশের ৫টি, রেশম চাষের ৪টি, মৃত্তিকা উন্নয়নের ৪টি, হাঁস-মুরগি ও পশুসম্পদ পালনের ৫টি, মৎস্য ও জলজ প্রাণী পালনের ৮টি, সেচ ও বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ৩টি এবং কৃষি যন্ত্রপাতি প্রযুক্তির ৪টিসহ মোট ১০০টি কৃষি প্রযুক্তি অর্ন্তভুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারে ২৫টি সাফল্যের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই অ্যাটলাসে, যেখানে বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রযুক্তির প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছে।
সারা দেশে একশ শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমার চিন্তা আছে এটা যে ওইসব অঞ্চলে কী ধরনের কাঁচামাল আমরা উৎপাদন করতে পারি, বিশেষ করে আমার কৃষিপণ্য, সেই কৃষিপণ্যটা কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায় বা কৃষি প্রক্রিয়াজাত করা যায়, যা আমি বিদেশে রপ্তানি করতে পারি। আমি যদি সেইসব অঞ্চলে সেই ধরনের বিনিয়োগের ব্যবস্থা করি দেশি -বিদেশি সব বিনিয়োগের, তাহলে কিন্ত বাংলাদেশের মানুষের আর কষ্ট থাকবে না, আর্থিকভাবেও আমরা আরো স্বচ্ছল হতে পারব, আর রপ্তানিযোগ্য পণ্য আমাদের বৃদ্ধি পাবে।
কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলতে গবেষকদের আরও বেশি সহযোগিতা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তারা যেন নির্বিঘ্নে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারেন, সেজন্য তাদের কীভাবে প্রণোদনা দেওয়া যায়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ চান তিনি।