অজিত রায়। ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার/ সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার আমার অহংকার’ এমনই অসংখ্য দেশাত্মবোধের গানের স্রষ্টা। বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক। অজিত রায় ১৯৩৮ সালের ১০ অক্টোবর রংপুর জেলার সোনালুর কুটিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন অজিত রায়। কৈশোরেই তবলা বাজানো শিক্ষা গ্রহণ করেন। পাশাপাশি, সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি হয় তার মা কণিকা রায়ের হাতে।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন তাকে প্রভাবিত করায় বাংলা ভাষাকে ঘিরে গান রচনায় ও পরিবেশনায় মনোনিবেশ করেন। এরপর ১৯৬৩ সাল থেকে রেডিওতে গান গাইতে শুরু করেন। পরে টেলিভিশন প্রচলনের পর থেকে সেখানেও গান গেয়েছেন তিনি। একাত্তরে তার লেখা ও সুর করা বহু গান মুক্তিযোদ্ধাদের জুগিয়েছে মনোবল। বরেণ্য এই শিল্পী ষাটের দশকে পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচোখ উপেক্ষা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি মাঠে ময়দানে গিয়ে জনপ্রিয় করে তোলেন। এই গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পেছনে রয়েছে শিল্পী অজিত রায়ের বিশেষ অবদান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার হওয়া অজিত রায়ের লেখা ও সুর করা বহুগান রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীসহ সাধারণ মানুষের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করতে সাহায্য করে। এসব গানের মধ্যে রয়েছে ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’, ‘হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব’, ‘আমি যুগে যুগে আসি’, ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে’ প্রভৃতি। স্বাধীনতার পর অজিত রায় সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ বেতারে যোগ দেন।
১৯৯৬ সালে তিনি তার কর্মস্থল থেকে অবসর নিলেও মৃত্যুর পুর্বমুহূর্ত পর্যন্ত নিবেদিত ছিলেন সঙ্গীতে। নিজের লেখা ও সুর করা গানের পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি, দেশাত্মবোধক গান ও গণসঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সময় অজিত রায় প্লে-ব্যাকও করেছেন। সুরুজ মিয়া নামক চলচ্চিত্রে তিনি একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন।অজিত রায় ২০০০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। এছাড়াও, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। কীর্তিমান সঙ্গীতশিল্পী অজিত রায় ফুসফুস সংক্রমণ ও বার্ধক্যজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ২০১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।