অজিতকুমার গুহ : কীর্তিমান রবীন্দ্রগবেষক

| মঙ্গলবার , ১২ নভেম্বর, ২০২৪ at ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

অজিতকুমার গুহ (১৯১৪১৯৬৯)। প্রগতিশীল চিন্তার বাহক, আপসহীন আদর্শবান ব্যক্তিত্ব, স্বাধীনচেতা বুদ্ধিজীবী, খ্যাতনামা লেখক ও রবীন্দ্রগবেষক। বৈরী পরিবেশে দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিকাশে এবং মানবতার মূল্যবোধ ও সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াইয়ে যে অবদান রেখে গেছেন, তার জন্য তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। অজিতকুমার গুহ ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ ই এপ্রিল কুমিল্লা শহরের সুপারিবাগানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নৃপেন্দ্রমোহন গুহ। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কুমিল্লার ঈশ্বর পাঠশালা থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আই. , ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে বি. এ এবং কলকাতা থেকে বাংলায় এম. এ পাস করেন। পরে তিনি বি.টি পরীক্ষায়ও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হন।

অজিতকুমার ১৯৪০৪২ পর্যন্ত শান্তিনিকেতনে ছিলেন। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার শান্তিনিকেতন থেকে ফিরে এসে ঢাকার প্রিয়নাথ হাইস্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় ছয় বছর এই স্কুলে শিক্ষকতা করার পর ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জগন্নাথ কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও পরে বিভাগীয় প্রধান হন। একজন মুক্তচিন্তার মানুষ হিসেবে এদেশের অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ সাহিত্যসংস্কৃতি চর্চার ধারা নির্মাণে তাঁর অবদান ও সাফল্য অপরিসীম। রবীন্দ্রসাহিত্যের অধ্যাপক এবং সুবক্তা হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল। একজন কৃতী সাহিত্য সমালোচক হিসেবে সর্বমহলে অজিতকুমার গুহ ছিলেন সমাদৃত। সম্পাদনায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থঃ মেঘদূত, কৃষ্ণকান্তের উইল, গল্পগুচ্ছ, সোনার তরী ও গীতাঞ্জলি। এছাড়াও সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তিনি বহু প্রবন্ধ রচনা করেন। রবীন্দ্রসাহিত্য ও সংগীত বর্জনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী অন্যতম পুরোধা অধ্যাপক অজিতকুমার গুহ ছিলেন কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলা এবং মাসিক কচি ও কাঁচার অন্যতম উপদেষ্টা। ছোটদের তিনি অনেকগুলো মূলবান রচনা উপহার দিয়েছেন। এগুলো মাসিক কচি ও কাঁচা, টাপুরটুপুর, কচিকাঁচার আসর এবং রক্তসূর্য, লাল পলাশ বিক্ষুব্ধ বাংলা ও অরনি সংকলনে প্রকাশিত হয়।

তাঁর উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ রচনাগুলো হলোঃ উৎসবের আলো, একটি ঘোড়ার অপমৃত্যু, একুশে ফেব্রুয়ারি হবে, একুশের চিন্তা, কালোব্যাজ, ডাক, পদ্মার কবি রবীন্দ্রনাথ, বুলু, বাঘিনী, কবিয়াল রমেশ শীল, বোকার হাতী, ওরাও কাঁদে, যা দেখেছি যা পেয়েছি তুলনা তার নাই, যে ফুল শুকাবে না, রবীন্দ্রকথা, সাতাশে এপ্রিল, সেদিন আর এদিন ও হোসেনের মা। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ই নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবনের পথে নিন্দার প্রভাব
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের শ্রম আইন এবং গার্মেন্টস শ্রমিকদের অধিকার ও চ্যালেঞ্জ