অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত : বাংলাসাহিত্যে আধুনিক ধারার সার্থক রূপকার

| রবিবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত (১৯০৩১৯৭৬) । রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের পরবর্তী সময়ে ‘কল্লোল যুগে’ যাঁরা সাহিত্য জগতে বিশেষ আলোড়ন তুলেছিলেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তাঁদেরই একজন। মূলত গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতিমান তার সৃষ্টিতে অতি আধুনিকতার প্রভাব সুস্পষ্ট। আর এর মধ্য দিয়েই তিনি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে অনন্য হয়েছেন। ‘নীহারিকা দেবী’ ছদ্মনামেও লিখেছেন তিনি। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পিতার কর্মস্থল নোয়াখালী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার পরিবারের আদি নিবাস ছিল বর্তমান মাদারীপুর জেলায়। তার বাবা রাজকুমার সেনগুপ্ত নোয়াখালী আদালতের আইনজীবী ছিলেন। অচিন্ত্যকুমারের শৈশব, বাল্যজীবন, ও প্রাথমিক শিক্ষা নোয়াখালীতেই সম্পন্ন হয়।

তিনি ১৯২০ সালে সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯২২ সালে সাউথ সাবার্বান কলেজ (বর্তমান আশুতোষ কলেজ) থেকে আই. . এবং ১৯২৪ সালে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্সসহ বি. . পাস করেন। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে এম. এ ও বি. এল ডিগ্রি অর্জন করেন। অচিন্ত্যকুমার ১৯২৫ সালে কল্লোল পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্ব নেন। তিনি বিচিত্রায়ও কিছুদিন কাজ করেন। ১৯৩১ সালে তিনি অস্থায়ী মুন্সেফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ক্রমে সাবজজ, জেলা জজ ও লকমিশনের স্পেশাল অফিসার পদে উন্নীত হয়ে ১৯৬০ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

চাকরিসূত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়িয়েছেন, অর্জন করেছেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। তাঁর কোনো না কোনো রচনায় এর সার্থক রূপায়ন ঘটেছে। তার লেখায় বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণি ও তাদের জীবনধারা। গল্প ও উপন্যাসের পাশাপাশি কবিতা ও জীবনীগ্রন্থ রচনায় বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। প্রথম উপন্যাস ‘বেদে’ তাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া ‘কাকজ্যোৎস্না’, এবং ‘প্রথম কদম ফুল’ তাঁর উল্লেখযোগ্য দুটি উপন্যাস।

গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘অকাল বসন্ত’, ‘যতনবিবি’, ‘হাঁড়ি মুচি ডোম’ ইত্যাদি। ছোটগল্পগুলোতে লেখক নিপুণভাবে এঁকেছেন সমাজ জীবনের নানা চালচিত্র। কবিতায়ও তিনি অনবদ্য। ‘আমরা’, ‘প্রিয়া ও পৃথিবী’, ‘নীল আকাশ’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে তাঁর রোম্যান্টিক ভাবালুতার পাশাপাশি গণমুখী চেতনার প্রভাবও প্রতীয়মান। স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘কল্লোলযুগ’ সুখপাঠ্য একটি রচনা। চারখণ্ডে রচিত রামকৃষ্ণের জীবনী ‘পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ’ গ্রন্থটিও চমৎকার। ১৯৭৬ সালের ২৯ জানুয়ারি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধব্রাহ্মণবাড়িয়া’য় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চাই