অঘোষিত ধর্মঘট, অসহনীয় দুর্ভোগ

চাঁদাবাজির অভিযোগে ৫ জন গ্রেপ্তারের পর ১২ রুটে চলেনি বেশিরভাগ গণপরিবহন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৮ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ

চাঁদাবাজির অভিযোগে র‌্যাবের হাতে লাইনম্যান আটকের ঘটনায় বাস শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে নগরজুড়ে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। তবে এ ধর্মঘট নিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মধ্য থেকে বিভক্ত বক্তব্য পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল বলেন, ‘বুধবার অলংকার থেকে ৫জন লাইনম্যান গ্রেপ্তারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার নগরীর ১২ রুটের বাস, মিনিবাস হিউম্যান হলারের বেশিরভাগ চলেনি। তবে শ্রমিকদের এ ধর্মঘটে মালিকদের কোনো সমর্থন ছিল না। কারণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন হলে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি দিতাম। বৃহস্পতিবার বিকেলে আমরা মালিক শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছি। শুক্রবার থেকে গাড়ি স্বাভাবিকভাবে চলবে।’ শ্রমিকদের ধর্মঘটে মালিকদের সমর্থন ছিল না এমন বক্তব্যের বিরোধিতা করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মো. মুছা। তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘অলংকার মোড় থেকে ৫জন লাইনম্যান গ্রেপ্তারের ঘটনায় আমরা বৈঠক করে কিংবা ঘোষণা দিয়ে কোনো ধর্মঘট ডাকিনি। তবে মালিকরা গাড়ি বের করেননি, শ্রমিকরাও গাড়ি চালায়নি। আমরা এখনো বৈঠকে আছি। শুক্রবার থেকে যথারীতি গাড়ি চলাচল করবে।’
র‌্যাব-৭ সূত্রে জানা গেছে, অলংকার মোড় এলাকায় ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার দুপুরে নগরীর অলংকার মোড় থেকে মো. আজাদ (৩৪), মো. অহিদ (৩৮), মো. আরিফ হোসেন (৩০), নারায়ণ দে (৫১) এবং মো. সিদ্দিক হোসেনকে (৪৫) হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এসময় তাদের দেহ তল্লাশি করে চাঁদা আদায়ের নগদ ২১ হাজার ৮২০ টাকা জব্দ করে র‌্যাবের অভিযান পরিচালনাকারী টিম।
এ ব্যাপারে র‌্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার জানান, ‘অলংকার এলাকা থেকে ৫ জন পেশাদার গণপরিবহন চাঁদাবাজকে চাঁদাবাজির ২১ হাজার ৮২০ টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দিয়ে পাহাড়তলী থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।’
এদিকে মালিক-শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মজীবী মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ধর্মঘটের মধ্যে যেসব মিনিবাস ও হিউম্যান হলার চলেছে তারা দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেছে। অনেকে উঠানামা ১০ টাকা ঘোষণা দিয়েও গন্তব্যে যাত্রী নিয়েছে। তবে অটোরিকশা চলাচলকারী রুটগুলোতে কিছুটা স্বস্তিতে ছিল যাত্রীরা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে নগরীর কাপ্তাই সড়কের মাথা, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, অঙিজেন, টাইগারপাস, নিউমার্কেট, আন্দরকিল্লা, কাজির দেউড়ি ঘুরে দেখা গেছে, সকালে মোড়ে মোড়ে কর্মজীবী মানুষ ও স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও গাড়ি না পেয়ে অনেকে সিএনজি অটোরিকশা, রিকশায় করে বেশি ভাড়া খরচ করে গন্তব্যে গিয়েছেন। যেসব মিনিবাস ও হিউম্যান হলার চলাচল করেছে, সেগুলো বাদুরঝোলা করে যাত্রী নিয়েছে।
সকালে রাস্তার মাথা থেকে কোনো গাড়ি ছাড়েনি। যাত্রীরা উপায়ান্তর না দেখে, কোনো মিনিবাসে উঠে গেলে, দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করেন বাসের চালক
হেলপাররা। আবার যেসব যাত্রী প্রতিবাদ করেছেন, তাদের পথিমধ্যে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। মো. আমিন নামের এক যাত্রী বলেন, কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বহদ্দারহাট মোড় ৫টাকা ভাড়া হলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে ১০টাকা করে নিয়েছে হিউম্যান হলারগুলো। কয়েকজন যাত্রী বেশি ভাড়ার প্রতিবাদ করলে তাদের গাড়ি থেকে বাধ্য করে নামিয়ে দেওয়া হয়। অনেকে মান সম্মানের ভয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েই গাড়ি থেকে নেমেছেন।’
এ ব্যাপারে র‌্যাব-৭ এর সিইও লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে অলংকার মোড় এলাকা থেকে পরিবহনে চাঁদাবাজির টাকাসহ ৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা চাঁদাবাজ, তারা অপরাধী। চট্টগ্রামের যেখানেই চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটবে, র‌্যাব সেখানেই অ্যাকশন নেবে। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ২০ অক্টোবর
পরবর্তী নিবন্ধবাঁকে বাঁকে মৃত্যু ফাঁদ!