অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আমাদের পরিকল্পিত উপায়েই এগোতে হবে

| মঙ্গলবার , ৪ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সবশেষ তথ্যমতে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই অবস্থান দ্বিতীয়। একমাত্র ভারতই বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে। সমপ্রতি কানাডাভিত্তিক সংবাদ প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্ট আইএমএফের তথ্যের আলোকে করা জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। ১০৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক জিডিপির ভিত্তিতে ১৯১টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জিডিপির আকার ৩৯৭ বিলিয়ন বা ৩৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। জিডিপির ভিত্তিতে শীর্ষ ৫০-এ দক্ষিণ এশিয়ার আর কোন দেশ নেই।
’৯০-এর দশকে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করা বাংলাদেশকে এখন বিশ্বের রোল মডেল আখ্যা দিয়ে গত ২৮ জুলাই ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন সম্পর্কে অন্যদের যা শেখাতে পারে’ শীর্ষক এক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। লেখার শুরুটা হয়েছে এভাবে, ১৯৭১ সালে যে বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজনের একজন শিশু পাঁচ বছর পূর্ণ করার আগে মারা যেত, বর্তমানে সেই হার এখন ৩০ জনের মধ্যে একজনে নেমে এসেছে। যদি আরও বড় পরিসরে দেখা হয়, তবে হেনরি কিসিঞ্জারের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আখ্যা পাওয়া দেশটি এখন উন্নয়নের সফল এক দৃষ্টান্ত। সংবাদ মাধ্যমটির ভাষ্য, অতীতে নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশটি আজ অনেকটাই বদলে গেছে। মাথাপিছু জিডিপি বেড়েছে আটগুণ। নারীদের গড়ে সন্তান সংখ্যা দুজন। অর্থাৎ প্রতিটি সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তাদের ভাল রাখতে বাবা-মা এখন আরও বেশি ব্যয় করতে পারেন। ব্যাংকগুলোর কাছে শিল্প খাতে বিনিয়োগের মতো সঞ্চয়ও বেড়েছে। ফিন্যানসিয়াল টাইমসের নিবন্ধ মতে, রেনেসাঁ ক্যাপিটালের প্রধান অর্থনীতিবিদ চার্লি রবার্টসন বাংলাদেশের উন্নয়ন সাফল্যের পেছনে তিনটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো- সাক্ষরতা, বিদ্যুৎ এবং জন্মহার। রবার্টসন বলেন, ‘শিল্পোন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার ৭০ শতাংশের ওপরে থাকা, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ৩০০ কিলোওয়াট ঘণ্টার ওপর বিদ্যুত সরবরাহ এবং জন্মহার তিনটি শিশুর কম থাকা- বাংলাদেশ এই তিনটি সূচকেই উত্তীর্ণ। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিস্ট স্টেফান ডারকন বাংলাদেশের উন্নয়নের পেছনে তিনটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন।
এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন ‘পাঁচ দশকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে’ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গত পাঁচ দশকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন অগ্রগতি করেছে। এখন দেশে প্রবৃদ্ধির গতিপথ ধরে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধির হারকে আরও ত্বরান্বিত করতে একটি শক্তিশালী সংস্কার এজেন্ডা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রতিবেদনে একথা বলা হয়। রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত ‘দ্যা কান্ট্রি ইকোনমিক মেমোরেন্ডাম : চেঞ্জ অফ ফেব্রিক আইডেন্টিফাইস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রধান বাধাগুলো চিহ্নিত এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য কার্যকরী সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের যত ধাপ রয়েছে, বাংলাদেশ একের পর এক তা অতিক্রম করে চলছে। দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে মেগা প্রকল্প। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ পদ্মার বুক চিরে গৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। নগরজুড়ে অনুরণিত হচ্ছে মেট্রোরেলের প্রতিধ্বনি। অন্তরীক্ষে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে লড়াই করে এসেছে সমুদ্র বিজয়। জল-স্থল-অন্তরীক্ষের পর পাতালে হচ্ছে বিশাল উন্নয়ন যজ্ঞ। পাতালরেলও তাই আশা জাগাচ্ছে বাংলাদেশকে।
কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চার লেনের সড়ক, পায়রা সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র ও ২ ডজনের অধিক হাইটেক পার্কসহ দেশজুড়ে আজ চলছে এক বিশাল নির্মাণযজ্ঞ। আর এই যজ্ঞের প্রধান পুরোহিত বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি তাঁর পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে যাচ্ছেন সোনার বাংলা তৈরির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে। ড. শামসুল আলমের মতে, প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলো হচ্ছে : উন্নত মানবসম্পদ, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সৃষ্টি, অভিবাসী শ্রমিকের দক্ষতা উন্নয়ন, আয় বৈষম্য আবির্ভূত এক চ্যালেঞ্জ, দারিদ্র্যদূরীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সুশাসন নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি। একথা বলা বাহুল্য যে, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমতাভিত্তিক সমাজ এবং সমৃদ্ধ অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে, দেশের জনগণের সার্বিক মুক্তি অর্জন এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা নিশ্চিতকরণে আমাদের পরিকল্পিত উপায়েই এগোতে হবে। আর এই এগিয়ে যাওয়ার পথে আসা চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের প্রতিহত করতে হবে দৃঢ় হাতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে