অগ্নিঝুঁকিতে ৪৫ মার্কেট ৩০০ বহুতল ভবন

ফায়ার লাইসেন্সের আওতায় আসেননি ব্যবসায়ী ঝুঁকি থেকে নগরীর মার্কেটগুলোকে বের করে আনা যাচ্ছে না

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৩ মার্চ, ২০২২ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

অগ্নিঝুঁকিতে আছে চট্টগ্রাম নগরীর ৪৫টি মার্কেট ও ৩০০ বহুতল ভবন। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও মার্কেটে ফায়ার সার্ভিস থেকে চিঠি পাঠানো হলেও ব্যবসায়ীদের কোনো সাড়া মিলেনি। পরবর্তীতে মার্কেট ও ভবনগুলো চিহ্নিত করে লাল সাইনবোর্ড লাগানো হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। বিল্ডিং কোড অনুযায়ী প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তিন স্তরের অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলা হলেও নগরীতে দু’একটি বড় শপিং মল ছাড়া বাকি কোনোটিরই অগ্নিনিরাপত্তার সরঞ্জাম নেই। শুধু তাই নয়, অধিকাংশ ব্যবসায়ী ফায়ার লাইসেন্সের আওতায় আসেননি।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, নগরীর ৮টি ফায়ার স্টেশনের এলাকাভিত্তিক ছোট-বড় প্রায় ৪৫টি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট রয়েছে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলোর মধ্যে রয়েছে পৌর জহুর হকার্স মার্কেট, টেরীবাজার, রিয়াজুদ্দীন বাজার, তামাকুমণ্ডি লেইন, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, চালপট্টি ও শুটকিপট্টির ছোট-বড় বিভিন্ন মার্কেট। এর মধ্যে কয়েকটি মার্কেটের সড়ক এত সরু যে, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক গাড়ি প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া আগুন নেভানোর জন্য পানির কোনো উৎসও নেই। বেশিরভাগ মার্কেটের দ্বিতীয়তলা থেকে উপরের দিকে গুদাম। কোনো কোনো ভবনের উপরের অংশ আবাসিক হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে। আবার দেখা যায়, মার্কেট ও ভবনগুলোর গা ছুঁয়ে বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, কোনো কারণে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এসব মার্কেটে আগুন লাগলে বিপুল পরিমাণ সম্পদহানির আশঙ্কা রয়েছে। ভবন থেকে বের হতে না পেরে ধোঁয়ার কারণে ঘটবে প্রাণহানি। তবে একটি মার্কেটের এক তৃতীয়াংশ দোকানেরও যদি ৫ কেজি ওজনের ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকে, তাহলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা আরো জানান, ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন ও ফায়ার সেফটি প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য আমরা অনেক আগে পৌর জহুর হকার্স মার্কেট, টেরীবাজার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। তারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন বললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। রিয়াজুদ্দীন বাজার ও তামাকুমণ্ডি লেইনের অবস্থাও নাজুক। এখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের কার্যত কিছু করার থাকবে না। তাই ব্যবসায়ীদেরকে নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। আমরা ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিন ধরে অগ্নিনিরাপত্তার সরঞ্জাম রাখার জন্য সচেতন করে যাচ্ছি। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, বেশিরভাগ ব্যবসায়ী তা আমলে নিচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটলে ব্যবসায়ীরা কিছুদিন ফায়ার সার্ভিসের অফিসে দৌড়ঝাঁপ করেন। আবার ফায়ার সার্ভিস থেকে চাপ দিলেও কয়েকদিন দৌড়ঝাঁপ করা হয়। পরবর্তীতে আর কোনো আগ্রহ দেখান না।
চট্টগ্রাম শহরের ভবনগুলোর অগ্নি নিরাপত্তার অবস্থা বেহাল উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিসের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, নগরের ৩ লাখ ভবনের মধ্যে ২ লাখ ৯১ হাজার ভবন অগ্নিঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে ৪৫টি মার্কেট ও ১২টি বস্তি চরম ঝুঁকির মধ্যে। আমরা বিষয়টি সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএকে জানিয়েছি। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে অগ্নিঝুঁকি থেকে নগরীর মার্কেটগুলোকে বের করে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখেতাব বর্জন করলেন জয়নুল আবেদিন ও আবদুল হাকিম
পরবর্তী নিবন্ধবাকলিয়ায় নগদ অর্থসহ ৭ জুয়াড়ি আটক