দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সার উৎপাদনকারী অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে অন্তত দুইশ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কারখানাটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। বিসিআইসির চেয়ারম্যানের সাথে গতকাল কারখানার শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিসিআইসির চেয়ারম্যান এবং পরিচালক গতকাল বিকেল থেকে কারখানাটিতে অবস্থান করছেন। রাতে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে সিইউএফএল-এর ভবিষ্যত নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) গত বেশ কিছুদিন ধরে নানা সংকট চলছে। সার পরিবহন নিয়ে অভিযোগের পাহাড় জমে ওঠার পাশাপাশি কারখানার কয়েক কোটি টাকার ভূমি বেহাত হওয়ার একটি বিষয় নিয়েও পক্ষ-বিপক্ষে অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ চলে। এরই মাঝে ওভারটাইমসহ কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন তুঙ্গে উঠেছে। শ্রমিকেরা কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ঘেরাও করে রাখে। পরবর্তীতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক নেতাকে বদলি করা হয়। এর দিন কয়েকের মধ্যে বদলি করা হয় কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। সবকিছু মিলে অস্থিতিশীল একটি সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কারখানার অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের লিপারমারে প্রাইমারি রিফরমারি ওয়েস্টেস বয়লারে আগুন লাগে। শুরু থেকে এই অগ্নিকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কারখানা সংশ্লিষ্টদের অনেকের ধারণা দায়িত্বহীনতার কারণেই আগুন লেগেছে। কারখানার যে পয়েন্টে আগুন লেগেছে সেখানে দায়িত্বশীলদের কেউ অগ্নিকাণ্ডের সময় ছিলেন না। কারখানায় কী ভাবে বা কেন আগুন লাগলো তা তদন্ত করতে বিসিআইসির মেনটেনেজ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সুদীপ মজুমদারকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সংঘটিত ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ব্যাপারে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ঘটনার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ এবং অনুসন্ধান শুরু করলেও গতকাল পর্যন্ত রিপোর্ট দিতে পারেননি।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের যেখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে সেখানের গ্যাস-ক্যাটের তাপমাত্রা থাকে কমপক্ষে এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওখানে আগুন লাগলে এত তাপের মধ্যে পানি দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু মঙ্গলবারের অগ্নিকাণ্ডে ওই আগুনে পানি ব্যবহার করা হয়। যাতে ক্ষয়ক্ষতি বেড়েছে। অগ্নিকাণ্ডের শিকার হওয়া গ্যাস ক্যাট ঠাণ্ডা হতে বেশ সময় লাগছে বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, এটি ঠাণ্ডা হওয়ার পর সবকিছু সরজমিনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই কেবল ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যাবে।
ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সরজমিনে দেখতে বিসিআইসির চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ এমদাদুল হক এবং বিসিআইসির পরিচালক (বাণিজ্যিক) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম গতকাল বিকেল পৌনে ৪টার ফ্লাইটে চট্টগ্রাম পৌঁছান। বিমানবন্দর থেকে তারা সরাসরি সিইউএফএল কারখানায় গিয়ে সিইউএফএল গেস্ট-হাউজে অবস্থান নেন। সন্ধ্যা ৭টায় উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে বিসিআইসি চেয়ারম্যান এবং শীর্ষ কর্মকর্তারা অগ্নিকাণ্ডের কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে দুইশ’ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা সিইউএফএল কারখানার সার্বিক অবস্থায় বিসিআইসি চেয়ারম্যান অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
বৈঠকে সিইউএফএল-এর বদলিকৃত (দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান, নতুন এমডি (দায়িত্ব পাননি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানসহ কারখানার শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণাধীন সিইউএফএল কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ১০০ টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়। এর বাজারমূল্য প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা। এছাড়া এই কারখানার আ্যমোনিয়া প্ল্যান্টে দৈনিক ৬০০ টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করা হয়। এর বাজার দর প্রায় সোয়া চার কোটি টাকা। এতে করে সিইউএফএল বন্ধ থাকার ফলে শুধুমাত্র উৎপাদন ক্ষতি হচ্ছে দৈনিক সাড়ে ছয় কোটি টাকা।