অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি : বাংলাদেশে ব্র্যান্ড এনগেজমেন্টে জেন জি কে টার্গেট করার নতুন অস্ত্র

এম. এ. মুকিত চৌধুরী | সোমবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতি বিভিন্ন শিল্পে নতুন যুগের সূচনা করেছে, এবং বাংলাদেশও এই পরিবর্তন থেকে বাদ যায়নি। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষত জেন জেড (১৮২৪ বছর বয়সী), প্রযুক্তির সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত এবং তারা দ্রুত পরিবর্তনশীল ডিজিটাল পৃথিবীকে অনুসরণ করে। তাদের জন্য নতুন প্রযুক্তি যেমন অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি, ব্র্যান্ডগুলোর কাছে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করছে। এই প্রযুক্তিগুলির মাধ্যমে, ব্র্যান্ডগুলো তাদের মার্কেটিং কৌশল পরিবর্তন করে গ্রাহকদের আরও আকর্ষণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারছে।

অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি কীভাবে কাজ করে?

অগমেন্টেড রিয়ালিটি একটি প্রযুক্তি যা বাস্তব জগতের উপর ডিজিটাল উপাদান যুক্ত করে, যেমন স্মার্টফোন বা ট্যাবলেটের মাধ্যমে পণ্য বা ব্র্যান্ডের ভার্চুয়াল প্রেজেন্টেশন দেখানো। উদাহরণস্বরূপ, একটি স্মার্টফোনের মাধ্যমে, ব্যবহারকারী একটি পোশাক বা গয়না দেখতে পারে এবং সেই পণ্যটি কেমন হবে তা বাস্তবের সাথে মেলানোর চেষ্টা করতে পারে। অজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্র্যান্ডগুলি তাদের পণ্য বা সেবার ভার্চুয়াল ট্রায়াল এবং অটোমেটেড পণ্য পর্যালোচনার সুবিধা দিতে পারে।

ভার্চুয়াল রিয়ালিটি হলো একটি প্রযুক্তি যা ব্যবহারকারীকে পুরোপুরি নতুন এবং সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল পরিবেশে প্রবেশ করায়। এটি একটি ইন্টারেক্টিভ অভিজ্ঞতা প্রদান করে যেখানে ব্যবহারকারীরা পূর্ণরূপে ভার্চুয়াল দুনিয়ার সাথে যুক্ত হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার করে গ্রাহকরা একটি ‘শ্যালো ট্যুরিজম’ অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন বা ভার্চুয়ালি একটি পণ্য বা সেবা পরীক্ষা করতে পারেন।

Gen Z র জন্য কেন অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি গুরুত্বপূর্ণ?

জেন জেড বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত। তারা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে এবং ইন্টারেক্টিভ অভিজ্ঞতা খুঁজতে পছন্দ করে। তাই ব্র্যান্ডগুলোর জন্য অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের আগ্রহী গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা একটি কার্যকরী কৌশল হতে পারে।

এই প্রজন্মের তরুণরা সাধারণত সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট, এবং মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করতে অভ্যস্ত এবং তারা পছন্দ করে এমন কন্টেন্ট খুঁজে বের করতে। তাদের জন্য, অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এর মাধ্যমে তৈরি করা একটি ইন্টারেক্টিভ এবং ইনভলভিং অভিজ্ঞতা অনেক বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে।

বাংলাদেশি ব্র্যান্ডগুলি অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার কীভাবে করতে পারে?

ভার্চুয়াল ট্রাইঅন সিস্টেম: পোশাক, গয়না, স্নিকার্স বা মেকআপের মতো পণ্যগুলির জন্য অগমেন্টেড রিয়ালিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ট্রাইঅন সিস্টেম তৈরি করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের ফ্যাশন ব্র্যান্ড তাদের গ্রাহকদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে পণ্যগুলো পরখ করতে দিতে পারে। এতে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন পণ্য ভার্চুয়ালি ট্রাই করতে পারবেন এবং তাদের পছন্দের পণ্যটি নির্বাচন করতে সহায়তা করবে।

বিশ্বের বড় ব্র্যান্ড যেমন IKEA এবং Sephora AR প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের তাদের পণ্য ভার্চুয়ালি ট্রাই করার সুবিধা দিয়েছে। IKEA তাদের IKEA Place অ্যাপে অগমেন্টেড রিয়ালিটি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকদের ঘরের মধ্যে আসবাবপত্র কেমন দেখাবে তা দেখানোর সুবিধা প্রদান করেছে।

Nike এর Nike Training Club অ্যাপটি একটি শক্তিশালী ভার্চুয়াল রিয়ালিটি পন্থা গ্রহণ করেছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের শরীরচর্চা ও ফিটনেস রুটিনকে আরও উন্নত করতে পারে। যদিও এটি পুরোপুরি ভার্চুয়াল রিয়ালিটি নয়, তবে এটি Mixed Reality প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের একটি ইন্টারেক্টিভ ফিটনেস অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

কীভাবে কাজ করে?

Nike Training Club অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফিটনেস রুটিন প্রদান করে, এবং এর মধ্যে রয়েছে ভিডিও ট্রেনিং সেশন। অ্যাপটির মাধ্যমে, ব্যবহারকারীরা ভার্চুয়াল কোচদের সাথে সেশন করতে পারেন, যা তাদের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকের মতো কাজ করে।

অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের প্রতিটি কাজের জন্য বিভিন্ন লেভেল ও ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ প্রদান করে, এবং এটি ব্যবহারকারীদের প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে তাদের জন্য উপযুক্ত পরামর্শ প্রদান করে।

ব্র্যান্ড এনগেজমেন্ট: Nike এর এই অ্যাপটি একটি Personalized VR Experience তৈরি করেছে যা গ্রাহকদের তাদের স্বাস্থ্য ও ফিটনেস উন্নত করতে সাহায্য করে। অগমেন্টেড রিয়ালিটি বা ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এর মাধ্যমে এই ধরনের অভিজ্ঞতা তাদের জন্য আরও ইন্টারেক্টিভ এবং এন্টারটেইনিং হয়ে ওঠে।

Nike, এর ফিটনেস অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, কেবল তাদের পণ্য বিক্রি না করে বরং একটি জীবনধারা বা লাইফস্টাইল উপস্থাপন করছে, যা গ্রাহকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ইন্টারেক্টিভ বিজ্ঞাপন: ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি ইন্টারেক্টিভ বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন তৈরি করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের পরিবহন কোম্পানি তাদের গ্রাহকদের ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মাধ্যমে তাদের অ্যাপ্লিকেশন বা সার্ভিস সম্পর্কে একটি বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারে। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারী সহজেই বুঝতে পারবে কীভাবে একটি রাইড বুক করা হয় বা অন্যান্য সেবা গ্রহণ করা হয়।

Coca-Cola এর Happiness Machine একটি অসাধারণ উদাহরণ যেখানে ব্র্যান্ডটি ইন্টারেক্টিভ মার্কেটিং এবং দর্শকদের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এবং Interactive Technology ব্যবহার করেছে। এই ক্যাম্পেইনটি ২০১০ সালে শুরু হয়েছিল, যেখানে Coca-Cola ভেন্ডিং মেশিনের মধ্যে একটি বিশেষ প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করেছিল যা ব্যবহারকারীদের কাছে সুখ এবং আনন্দের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসে।

কীভাবে কাজ করে?

Happiness Machine এ গ্রাহকরা যখন একটি Coca-Cola কিনতে যায়, তখন মেশিনটি আচমকা তাদের সামনে বিভিন্ন সুখময় এবং আনন্দজনক সিচুয়েশন উপস্থাপন করে। যেমন, মেশিন থেকে একাধিক ক্যান বের হয়ে আসতে দেখা যায়, অথবা কখনও কখনও মেশিনের পাশে ছোট্ট একটি পারফর্মিং মঞ্চ তৈরি হয় যেখানে সঙ্গীত বাজানো হয়।

এই ইন্টারেক্টিভ অভিজ্ঞতা ব্র্যান্ডের প্রচারণাকে গ্রাহকদের জন্য আরও আনন্দদায়ক এবং মনোমুগ্ধকর করে তোলে, এবং এর মাধ্যমে Coca-Cola তাদের গ্রাহকদের আনন্দের মুহূর্তগুলির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চেয়েছে।

ব্র্যান্ড এনগেজমেন্ট: Cocca-Cola এর Happiness Machine ক্যাম্পেইনটি একটি ভার্চুয়াল এবং ইন্টারেক্টিভ অভিজ্ঞতা ছিল যা গ্রাহকদের অবাক করে দেয় এবং তাদের মজার মুহূর্ত তৈরি করতে সহায়তা করেছে। এটি সোশ্যাল মিডিয়াতেও ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছিল, যা ভ্যালু অ্যাডেড কন্টেন্ট হিসেবে ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে আরও বিস্তার লাভ করেছে।

সামাজিক মিডিয়া ইন্টিগ্রেশন: অজ ফিল্টার ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ইন্টারেক্টিভ ক্যাম্পেইন চালানো যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাদের গ্রাহকদের জন্য অগমেন্টেড রিয়ালিটি ফিল্টার তৈরি করে সামাজিক মিডিয়ায় শেয়ার করতে উৎসাহিত করতে পারে। এভাবে তারা তাদের ব্র্যান্ডের সঙ্গে গ্রাহকদের আরও সক্রিয়ভাবে সংযুক্ত করতে পারে।

Snapchat এবং Instagramএর অজ ফিল্টার ব্যবহার করার মাধ্যমে ব্র্যান্ডগুলো তাদের গ্রাহকদের নতুন উপায়ে এনগেজ করতে সক্ষম হয়েছে। L’Oreal তাদের AR Try-ON ফিল্টার ব্যবহার করে মেকআপের ভার্চুয়াল ট্রাই করার সুবিধা প্রদান করেছে।

L’Oreal এর AR Try-ON প্রযুক্তি, গ্রাহকদের মেকআপ ট্রায়াল করার জন্য অগমেন্টেড রিয়ালিটি ব্যবহার করে। এটি তাদের ব্র্যান্ডিং কৌশলের অন্যতম উদাহরণ, যা গ্রাহকদের জন্য একটি অত্যন্ত ইন্টারেক্টিভ এবং পছন্দসই অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে।

কীভাবে কাজ করে?

L’Oreal তাদের AR Try-ON প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে মেকআপ ট্রায়াল করার সুযোগ প্রদান করে। এই অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে, গ্রাহকরা তাদের মুখে ভার্চুয়ালি লিপস্টিক, ফাউন্ডেশন, আইশ্যাডো ইত্যাদি পণ্য পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

ব্যবহারকারীরা খুব সহজে তাদের মুখের বিভিন্ন অংশে মেকআপ পরীক্ষা করতে পারেন, এবং এর মাধ্যমে তারা নিজেদের পছন্দের পণ্য চিহ্নিত করতে পারেন।

ব্র্যান্ড এনগেজমেন্ট: L’Oreal এর AR Try-ON প্রযুক্তি গ্রাহকদের বিশেষ অভিজ্ঞতা দেয় এবং তাদেরকে Personalized Product Experience প্রদান করে, যেখানে তারা কোনো পণ্যটি কিনার আগে তা ব্যবহার করতে পারে।

এর মাধ্যমে, L’Oreal তাদের গ্রাহকদের মাঝে পণ্য সম্পর্কিত আগ্রহ এবং আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, এবং তাদের ব্যবসায়িক পারফরম্যান্সকে উন্নত করতে সাহায্য করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সপেরিয়েন্স ও উদাহরণ:

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিং ক্ষেত্রেও অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। Harvard University এবং Stanford University এর মতো প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের ক্যাম্পাস ট্যুর এবং শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্য VR ব্যবহার করছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়ালি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস দেখতে পারছে এবং তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করতে পারে।

বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি যদি অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার করে তাদের ক্যাম্পাস ভিজিটেশন প্রক্রিয়া ভার্চুয়াল করে দেয়, তবে বিদেশি শিক্ষার্থীরা সহজেই তাদের ভর্তির সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহণযোগ্যতা এবং আকর্ষণ বাড়াবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই শ্যালো ট্যুরিজম অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তাদের ক্যাম্পাসে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে পারবে। অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস, একাডেমিক ফ্যাসিলিটিজ এবং বিভিন্ন ল্যাব সেন্টার দেখতে পাবে, যা তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিতে সহায়ক হতে পারে।

ফুড ডেলিভারি সেবায় অগমেন্টেড রিয়ালিটি

বাংলাদেশের ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম অগমেন্টেড রিয়ালিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের খাদ্য পছন্দের জন্য শ্যালো ট্যুরিজম অভিজ্ঞতা প্রদান করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবহারকারীরা অ্যাপের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি তাদের পছন্দের খাবারের ছবি দেখতে পারবে এবং এটি তাদের মোবাইল স্ক্রীনে দেখতে পাবে যেন এটি তাদের সামনে উপস্থিত।

এই প্রযুক্তি গ্রাহকদের খাবারের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করবে এবং তাদেরকে আরও সন্তুষ্ট করবে। এটি অর্ডার করার আগে খাবারের সঠিক দৃশ্য দেখিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে। অজ এর মাধ্যমে খাদ্য বা মেনু প্রদর্শনটি এমনভাবে হবে যাতে গ্রাহকরা যেন তাদের অর্ডার করা খাবার একেবারে বাস্তবিকভাবে দেখতে পায়।

ফ্যাশন ব্র্যান্ডের ভার্চুয়াল ট্রাইঅন

বাংলাদেশের ফ্যাশন ব্র্যান্ড তাদের গ্রাহকদের জন্য অজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল ট্রাইঅন সিস্টেম তৈরি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবহারকারীরা তাদের স্মার্টফোনে পোশাক বা গয়না বা স্নিকার্স ভার্চুয়ালি ট্রাই করতে পারবে এবং নিজেদের শারীরিক আকার অনুযায়ী দেখতে পারবে, কেমন লাগছে।

এটি গ্রাহকদের জন্য একটি বাস্তবিক অভিজ্ঞতা তৈরি করবে এবং তাদের জন্য পোশাক বা আনুষঙ্গিক পণ্যের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ করে তুলবে। এই ধরনের শ্যালো ট্যুরিজম, যেখানে গ্রাহকরা বিভিন্ন পণ্য একসাথে দেখে নিতে পারে, তাদের শপিং অভিজ্ঞতাকে আরও সহজ এবং আনন্দদায়ক করবে।

অর্থনৈতিক পণ্য ব্র্যান্ডের জন্য ভার্চুয়াল ডেমো

বাংলাদেশের ইলেকট্রনিকস এবং প্রযুক্তি ব্র্যান্ডগুলি তাদের পণ্যগুলির জন্য ভার্চুয়াল ডেমো সেশন তৈরি করতে পারে। এই সেশনগুলির মাধ্যমে গ্রাহকরা ভার্চুয়ালি পণ্যটি ব্যবহার করে দেখতে পাবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি মোবাইল ফোন বা টেলিভিশনের বিশেষ ফিচারগুলো ব্যবহার করে দেখানো যেতে পারে।

গ্রাহকরা ভার্চুয়ালি পণ্যটি পরীক্ষা করতে পারবে, যা তাদের ক্রয় সিদ্ধান্তে সহায়ক হবে। এই ধরনের শ্যালো ট্যুরিজমের মাধ্যমে গ্রাহকরা সরাসরি পণ্য হাতে না নিয়েও পণ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেতে পারে।

এটা স্পষ্ট যে, জেন জেড গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রযুক্তি একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডগুলো যদি এই প্রযুক্তিগুলি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, তারা তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে এক নতুন ইন্টারেক্টিভ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে। আরেকদিকে, প্রযুক্তির সাহায্যে ব্র্যান্ডগুলি তাদের বাজারে আরও শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় হতে সক্ষম হবে। তবে, এখনও এই দুটি প্রযুক্তি পুরোপুরি আমাদের স্থানীয় বাজারের জন্য উপযুক্তভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। এই প্রযুক্তিগুলি ব্র্যান্ডগুলোর জন্য প্রচুর সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু আরও গবেষণা, উন্নয়ন এবং স্থানীয় উপযোগীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের আরও কাজ করতে হবে যাতে এই টুলগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় এবং এটি বাংলাদেশের স্থানীয় গ্রাহকদের জন্য যথাযথভাবে মানানসই করা যায়। এই প্রযুক্তিগুলি কেবলমাত্র বিদেশি ব্র্যান্ডের জন্য নয়, বাংলাদেশের স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর জন্যও এক নতুন সুযোগ নিয়ে এসেছে। যারা নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করবে, তারা গ্রাহকদের সঙ্গে আরও গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে এবং বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।

যে প্রতিষ্ঠান প্রথম এই প্রযুক্তিগুলোর ব্যবহার শুরু করবে, তারা হবে পথপ্রদর্শক এবং গ্রাহকদের, বিশেষ করে Gen Z এর হৃদয় জয়ের জন্য অনেক এগিয়ে থাকবে। তারা এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভোক্তাদের সঙ্গে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে এবং বাজারে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে সক্ষম হবে।

যেহেতু এবহ ত হলো প্রযুক্তিবিষয়ক অত্যন্ত দক্ষ এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের প্রতি গভীর আগ্রহী প্রজন্ম, তারা সহজেই নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। তাই, এই প্রজন্মের হৃদয় জয়ের জন্য অগমেন্টেড রিয়ালিটি এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারে। জেন জি তাদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা, অনলাইন শপিং অভ্যাস এবং নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের মানসিকতা দিয়ে ব্র্যান্ডের সঙ্গে আরও ইন্টারেক্টিভ এবং ইনোভেটিভ অভিজ্ঞতা প্রত্যাশা করে। যেকোনো ব্র্যান্ড যদি তাদের এই চাহিদার প্রতি নজর দিয়ে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার শুরু করে, তারা সহজেই জেন জি এর সমর্থন এবং আস্থা লাভ করতে পারবে।

লেখক: সিনিয়র ম্যানেজার, স্ট্র্যাটেজিক সেলস,

এলিট পেইন্ট এন্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রীজ লিঃ

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাল্যবিবাহ একটা বিষফোঁড়া
পরবর্তী নিবন্ধবিদেশি ফল আমদানি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ সংকট