অখণ্ড স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা আবুল হাশিম

| সোমবার , ৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

আবুল হাশিম। ভারত উপমহাদেশের একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ ও ইসলামি চিন্তাবিদ। তিনি বাংলাদেশের বামপন্থি বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের পিতা। দীর্ঘকাল মুসলিম লীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকে দলটিকে প্রগতিশীল, জনকল্যাণমুখী ও গণতান্ত্রিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সদা সচেষ্ট থেকেছেন।
আবুল হাশিম ১৯০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের কাশিয়াড়ায় জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবুল কাশেম। ১৯২৩ সালের বর্ধমান মিউনিসিপাল স্কুল থেকে আবুল হাশিম ম্যাট্রিকুলেশন, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯২৫ সালে আইএ এবং ১৯২৮ সালের বিএ পাস করেন।
১৯৩১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে বিএল উপাধি লাভ করে বর্ধমান আদালতে আইন ব্যবসায় শুরু করেন। আইনজীবী হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল। ব্যক্তিজীবনে ছিলেন জনদরদী এবং সাম্যবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পৃক্ত থেকেছেন। এই জনপ্রিয়তার কারণে ১৯৩৬ সালে বঙ্গীয় বিধান সভার নির্বাচনে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে সদস্যপদ লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে যোগ দেন মুসলিম লীগে। দলটির সাংগঠনিক ভিত্তি সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে সারা দেশ পরিভ্রমণ করে এর আদর্শ প্রচারে ব্রতী হন এবং অল্প সময়ের তাঁর নেতৃত্বে তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ নিয়ে দলের মধ্যে একটি শক্তিশালী বামপন্থী গ্রুপের সৃষ্টি করেন। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর প্রস্তাবে পাকিস্তানকে একটি অখণ্ড রাষ্ট্র হিসেবে দাবি না করে ভারতের উত্তর পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়েছিল। সেই হিসেবে বাংলায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবার কথা। কিন্তু ১৯৪৬-এর নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৪৬ এর ৯ এপ্রিল দিকে দিল্লিতে আহূত মুসলিম লীগের নবনির্বাচিত বিধায়কদের সভায় মুহম্মদ আলী জিন্নাহ্‌র পরামর্শে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেন।
জিন্নাহর এই প্রস্তাব উত্থাপনের পর বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম খুব দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করেন। দেশ বিভাগের পর আবুল হাশিম ঢাকায় স্থায়ী হন। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে অংশ নেয়ায় তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা সহ প্রগতিশীল বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের সাথে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। সুবক্তা ও ইসলামি চিন্তাবিদ হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি ছিল। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘দ্য ক্রিড অব ইসলাম’, ‘অ্যাজ আই সি ইট’, ‘ইন্টিগ্রেশন অব পাকিস্তান’, ‘ইন রেট্রোসপেকশন’, ‘রব্বানী দৃষ্টিতে’ ইত্যাদি। ১৯৭৪ সালের ৪ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্বপশু সরক্ষণ দিবস
পরবর্তী নিবন্ধজলাবদ্ধতা মুক্ত নগরী সবার কাম্য